এক বার, দু’বার, তিন বার...
কথা বলার সময় ইদানিং প্রায়ই বারবার লাইন কেটে যাচ্ছে মোবাইলে। কখনও অবস্থা আরও সঙ্গিন। হাজার মাথা খুঁড়েও লাইন মিলছে না জরুরি কল সেরে নেওয়ার জন্য। পরিষেবার এই জোড়া সমস্যায় তিতিবিরক্ত অনেক গ্রাহক। বিরক্তির পারদ এতটাই চড়েছে যে, বাধ্য হয়ে অনেকে ফের শরণ নিচ্ছেন ল্যান্ডলাইনের। গত দু’দশকে মোবাইলের প্রবল দাপট যার পায়ের নীচ থেকে মাটি কেড়ে নিয়েছে অনেকখানি।
অপর্যাপ্ত পরিকাঠামো যে সমস্যার শিকড়, তা কার্যত মেনে নিচ্ছে মোবাইল পরিষেবা সংস্থাগুলি। সে জন্য সরকারি নীতি এবং টাওয়ার বসানো নিয়ে আমজনতার ছুঁৎমার্গকে দুষছে তারা। ওয়াকিবহাল মহল অবশ্য মনে করে, নানা কারণে পরিকাঠামোয় যথেষ্ট টাকা ঢালতে এগিয়ে আসেনি সংস্থাগুলিও।
কথার মাঝখানে বারবার সংযোগ ছিন্ন হওয়ার এই সমস্যার নাম ‘কল ড্রপ’। গ্রাহকরা বলছেন, হালফিলে এই সমস্যায় তাঁদের প্রাণ ওষ্ঠাগত। প্রথমত জরুরি কথার মাঝে বারবার ছেদ পড়া চূড়ান্ত বিরক্তিকর। তার উপর ওই ভাবে কল কাটতে থাকায় বাড়তি মাসুলও গুনতে হচ্ছে তাঁদের। আর লাইন না-পেলে তো কথাই নেই। প্রয়োজনীয় কথাটুকু চট করে বলে নেওয়াও সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে সেখানে।
গ্রাহকদের অভিযোগ, ‘কল ড্রপ’ হলে, একই কথা বলতে গিয়ে বারবার ফোন করতে হচ্ছে তাঁদের। এতে খরচ বাড়ছে। কিন্তু টেলি পরিষেবা সংস্থাগুলির সংগঠন সিওএআই-এর দাবি, মাসুল হারে ছাড়ের সুযোগ নিতে আজকাল প্রায় সব গ্রাহকই বিশেষ ‘ভাউচার’ ব্যবহার করেন। তাতে মাসুল হিসেব হয় প্রতি সেকেন্ডে। তাই কথা বলতে যতবারই ফোন করা হোক, খরচ একই হওয়ার কথা। টানা ৬০ সেকেন্ডেও যা, ২০ সেকেন্ড করে তিন বারেও তা-ই। কিন্তু গ্রাহকদের পাল্টা অভিযোগ, তেমনটা ঘটে না। অসমাপ্ত কথা বাক্যের মাঝ থেকেই ফের শুরু করা যায় কি? শেষমেশ তা ৬০ সেকেন্ড ছাড়িয়েই যায়।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, এ দেশে মোবাইল সংযোগের সংখ্যা যে গতিতে বেড়েছে, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়েনি পরিকাঠামো। তা সে স্পেকট্রামের পরিমাণ হোক বা টাওয়ারের সংখ্যা।
পরিকাঠামোর এই অভাবের কথা কার্যত মেনে নিচ্ছে টেলিকম শিল্প। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিএসএনএল জানাচ্ছে, নতুন পরিকাঠামো গড়তে অর্থ বরাদ্দের সবুজ সঙ্কেত পেতেই কয়েক বছর লেগেছে। বেসরকারি সংস্থাগুলির আবার দাবি, কেন্দ্রের কড়া নিয়মকানুন আর মোবাইল টাওয়ারের বিকিরণ নিয়ে আমজনতার আশঙ্কা— এই দুই কারণে ধাক্কা খাচ্ছে পরিকাঠামো তৈরি। তবে এ নিয়ে আলাদা ভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে রাজি নয় ভোডাফোন, এয়ারটেলের মতো সংস্থা। তাদের দাবি, এ বিষয়ে বক্তব্য জানাবে সিওএআই।
ওই সংগঠনের শীর্ষ কর্তা রাজন এস ম্যাথুজের দাবি, ভাল মোবাইল পরিষেবা দেওয়ার প্রথম শর্ত পর্যাপ্ত স্পেকট্রাম। কিন্তু ভারতে চাহিদার তুলনায় তার জোগান অনেকটাই কম। অন্য অনেক দেশে সংস্থাগুলির হাতে হাতে যেখানে ৪৯ থেকে ১০০ মেগাহার্ৎজ স্পেকট্রাম থাকে, সেখানে এ দেশে আছে ১৫-১৮ মেগাহার্ৎজ।
পরিষেবার মান নিয়ে অভিযোগ ওঠার পিছনে আছে আরও কয়েকটি কারণ। যেমন—
• কোনও ফোন-কল হয়তো শুরু হল থ্রিজি টাওয়ারের এলাকায়। কিন্তু কথা বলতে বলতে গ্রাহক চলে এলেন টুজি টাওয়ারের চত্ত্বরে। সে ক্ষেত্রে প্রযুক্তি বদলের দরুন পরিষেবায় সমস্যা হতে পারে। তা ছাড়া, সব হ্যান্ডসেটে ওই ধরনের বদল মানিয়ে নেওয়ার সুবিধা থাকে না। সে ক্ষেত্রেও কল কেটে যাওয়ার সম্ভাবনা। উল্লেখ্য, স্মার্ট ফোনের দৌলতে বর্তমানে থ্রিজি হ্যান্ডসেটের বাড়বাড়ন্ত হলেও, টুজি টাওয়ারের সংখ্যা এখনও বেশি।
• নির্দিষ্ট সময় অন্তর পরিকাঠামোয় নজরদারি জরুরি। না-হলে, তার অভাবে নানা অবাঞ্ছিত কারণে পরিষেবায় বিঘ্ন ঘটতে পারে। যা কিছুটা প্রযুক্তির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
• মোবাইলে নেট ব্যবহার বাড়ছে লাফিয়ে-লাফিয়ে। ওই পরিষেবা দেওয়াও সংস্থাগুলির কাছে বেশি লাভজনক। অনেকের মতে, সেই কারণে হাতে থাকা স্পেকট্রামের বেশি চ্যানেল নেট পরিষেবা দিতে কাজে লাগাচ্ছে সংস্থাগুলি। সমস্যা হচ্ছে কথা বলায়। যদিও সিওএআইএ-র দাবি, ঘটনা তা নয়।
• সংগঠনটির দাবি, দু’বছরে নিরাপত্তার যুক্তিতে নেটওয়ার্ক বা পরিকাঠামো নির্মাণের যন্ত্র আমদানির নিয়ম কঠোর হয়েছে। অনেক জায়গায় আবার স্পেকট্রামের লাইসেন্সের মেয়াদ ফুরনোয় সেগুলি ফের নিলামে তুলেছে কেন্দ্র। তাই পুনরায় তা নিলামে না-জেতা পর্যন্ত নতুন করে টাকা ঢালতে রাজি হয়নি সংস্থাগুলি। অনেকের অবশ্য দাবি, স্পেকট্রাম কেনার জন্য মোটা টাকা রাখতে গিয়েই পরিকাঠামোয় টাকা ঢালতে পারেনি সংস্থাগুলি।
• অনেকেরই আশঙ্কা, বাড়ির ছাদে টাওয়ার বসালে, তা থেকে হওয়া বিকিরণে শরীরের ক্ষতি। তাই এ নিয়ে আপত্তি জানান তাঁরা।
তবে গ্রাহকদের প্রশ্ন, বাধা টপকে পরিকাঠামো গড়ার পুরোদস্তুর চেষ্টা সংস্থাগুলি আদৌ করেছে কি?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy