অর্থনীতিকে ৫ লক্ষ কোটি ডলারে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন ফেরি করছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বাজেটে সে কথা বলেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনও। কিন্তু বছর ঘুরতে চললেও সঙ্কটের কবল থেকে বেরোনোর দিশা পাচ্ছে না গাড়ি শিল্প। বরং দেশে আরও বেশি চাহিদা কমার বার্তা দিয়ে জুনেও তলানিতে ঠেকেছে সব ধরনের গাড়ি বিক্রি। উৎপাদন শিল্পের প্রায় অর্ধেকটাই যার দখলে। ফলে সংশ্লিষ্ট মহলের প্রশ্ন, গাড়ির মতো শিল্প ঘুরে না দাঁড়ালে এবং সেই সঙ্গে দেশ জুড়ে চাহিদায় গতি না এলে, অর্থনীতির বহর বাড়ানোর স্বপ্ন সফল হবে কী ভাবে? বিশেষত আগামী দিনে দুরবস্থা যেখানে আরও বাড়ার আশঙ্কা করছে গাড়ি সংস্থাগুলি। ঘুরে দাঁড়াতে ফের অবিলম্বে আর্থিক ত্রাণ প্রকল্পের দাবি তুলেছে শিল্প মহল।
বুধবার গাড়ি সংস্থাগুলির সংগঠন সিয়ামের প্রকাশিত রিপোর্টে স্পষ্ট, অসুখ সারা দূর অস্ত্, তা উত্তরোত্তর বাড়ছে। বছরখানেক ধরে গাড়ি বিক্রির ধারাবাহিক পতন স্মরণকালের মধ্যে সব থেকে বেশি তীব্র।
ক’দিন আগে বাজেটে বৈদ্যুতিক গাড়ির জন্য নানা সুবিধা ঘোষণার পরে অনেকেরই প্রশ্ন ছিল, সার্বিক ভাবে গাড়ি শিল্পের ‘অসুখ’ সারানোর দাওয়াই কোথায়? বিশেষত যেখানে নাগাড়ে বিক্রি কমছে। এ দিনও সেই প্রশ্নই ফের তুলেছে একাংশ।
ধাক্কার কারণ
• অর্থনীতির শ্লথ গতি।
• চাহিদার অভাব।
• বৈদ্যুতিক গাড়িতে জিএসটি কমানোর প্রস্তাব থাকলেও, প্রথাগত ইঞ্জিনের (আইসি ইঞ্জিন) গাড়িতে করের হার উঁচুতেই থাকা।
• পুরনো গাড়ি বাতিলের জন্য এখনও কোনও নীতি না তৈরি।
• বিক্রি কম হওয়ায় গাড়ির মজুত ভাণ্ডার উপচে পড়া।
• গাড়িঋণে সুদের হার এখনও তেমন না কমা।
• পেট্রল-ডিজেলের দামে অস্থিরতা
সিয়ামের ডিজি বিষ্ণু মাথুরের দাবি, ‘‘বাজেটে ব্যাঙ্কে পুঁজি ঢালা কিংবা ছোট-মাঝারি শিল্পকে নানা সুবিধা দেওয়ায় মানুষের হাতে টাকা এলে, দীর্ঘমেয়াদে তার সুফল পাবে গাড়ি শিল্পও। কিন্তু এখন গাড়ি তৈরি ও কেনার খরচ বেড়েছে। সব মিলিয়ে বাজারে নেতিবাচক মনোভাব। তা কাটাতে দ্রুত কিছু দাওয়াই চাই।’’ তিনি ও সিয়ামের ডেপুটি ডিজি সুগত সেন তাই ফের ত্রাণ প্রকল্পের জন্য সওয়াল করেছেন। বাজেটের বহু আগেই যে আর্জি জানিয়েছিল সিয়াম।
শিল্পের দাবি
• গাড়ির চাহিদা বাড়াতে এগিয়ে আসুক সরকার।
• আনা হোক আর্থিক ত্রাণ প্রকল্প। সেখানে জিএসটি ২৮ থেকে কমিয়ে করা হোক ১৮%। যাতে গাড়ির দাম কমে।
• চাহিদা বাড়াতে ১৫ বছরের পুরনো গাড়ি বাতিলের ক্ষেত্রে ঘোষণা হোক আর্থিক সুবিধা।
মাথুরের মতে, সাময়িক ভাবে জিএসটি কমানো হলেও অল্প সময়ের মধ্যে কম দামে গাড়ি কেনার সুবিধা নিতে আগ্রহী হবেন অনেকে। এই প্রসঙ্গে এর আগে দু’বার আর্থিক ত্রাণ প্রকল্পে উৎপাদন শুল্ক হ্রাসের কথা বলছেন তাঁরা। সেই সঙ্গে জানাচ্ছেন পুরনো বাতিল গাড়ির জন্য আর্থিক সুবিধার দাবি। যা মিললে নতুন কেনার চাহিদা বাড়বে বলে মনে করছেন তাঁরা।
সিয়াম কর্তাদের দাবি, বৈদ্যুতিক গাড়ি নিয়ে কেন্দ্রের ভাবনা সদর্থক। তবে এখন চালু গাড়িগুলির জন্যও আলাদা নীতি জরুরি। কারণ বৈদ্যুতিক গাড়ি এখনই সেগুলির পরিপূরক হতে পারবে না।
গাড়ি শিল্পে প্রায় ৩.৭ কোটি মানুষ কর্মরত। সূত্রের খবর, নতুন নিয়োগ তো বন্ধই, ছাঁটাইয়ের আশঙ্কাও বাড়ছে। ইতিমধ্যে প্রায় ২৫০ জন ডিলার ব্যবসা গুটিয়েছেন। একাংশের প্রশ্ন, এই শিল্প ও তাকে ঘিরে অর্থনীতিতে যে সঙ্কট ঘনাচ্ছে, সে কথা কি বুঝতে পারছে কেন্দ্র? ভবিষ্যৎই এর জবাব দেবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy