Advertisement
২০ জানুয়ারি ২০২৫
সারাতে শর্ত মনোযোগ
Coronavirus

ঝিমিয়ে থাকা অর্থনীতির ঘাড়ে করোনার কামড়

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পাবলিক ফিনান্স অ্যান্ড পলিসির অধ্যাপক লেখা চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘একেই চাহিদায় ভাটার দরুন লগ্নির আগ্রহ উধাও।

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

ইন্দ্রজিৎ অধিকারী
শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২০ ০৫:৩৪
Share: Save:

বৃদ্ধি তলানিতে। বেকারত্ব চড়া। টেলি শিল্প টালমাটাল। সঙ্কটের মেঘ ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রের আকাশে। দেশের অর্থনীতির এমন ঘোর সমস্যার দিনে কেন্দ্রের দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে করোনার কামড়ও। কারণ, তা ভারত-সহ সারা বিশ্বের অর্থনীতিকেই ক্ষতবিক্ষত করতে পারে বলে আশঙ্কা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের। অর্থনীতিকে ছন্দে ফেরাতে যে সব দাওয়াই জরুরি, তাতেও হাত-পা অনেকটা বাঁধা। বিশেষজ্ঞদের ভয়, এই অবস্থায় কেন্দ্র রাজনৈতিক টানাপড়েন পাশে সরিয়ে অর্থনীতিকে পাখির চোখ না-করলে, তা তলিয়ে যেতে পারে।

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পাবলিক ফিনান্স অ্যান্ড পলিসির অধ্যাপক লেখা চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘একেই চাহিদায় ভাটার দরুন লগ্নির আগ্রহ উধাও। সিএএ, এনআরসি-র মতো বিষয়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত থাকলে, তা আরও বিমুখ করবে লগ্নিকারীকে।’’ রাজনৈতিক ডামাডোলের মধ্যে টাকা ঢালতে কবেই বা নিশ্চিন্ত বোধ করেন লগ্নিকারী?

পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট, অর্থনীতি এখন চক্রব্যূহে অভিমন্যুর মতো। চাহিদায় ভাটা। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ১৩৫ বেসিস পয়েন্ট সুদ কমালেও লাভ হয়নি। ফের সুদ ছাঁটার পথ আটকেছে মাথা তোলা মূল্যবৃদ্ধি। রাজকোষ ঘাটতি লক্ষ্য (৩.৮%) ছাড়ানোয় কেন্দ্রও দেদার খরচে নামতে পারছে না। তার উপরে কঠিন কর আদায়ের লক্ষ্য ছোঁয়া। ব্যাঙ্কিং শিল্পে সমস্যা সামলাতে নাজেহাল কেন্দ্র (হাতেগরম নমুনা ইয়েস ব্যাঙ্ক)। অনাদায়ি ঋণ তো কমেইনি, বরং আরও চেপে বসার আশঙ্কা বহু কর্পোরেট সংস্থা ঋণের পাহাড়ে বসে থাকায়। এই অবস্থায় করোনার থাবায় পরিস্থিতি সঙ্গিন।

দিল্লি স্কুল অব ইকনমিক্সের অর্থনীতির অধ্যাপক দিব্যেন্দু মাইতির মতে, ‘‘অর্থনীতির এই হাঁসফাঁস দশায় আগে অসংগঠিত ক্ষেত্রকে হাঁফ ছাড়তে দেওয়া জরুরি।’’ যুক্তি, সব আর্থিক লেনদেনকে ব্যাঙ্কিং পরিষেবার চৌহদ্দিতে আনতে হয়তো নোটবন্দির পথে হেঁটেছে কেন্দ্র। সব কেনাবেচাকে কর-বৃত্তে ঢোকাতে তড়িঘড়ি এনেছে জিএসটি। কিন্তু এতে অসংগঠিত ক্ষেত্র

বিধ্বস্ত। দিব্যেন্দুর মতে, ‘‘ক’দিন অন্তত এই ক্ষেত্রকে নিরুপদ্রবে ব্যবসা করতে দিক কেন্দ্র। আগে এই কঠিন সময়ে তারা টিকে থাকুক। পরে সংগঠিত ক্ষেত্রের ধাঁচের সঙ্গে জোড়া যাবে।’’ বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রথমে মানুষের হাতে টাকা জুগিয়ে চাহিদায় গতি ফেরানো জরুরি। প্রয়োজন কাজ তৈরি। এ জন্য পরিকাঠামোর মতো ক্ষেত্রে চাই বিপুল সরকারি পুঁজি, ঘাটতির রাশ শিথিল করেও।

লেখা বলেন, ‘‘বিপুল কর্পোরেট কর ছেঁটেছে কেন্দ্র। কিন্তু চাহিদা না- বাড়লে, ওই টাকায় সংস্থার মুনাফা বাড়বে, লগ্নি নয়।’’ অর্থনীতিবিদের দাবি, বরং জরুরি গ্রামীণ কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা প্রকল্পে বেশি বরাদ্দ, শহরেও তেমন প্রকল্প চালু বা পরিকাঠামোয় রাজ্যগুলিকে বেশি টাকা জোগানো।

দিব্যেন্দু বলছেন, ‘‘বাণিজ্যে চিনের সামান্য নড়বড়ে অবস্থার ফায়দা তোলা উচিত দিল্লির। নির্দিষ্ট পণ্য বেছে দরকার তার ‘গ্লোবাল ভ্যালু চেনে’ শামিল হওয়ার চেষ্টা করা।’’ অর্থাৎ, সেগুলির পুরো উৎপাদন প্রক্রিয়ার অন্তত একটি অংশে নিজেদের আধিপত্য তৈরি।

অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে আগে গ্রামে নজর দিতে বলছেন বিশেষজ্ঞেরা। দিব্যেন্দুর যুক্তি, চাষিদের ফসলের ঠিক দাম পাওয়া নিশ্চিত হবে হিমঘর ও কৃষিপণ্যের বিপণন-পরিকল্পনা তৈরি হলে। তাঁদের দাবি, এ সবে কেন্দ্র কান পাতলে, করোনা-আতঙ্কেও মন্দার রাক্ষুসে হাঁ চট করে গিলে খেতে পারবে না অর্থনীতিকে।

করোনা-গ্রাস

• বিশ্ব অর্থনীতির বৃদ্ধির পূর্বাভাস ০.১% ছাঁটল এডিবি। এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলিতে তা কমতে পারে ০.২%-০.৫%। চিনে ১.৭% পর্যন্ত।
• মার্কিন অর্থনীতিতেও ধাক্কার কথা মেনেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
• ইউরোপে মন্দার আশঙ্কা বেড়ে দ্বিগুণ।
• রফতানি থেকে পর্যটন, ধাক্কা বিভিন্ন শিল্পে। টালমাটাল ভারত-সহ সারা বিশ্বের শেয়ার বাজার।
• রাষ্ট্রপুঞ্জের হিসেব, শুধু ফেব্রুয়ারিতেই বিশ্বে মার খেতে পারে ৫,০০০ কোটি ডলারের পণ্য-বাণিজ্য। ভারতে তা ৩৪.৮০ কোটি।
• এসঅ্যান্ডপি-র আশঙ্কা, এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলি এ বছরে ২১,১০০ কোটি ডলারের ক্ষতি দেখবে।

কোণঠাসা ভারত

• করোনা-ত্রাস ছোঁয়ার আগে অক্টোবর-ডিসেম্বরে ৪.৭ শতাংশে নেমেছে বৃদ্ধি।
• বেকারত্ব সাড়ে চার
দশকে সর্বোচ্চ।
• ডিসেম্বরেও সরাসরি ০.৩% কমেছে শিল্পোৎপাদন।
• চড়ছে খুচরো মূল্যবৃদ্ধি। জানুয়ারিতে ৭.৫৯%।
• বাজারে চাহিদা নেই।
• প্রায় ১.৪৫ লক্ষ কোটি টাকার কর্পোরেট কর কমলেও হাত গুটিয়ে লগ্নিকারীরা। চাহিদায় ঝিমুনি ও রাজনৈতিক ডামাডোলে আস্থায় টান।
• রাজস্ব আদায়ে ভাটা। লক্ষ্য ছাড়িয়েছে রাজকোষ ঘাটতি। অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে হাত খুলে খরচ করা শক্ত সরকারের পক্ষেও।
• সমস্যায় জর্জরিত ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্র। কাঁপুনি ব্যাঙ্ক নয় এমন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে। টেলিকম-সহ বহু সংস্থা ঋণের বোঝায় জেরবার। সময়ে দেনা না-মেটালে অনাদায়ি ঋণে নাভিশ্বাস উঠবে ব্যাঙ্কগুলির।
• এ বার কামড় করোনার।

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Indian Economy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy