কল-কারখানায় ব্যবহৃত চামড়ার গ্লাভস, জুতোর চাহিদা বাড়তে শুরু করায় কিছুটা স্বস্তিতে সংস্থাগুলি।
দামি ব্যাগ, ওয়ালেটের মতো চর্মপণ্যের রফতানি বাজার বরাবর চামড়া শিল্পের বড় ভরসা। কিন্তু করোনায় তা বিপর্যস্ত। দেশেও বিক্রিবাটা তলানিতে। এই অবস্থায় আচমকাই শিল্পে ব্যবহৃত চামড়ার গ্লাভস, জুতো ইত্যাদির চাহিদা বাড়ায় আশার রুপোলি রেখা দেখছে বিক্রেতা ও উৎপাদক সংস্থাগুলি। এ রাজ্যে বানতলার চর্মশিল্প তালুকের (সিএলসি) কর্তাদের দাবি, সংক্রমণ এড়াতে ওই সব পণ্যের ব্যবহার বাড়ছে। বিশেষত বিদেশের কল-কারখানায়। আর সেটাই শাপে বর হয়েছে। যে কারণে এখন শিল্পের চর্মপণ্য তৈরিতেই জোর দিচ্ছেন তাঁরা। লোকসানের কিছুটা পুষিয়ে নিতে বিদ্যুৎ, জলের মতো উৎপাদনের স্থায়ী খরচগুলি কমিয়ে আনার ছকও কষা হচ্ছে। যাতে ব্যবসার পুঁজি বাঁচিয়ে টিকে থাকার রসদ মজুত করা যায়।
সিএলসি ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ইমরান খান জানান, ব্যাগ, ওয়ালেটের মতো দামি পণ্য রফতানির বাজার ছিল প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকার। ৮-১০ হাজার কোটির পণ্য বিক্রি হত দেশে। দু’টিতেই থাবা বসিয়েছে করোনা। ফলে বানতলা ও কসবা শিল্প তালুকের প্রায় ২৫০টি চর্মপণ্য তৈরির সংস্থা ও ৪০০টি ট্যানারির ব্যবসায় মন্দার ছায়া।
এই অবস্থায় কল-কারখানায় ব্যবহৃত চামড়ার গ্লাভস, জুতোর চাহিদা বাড়তে শুরু করায় কিছুটা স্বস্তিতে সংস্থাগুলি। কারণ, সংক্রমণ রুখতে এগুলির বাড়তি বরাত দিচ্ছে শিল্প। ইমরান জানান, এগুলির বাজার প্রধানত আমেরিকা, জার্মানি, চিলির মতো দেশ। রাজ্যে বানতলা ও কসবার পাশাপাশি তপসিয়াতেও তৈরি হচ্ছে সে সব। তবে তাঁদের আক্ষেপ, পরিযায়ী শ্রমিকেরা ফিরে যাওয়ায় দক্ষ কর্মীর টান পড়েছে। চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদনের পথে যা বড় বাধা। সুযোগের সদ্ব্যবহার করা নিয়ে দুশ্চিন্তা দানা বাঁধছে কিছু ক্ষেত্রে।
বেহাল
দামি ব্যাগ বা ওয়ালেটের মতো চর্মপণ্যের চাহিদা তলানিতে।
এই অর্থবর্ষে সেগুলির রফতানি কমেছে
প্রায় ৪০%।
ধাক্কা খেয়েছে ট্যানারিও।
পরিযায়ীরা ঘরে ফেরায় দক্ষ শ্রমিকের অভাব।
আশার আলো
শিল্পে ব্যবহৃত চামড়ার গ্লাভস, অ্যাপ্রন, জুতোর মতো সুরক্ষা পণ্যের চাহিদা বাড়ছে।
লভ্যাংশ কম হলেও, এ ক্ষেত্রে বরাত বেড়েছে।
শিল্পের পদক্ষেপ
শিল্পে ব্যবহৃত পণ্য তৈরিতে জোর।
কম দামি ব্যাগ, ওয়ালেট তৈরি।
বিদ্যুৎ, জলের মতো স্থায়ী খরচ ছাঁটাই।
বাজারের চাহিদা মেনে কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধি।
করোনা কালে আর্থিক পরিস্থিতি বেহাল হওয়ায় বহু মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমেছে। চর্মশিল্পের দাবি, তাই কম দামি ব্যাগ, ওয়ালেটের মতো পণ্য তৈরির পথেও হাঁটছে তারা। যাতে তা বিক্রি করে আয় বাড়ানো যায়।
এর পাশাপাশি, বিদ্যুতের খরচ কমাতে চামড়ার বর্জ্য থেকে বায়ো-গ্যাস নির্ভর বিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ার লক্ষ্য নিয়েছে বানতলা। ইমরানের দাবি, উপদেষ্টা সংস্থা সলিডারাডের সঙ্গে সেখানে ‘সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট’ প্রকল্প গড়ার জন্য দীঘার শিল্প সম্মেলনেই মউ সই করেছিলেন তাঁরা। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সম্প্রতি ওই প্রকল্পের জন্য অনুদানে ছাড়পত্র দিয়েছে। বানতলায় নির্দিষ্ট ৫০ একর জমির কিছুটায় বিদ্যুৎ প্রকল্প গড়তে রাজ্যের কাছে আর্জি জানানো হয়েছে। খরচ বাঁচানোর চেষ্টা চলছে জলেও। চর্মপণ্য তৈরিতে জল লাগে প্রচুর। আপাতত ভূগর্ভস্থ জলই বানতলার ভরসা। কী ভাবে ব্যবহৃত জল বা স্থানীয় খালের জল পুনর্ব্যবহার করে সেই খরচ কমানো যায়, তা নিয়ে কেএমডিএ-র সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে বানতলা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy