প্রতীকী চিত্র।
সুপ্রিম কোর্টের তিরস্কারের পরে তড়িঘড়ি নির্দেশিকা জারি করে বকেয়া মেটানোর জন্য টেলিকম সংস্থাগুলিকে শুক্রবার রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত সময় দিয়েছিল কেন্দ্রের টেলিকম মন্ত্রক। সেই সময়সীমা পেরিয়ে গিয়েছে। কেন্দ্রের ভাঁড়ারে একটা টাকাও আসেনি। এ জন্য টেলিকম সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, বা আদৌ কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, সে ব্যাপারে সরকারি ভাবে মুখে কুলুপ টেলিকম দফতরের। সংশ্লিষ্ট মহলের অনেকেরই মতে, টেলিকম শিল্পে ঝড় উঠলেও সরকারের অবস্থান স্থিরই করে উঠতে পারেনি রবিশঙ্কর প্রসাদের মন্ত্রক।
গত ২৪ অক্টোবর শীর্ষ আদালত তার রায়ে টেলিকম সংস্থাগুলিকে স্পেকট্রাম ব্যবহারের চার্জ ও লাইসেন্স ফি বাবদ কেন্দ্রের পাওনা তিন মাসের মধ্যে মিটিয়ে দিতে বলেছিল। এই মুহূর্তে মোট ১ লক্ষ ৪৭ হাজার কোটি টাকা বকেয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি দায় দুই টেলিকম সংস্থা ভোডাফোন-আইডিয়া এবং এয়ারটেলের। তারা টাকা মেটায়নি। এই অবস্থায় গত ২৩ জানুয়ারি টেলিকম মন্ত্রক এক নির্দেশিকা জারি করে বলে, টেলিকম সংস্থাগুলি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অমান্য করলেও তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না। এই নির্দেশের জন্য শুক্রবার কেন্দ্রকে তীব্র ভর্ৎসনা করে সুপ্রিম কোর্ট। তারা নির্দেশ দেয়, ১৭ মার্চের আগে বকেয়া না-মেটালে আদালত অবমাননার দায়ে পড়বেন দুই সংস্থার কর্ণধারেরা।
সুপ্রিম কোর্ট ১৭ মার্চ পর্যন্ত সময় দিলেও টেলিকম মন্ত্রক কেন টেলিকম সংস্থাগুলিকে মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বকেয়া মেটাতে বলল, তা নিয়ে শুক্রবার সন্ধ্যাতেই প্রশ্ন উঠেছিল। ভোডাফোন-আইডিয়া বলেই রেখেছে যে, তাদের পক্ষে প্রায় ৫৩ হাজার কোটি টাকা মেটানো সম্ভব নয়। ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হবে। এয়ারটেল অবশ্য বকেয়া টাকার সংস্থান করে রেখেছে। কিন্তু দিনের শেষে টাকা মেটায়নি কেউই। ফলে আজ প্রশ্ন উঠেছে, কেন্দ্র এ বার কী করবে?
সরকারি ভাবে কিছু বলা না-হলেও টেলিকম দফতরের একটি সূত্র বলছে, সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করা হবে। না-হলে আরও জরিমানা ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে টেলিকম শিল্প তো বটেই, ব্যাঙ্কিং শিল্পের উপরে কী প্রভাব পড়বে সে প্রশ্নও উঠছে। কারণ, একাধিক ব্যাঙ্কের কাছে টেলিকম সংস্থাগুলির দেনার পরিমাণ বিপুল। স্টেট ব্যাঙ্ক উদ্বেগ জানিয়ে বলেছে, টেলিকম শিল্পে তারা প্রায় ২৯ হাজার কোটি টাকা ঢেলেছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর শক্তিকান্ত দাসও জানিয়েছেন, ব্যাঙ্কের উপর কী প্রভাব পড়বে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শিল্পমহল বলছে, ব্রিটিশ টেলিকম সংস্থা ভোডাফোনকে যদি এ দেশে ঝাঁপ ফেলতে হয়, তা হলে গোটা বিশ্বের লগ্নিকারীদের কাছেই ভুল বার্তা যাবে।
একই সঙ্গে নিজেদের করুণ আর্থিক অবস্থার কথাও মনে করিয়ে দিয়েছে তারা।
এ দিকে, ‘দেশে কি আইন বলে কিছু নেই! এ দেশে থাকার চেয়ে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া ভাল,’— গত কাল সুপ্রিম কোর্ট এমন ভাষায় কেন্দ্রের সমালোচনা করার পরে আজ কংগ্রেস অভিযোগ করেছে, বেসরকারি টেলিকম সংস্থাগুলির থেকে বকেয়া আদায় পিছিয়ে দিয়ে মোদী সরকার আসলে ওই সংস্থাগুলিকে সুবিধা করে দিতে চেয়েছিল। কিসের
বিনিময়ে এই সুবিধা দেওয়া হয়েছিল, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা। তিনি বলেন, প্রথমে মোদী সরকারের মন্ত্রিসভা ২০ নভেম্বর স্পেকট্রামের জন্য ৪২ হাজার কোটি টাকা আদায় স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। এর পর ২৩ জানুয়ারি বাকি ১.০২ লক্ষ কোটি টাকা আদায়েও জোর না করার সিদ্ধান্ত নেয়।
টেলিকম দফতর সূত্রের অবশ্য দাবি, টেলিকম সংস্থাগুলিকে কোনও দিনই বাড়তি সময় দেওয়া হয়নি। ৩১ অক্টোবর থেকে শুক্রবার ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পাঁচ দফা নোটিস জারি হয়েছে। তা হলে ২৩ জানুয়ারি এই নির্দেশ জারি হয়েছিল কেন? দফতরের একটি সূত্রের দাবি, মন্ত্রীকে না-জানিয়েই এই নির্দেশ জারি হয়। সে ক্ষেত্রে তিন সপ্তাহ পরে সুপ্রিম কোর্টের ধমক খাওয়ার আগে পর্যন্ত তা
প্রত্যাহার হয়নি কেন? নির্দেশের কথা তো গোপন ছিল না। সব সংবাদমাধ্যমেই এই খবর প্রকাশিত হয়েছিল। এই প্রশ্নের জবাব মেলেনি।
সরকারি সূত্রের খবর, গত কাল সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে টেলিকম মন্ত্রীর কথা হয়। এর পর ভোডাফোন-আইডিয়ার চেয়ারম্যান কুমারমঙ্গলম বিড়লাও মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। আগামী সপ্তাহে ভোডাফোন ও এয়ারটেল দুই সংস্থার কর্ণধাররাই মন্ত্রী সঙ্গে বৈঠকে বসতে পারেন।
মোদী সরকার টেলিকম সংস্থাগুলিকে বাড়তি রোজগারের পথ করে দিচ্ছে বলেও এ দিন অভিযোগ করেছে কংগ্রেস। রণদীপ বলেন, গত ডিসেম্বরে এয়ারটেল, ভোডাফোন, রিলায়্যান্স জিয়ো তিন দফায় প্রিপেড গ্রাহকদের মাসুল ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ বাড়ায়। যার ফলে বছরে ১১২ কোটি প্রিপেড গ্রাহককে বাড়তি প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা গুনতে হবে। মোদী সরকারের বাকি সাড়ে চার বছরে তিনটি মোবাইল সংস্থা প্রিপেড গ্রাহকদের থেকে ১.৬০ লক্ষ কোটি টাকা বাড়তি মাসুল আদায় করবে।
তাঁর প্রশ্ন, ‘‘মোদী সরকার কি টেলিকম সংস্থাগুলিকে পাওনা মেটানোর জন্য প্রিপেড গ্রাহকদের থেকে বাড়তি মাসুল আদায়ের সুযোগ করে দিল? কিসের বিনিময়ে?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy