ফাইল চিত্র।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর উর্জিত পটেলের অভিযোগ ছিল, হাতে প্রয়োজনীয় ক্ষমতা না দিয়েই তাঁদের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির পাহারাদার করে রাখা হয়েছে। খানিকটা ঢাল-তলোয়ারহীন নিধিরাম সর্দারের মতোই। পটেলের সেই অভিযোগ উড়িয়ে মঙ্গলবার কেন্দ্রের পাল্টা দাবি, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক-সহ দেশের সমস্ত ব্যাঙ্কে যে সমস্যাগুলি মাথাচাড়া দিতে পারে, সে সব মোকাবিলার জন্য আদতে বিপুল ক্ষমতাই এখন আরবিআইয়ের হাতে আছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে আঁটোসাঁটো নজরদারি চাইলে, আগে সে জন্য তাঁদের হাতে জরুরি ক্ষমতা তুলে দেওয়ার পক্ষে জোরালো সওয়াল করেছিলেন উর্জিত। এ দিন রাজ্যসভায় দাঁড়িয়ে সেই দাবি কার্যত খারিজ করেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী শিবপ্রতাপ শুক্ল। ব্যাঙ্কগুলিতে নজরদারির ক্ষেত্রে শীর্ষ ব্যাঙ্কের যে যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, তা বোঝাতে তুলে ধরেন ঋণদাতাদের আতসকাচের তলায় রাখা থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয় খতিয়ে দেখা, আধিকারিকদের আচরণ বা কাজকর্ম যাচাই, বিশেষ অডিট করতে বলা বা ব্যাঙ্কগুলিকে বিভিন্ন নির্দেশ দেওয়ার ক্ষেত্রে পটেলদের ক্ষমতার কথা। তাঁর দাবি, স্টেট ব্যাঙ্ক ও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিতে পূর্ণ সময়ের ডিরেক্টর নিয়োগও হয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সঙ্গে আলোচনা করার পরেই।
বস্তুত, অনুৎপাদক সম্পদের ধাক্কায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির বেহাল দশাই হোক বা ব্যাঙ্ক জালিয়াতির ঘটনা— পান থেকে চুন খসলেই হালে আঙুল উঠেছে ব্যাঙ্কিং শিল্পের পাহারাদারের ব্যর্থতার দিকে। ধাক্কা খেয়েছে শীর্ষ ব্যাঙ্কের ভাবমূর্তি। জুনে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে প্রশ্ন করতে আর্থিক বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি তলবও করেছিল পটেলকে। সেখানে অনাদায়ী ঋণের বিপুল বোঝা থেকে পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কে নীরব মোদীর প্রতারণা পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কমিটি সদস্যদের কঠিন প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় গভর্নরকে। তখনই পটেলের দাবি ছিল, সঠিক নজরদারির জন্য আগে যথেষ্ট ক্ষমতা হাতে পেতে হবে তাঁদের। কারণ সেগুলির উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেই শীর্ষ ব্যাঙ্কের।
শীর্ষ ব্যাঙ্ক ক্ষমতা চেয়েছিল সরকারি ও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে—
• সিএমডি নিয়োগ ও প্রয়োজনে তাঁকে সরানোর ক্ষেত্রে
• লাইসেন্স দেওয়া ও তার জন্য শর্ত চাপানোর বেলায়
• চেয়ারম্যান, এমডি, ডিরেক্টর নিয়োগে ছাড়পত্র
• ব্যাঙ্কের ডিরেক্টরদের বৈঠক ডাকা। ব্যাঙ্কে বোর্ডের বৈঠকে অফিসার বা পর্যবেক্ষক পাঠানো
• দরকারে ম্যানেজার ও অন্যান্য পদের আধিকারিকদের সরানো
• বোর্ডের উপরে কথা বলা
• ব্যাঙ্ক গুটোনোর আবেদন
• ব্যাঙ্ক সংযুক্তির ছাড়পত্র
• ব্যবসা বন্ধ, পুনর্গঠন বা সংযুক্তির জন্য কেন্দ্রকে আর্জি
যদিও অর্থ মন্ত্রকের তরফেও তখন পাল্টা প্রশ্ন তোলা হয়, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে পর্যাপ্ত ক্ষমতা না থাকার কথা বললেও বেসরকারি ব্যাঙ্কে তো সেই সমস্যা নেই। তা হলে আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কে কেলেঙ্কারি এড়ানো গেল না কেন? এ দিন শুক্লের দাবির পরে ব্যাঙ্কিং শিল্পের সমস্যা নিয়ে ফের রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ও কেন্দ্রের মধ্যে মতান্তর দানা বাঁধার আঁচ পাচ্ছে সংশ্লিষ্ট মহল।
সরকারের আর্জি: রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সংযুক্তির সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে বলল কেন্দ্র। শুক্ল বলেছেন, ব্যাঙ্কিং শিল্পে কর্মকাণ্ড বাড়াতেই নির্দিষ্ট সুপারিশের অনুরোধ করা হয়েছে আরবিআইকে।
নোটের জোগান: রিজার্ভ ব্যাঙ্কের হিসেব, ১৮ জুলাই পর্যন্ত বাজারে নোটের মোট পরিমাণ ১৯.২৮ লক্ষ কোটি টাকা ছুঁয়েছে। যেখানে নোটবন্দির আগে ২০১৬ সালের ৪ নভেম্বরে তা ছিল ১৭.৭৪ লক্ষ কোটি। এ কথা জানিয়ে কেন্দ্র বলেছে, সরকারও ব্যাঙ্কগুলিকে অনুরোধ করেছে এটিএমে যথেষ্ট টাকা রাখার। যাতে মানুষ সমস্যায় না পড়েন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy