অর্থনীতি নিয়ে যে দিন আশার বার্তা শোনাল কেন্দ্র, সে দিনই দেশের মধ্যবিত্ত এবং গরিবদের আর্থিক অবস্থা নিয়ে মোদী সরকারকে তোপ দাগল বিরোধী কংগ্রেস। বুধবার ফেব্রুয়ারির মাসিক রিপোর্টে অর্থ মন্ত্রকের দাবি, আন্তর্জাতিক নানা বাধাবিপত্তি সত্ত্বেও, চলতি অর্থবর্ষে (২০২৪-২৫) ৬.৫% হারে বাড়বে ভারতের জিডিপি। মূলত চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়া, জ্বালানি ও সোনা বাদে অন্যান্য পণ্যের কেনাকাটা মাথা তোলা এবং পরিষেবা রফতানি বৃদ্ধিই এই লক্ষ্যে পৌঁছতে সাহায্য করবে। যদিও কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট মল্লিকার্জুন খড়্গের দাবি, মোদী সরকারের জমানায় দেশের সাধারণ মানুষের সঙ্গে যে ‘প্রতারণা’ হয়েছে, তা গত ৭৮ বছরে দেখা যায়নি।
অর্থ মন্ত্রকের রিপোর্ট বলছে, খাদ্যপণ্যের দাম কমে আসায় গত মাসে খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার নেমেছে সাত মাসে সবচেয়ে নীচে (৩.৬%)। এপ্রিল-জনুয়ারিতে প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি বেড়েছে ১২.৪%। বিদেশি মুদ্রা ভান্ডার ১১ মাসের আমদানি খরচ মেটাতে তৈরি। বহু সংস্থা আগামী ত্রৈমাসিকে কর্মী নিয়োগে আগ্রহী। আর্থিক কর্মকাণ্ডে গতি আসার ইঙ্গিত দিচ্ছে পিএমআই সমীক্ষা এবং ই-ওয়ে বিল উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাওয়া।
তার উপরে বাজেট প্রস্তাব অনুযায়ী ব্যয় করা, ঘাটতিকে লক্ষ্যমাত্রায় বেঁধে রাখা এবং অর্থনীতির বিভিন্ন মাপকাঠি অনুকূলে থাকার কথাও তুলে ধরেছে তারা। জানিয়েছে, অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো বিভিন্ন সিদ্ধান্ত, ঋণনীতিতে সুদ কমানো ও দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের জন্য বাজেটের নানা প্রস্তাব ও সংস্কারের হাত ধরে এগোবে ভারত। সে জন্য বেসরকারি ক্ষেত্রকেও লগ্নিকে এগিয়ে আসার বার্তা দিয়েছে মন্ত্রক।
যদিও এক্স-এ খড়্গের দাবি, ‘‘আর্থিক বৈষম্য ভয়ঙ্কর জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে। অতিধনীরা ধনকুবেরে পরিণত হয়েছেন ও গরিবরা হয়েছেন ভিখারি। মধ্যবিত্তের আয় দাঁড়িয়েছে ১৮২০ সালে ব্রিটিশ রাজত্ব শুরুর আগের সমান।’’ তাঁর তোপ, ‘‘গত ৭৮ বছরে কোনও সরকারের আমলে সাধারণ মানুষের এত খারাপ অবস্থা হয়নি, যা মোদী সরকারের জমানায় হয়েছে।’’ আন্তর্জাতিক শ্রম সংগঠনের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেছেন, ২০০৬ সালে যেখানে দেশে মজুরি বৃদ্ধির হার ছিল ৯.৩%, তা ২০২৩ সালে নেমেছে মাত্র ০.১ শতাংশে। ঘণ্টায় গড়ে দেশে এক জন কর্মী যা আয় করেন, তা বিশ্বে নীচের দিক থেকে পঞ্চম। ডিগ্রিধারী বা পেশাদার কর্মীদের ক্ষেত্রেও ভারত রয়েছে তলার দিক থেকে সপ্তম স্থানে।
কংগ্রেস নেতার বক্তব্য, ‘‘করের বোঝা, মূল্যবৃদ্ধি ও নীতি তৈরির ব্যর্থতা মধ্যবিত্ত, গরিব ও অবহেলিতদের পিছনে ঠেলছে। কিন্তু মোদী সরকার ‘সবকা সাথ সবকা বিকাশের’ বার্তা দিচ্ছে।’’ এ প্রসঙ্গে জাতীয় আয়ে গরিবদের অংশীদারি ১৮২০ সালের ১০.৮% থেকে ২০২৩-এ ৬.৪% হওয়া ও মধ্যবিত্তদের ক্ষেত্রে তা ১৫% থেকে ১৪.৯ শতাংশে নামার তথ্য তুলে ধরেছেন তিনি। যা আরও দেখাচ্ছে ওই সময়ে আয়ে ধনকুবেরদের অংশীদারি ৭৩.২% থেকে বেড়ে হয়েছে ৭৭.৮%।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)