ফাইল চিত্র।
সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল, এ বছর লক্ষ লক্ষ ছোট ঋণগ্রহীতার দীপাবলি কেন্দ্রের হাতে। যে কারণে অবিলম্বে সরকারকে ২ কোটি টাকা বা তার কম ঋণের কিস্তি স্থগিতাদেশের (মোরাটোরিয়াম) ক্ষেত্রে সুদের উপরে সুদ মকুবের সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে নির্দেশ দিয়েছিল তারা। সেই মতো দুর্গা পুজোর মধ্যেই এ সংক্রান্ত নির্দেশিকা জারি করল কেন্দ্র। জানাল, এতে শুধু যাঁরা পুরো বা আংশিক মোরাটোরিয়াম নিয়েছেন, তাঁরাই নন, সুদে ছাড়ের সুবিধা পাবেন ২ কোটি টাকা পর্যন্ত (সমস্ত ধরনের ঋণ মিলিয়ে) ধার নেওয়া সব ঋণগ্রহীতাই। আর সেই সুদ মকুব করা হবে গত ১ মার্চ থেকে ৩১ অগস্ট পর্যন্ত।
নির্দেশিকা অনুসারে, ঋণের আটটি শ্রেণি এই সুবিধা পাবে। সেগুলি হল— ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প (এমএসএমই), শিক্ষা, গৃহ, দীর্ঘমেয়াদি ভোগ্যপণ্য, গাড়ি, ব্যক্তিগত, কেনাকাটার জন্য নেওয়া ঋণ ও ক্রেডিট কার্ডের ধার। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নেওয়া ঋণে সুবিধা মিলবে। তবে তা নিয়মিত শোধ করা থাকতে হবে। অর্থাৎ, অনুৎপাদক সম্পদে পরিণত হলে চলবে না।
ঠিক হয়েছে, সুদের উপরে সুদের অঙ্কের (কম্পাউন্ড ইন্টারেস্ট) থেকে সাধারণ ভাবে হিসেব করা সুদ (সিম্পল ইন্টারেস্ট) বাদ দিয়ে যা দাঁড়াবে, সেই টাকা ৫ নভেম্বরের মধ্যে যোগ্য ঋণগ্রহীতাদের অ্যাকাউন্টে এক্সগ্রাশিয়া হিসেবে জমা দেবে ঋণদাতারা। এক একটি শ্রেণির ক্ষেত্রে এক এক রকম শর্তে সুদের হার স্থির হবে। তবে কোনও ক্ষেত্রেই ২৯ ফেব্রুয়ারির পরে পরিবর্তন হওয়া সুদ বিবেচ্য হবে না। গ্রহীতার অ্যাকাউন্টে টাকা জমা পড়লে, তা কেন্দ্রের থেকে ফেরত পাওয়ার (রিইম্বার্স) জন্য আবেদন করবেন ঋণদাতারা। সেটাও করতে হবে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে। হিসেব অনুসারে, এ জন্য কেন্দ্রের খরচ হবে প্রায় ৬৫০০ কোটি টাকা।
কেন্দ্রের নির্দেশ
• ২ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণের কিস্তিতে স্থগিতাদেশের সুবিধা (মোরাটোরিয়াম) নিলে লাগবে না সুদের উপরে সুদ।
• এ জন্য ঋণের আটটি শ্রেণিকে চিহ্নিত করা হয়েছে— ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প, শিক্ষা, গৃহ, দীর্ঘমেয়াদি ভোগ্যপণ্য, গাড়ি, ব্যক্তিগত, কেনাকাটার জন্য নেওয়া ঋণ ও ক্রেডিট কার্ডের ধার।
• যাঁরা পুরো ছ’মাস (১ মার্চ থেকে ৩১ অগস্ট) অথবা আংশিক সময়ের জন্য মোরাটোরিয়াম নিয়েছেন, তাঁরা এই সুবিধা পাবেন।
• একই ভাবে যাঁরা মোরাটোরিয়াম নেননি, সুদের উপরে সুদ মকুব হবে তাঁদেরও।
• গত ২৯ ফেব্রুয়ারি বা তার আগে নেওয়া ঋণের ক্ষেত্রে এই সুবিধা মিলবে।
• ওই দিনের মধ্যে কোনও ঋণ অনুৎপাদক সম্পদে পরিণত হলে তা পাওয়া যাবে না।
• সুদের উপরে সুদ মকুবের টাকা যোগ্য গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে এক্সগ্রাশিয়া হিসেবে জমা দেবেন ঋণদাতারা।
• ৫ নভেম্বরের মধ্যে এই পুরো কাজ সারতে হবে।
• পরে ঋণদাতারা কেন্দ্রের থেকে ক্ষতিপূরণের দাবি জানাবেন।
• সব মিলিয়ে এ জন্য কেন্দ্রের খরচ হতে পারে ৬৫০০ কোটি টাকা।
উল্লেখ্য, করোনা ও তা আটকাতে জারি হওয়া লকডাউনে টান পড়েছে ব্যবসায়, ধাক্কা খেয়েছে রুজি-রোজগার। এই অবস্থায় আমজনতাকে সুরাহা দিতে মার্চ থেকে অগস্ট পর্যন্ত ঋণের কিস্তিতে স্থগিতাদেশের কথা জানিয়েছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। বলা হয়, ওই সময়ের বকেয়া কিস্তি সুদে-আসলে পরে মেটাতে হবে। ঋণদাতাদের যদিও বক্তব্য ছিল, সুদ-আসলের বাইরেও বকেয়া সুদের উপরেও সুদ দিতে হবে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, এতে খরচ হবে অনেক বেশি। তার পরেই এর বিরুদ্ধে আদালতে যান ঋণগ্রহীতাদের একাংশ।
সেই মামলায় প্রথমে সুদের উপরে সুদে ছাড়ে আপত্তি জানালেও, শেষ পর্যন্ত এ মাসের শুরুতে শর্তসাপেক্ষে তাতে রাজি হয় কেন্দ্র। যদিও গত ১৪ অক্টোবরের শুনানিতে কেন্দ্রকে সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্ন ছিল, সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে বেশ কিছু দিন কাটলেও, কেন নির্দেশিকা জারি করেনি সরকার? সাধারণ মানুষের কথা মাথায় রাখা হচ্ছে কি না, প্রশ্ন তোলে তা নিয়েও। ২ নভেম্বর পরবর্তী শুনানির আগেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতেও বলা হয়। এর পরেই শুক্রবার গভীর রাতে এই নির্দেশিকা জারি করল আর্থিক বিষয়ক দফতর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy