প্রতীকী ছবি।
অভ্রংলিহ। ছোটবেলায় বাংলা পরীক্ষায় আসা এই শব্দটার মানে বলতে বলাটা ছিল আমাদের অনেকের কাছেই ছিল ছাত্র ঠকানো প্রশ্ন। এখন যে ভাবে শেয়ার বাজারের সূচক লাফাচ্ছে, তাতে আকাশচুম্বী বা অভ্রংলিহ এই শেয়ার সূচকও কি সাধারণ লগ্নিকারী ঠকানো ফাঁদ?
এই প্রশ্নের উত্তর নির্ভর করছে কী ভাবে দেখছেন তার উপর। ভাল ছাত্রদের কাছে যেমন অভ্রংলিহ শব্দটা সোজা দুটো নম্বর তোলার রাস্তা, তেমনই এই বুল মার্কেট কিন্তু আপনার বিনিয়োগে আগের ভুল সামলানোর প্রকৃষ্ট সুযোগ। কারণ, সেই সব শেয়ার, যা আগের বুল মার্কেটে আপনি সস্তা ভেবে তুলে পরে তার তিন অবস্থায় মাথা চাপড়েছিলেন, এ বার তা ঘাড় থেকে নামিয়ে ঠান্ডা মাথায় বিনিয়োগের বিস্তার নিয়ে ভাবার সুযোগ আপনার সামনে।
দীপাবলির আগে ঘর পরিষ্কারের মতো আপনার পোর্টফোলিও থেকে খেসারত দেওয়া শেয়ার ঘাড় থেকে তো নামালেন। এ বার পোর্টফোলিও সাজাতে হবে তো! কিন্তু সাজাতে গিয়ে যেন আগের মতো ভুল করে বসবেন না!
আজকের বিনিয়োগ তো আগামীর আয়ের সূত্র? তাই না? তা হলে বিনিয়োগ বাছতেও আগে চোখ রাখুন সেই শিল্পের দিকে যা নাকি ভবিষ্যতের বলে চিহ্নিত হচ্ছে। আমি বলছি পাঁচটি ক্ষেত্রের কথা যাতে আপনি বিনিয়োগের জন্য ভাবতে পারেন। এই পাঁচটি হল:
· গ্রিন এনার্জি বা পরিবেশবান্ধব শক্তি
· ফিনটেক বা লেনদেন প্রযুক্তি
· লাইফস্টাইল সাপোর্ট বা জীবন যাপনের সহায়ক শিল্প
· স্মল ফার্মা/হেলথকেয়ার বা ক্ষুদ্র ওষুধ/ স্বাস্থ্যকেন্দ্রিক শিল্প
· ইলেকট্রিক ট্রান্সপোর্ট বা বৈদ্যুতিক পরিবহণ শিল্প
মাথায় রাখতে হবে উষ্ণায়ন কিন্তু আমাদের বাঁচা-মরার নির্ণায়ক হয়ে উঠেছে। বেঁচে থাকার শর্তেই প্রথাগত প্রযুক্তির বিদায় শুধু সময়ের অপেক্ষা। এই ব্যবসাই এনার্জি সেক্টরে শক্তি উৎপাদন ক্ষেত্রে লাভ-ক্ষতির পুরো খেলাটাই বদলাতে চলেছে বলে মনে করছেন অনেকেই। আমাদের দেশে, যেখানে কনভেনশনাল এনার্জি প্রথাগত শক্তির প্রাধান্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠে না, এই উদীয়মান ক্ষেত্রটি কিন্তু বিনিয়োগের গন্তব্য হিসাবে বিরাট সম্ভাবনাময়। বিশেষত সোলার পাওয়ার নিয়ে আমি খুব আশাবাদী। আর এর জন্মলগ্নেই আপনি যদি এর অংশীদার হয়ে ওঠেন তা হলে আগামীতে আপনার লাভও তাল মিলিয়ে বাড়বে।
ফিনটেক বা আর্থিক লেনদেন প্রযুক্তিও যে অতি দ্রুত আমাদের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে, এবং আগামী দিনে আরও করতে সক্ষম হবে, সেও একদম জোর গলায় বলা চলে। ইতিমধ্যেই ঋণ, দাম চোকানোর অ্যাপ ইত্যাদির ব্যাপারে অগ্রণী ফিনটেক সংস্থাগুলি অনেক দূর এগিয়েছে। তরুণ ভারতীয়রা শুধু ঋণ বা ‘বাই নাও পে লেটার’ বা ‘আগের কিনুন পরে দাম চোকান’ জাতীয় পরিষেবাই নিচ্ছেন না ফিনটেকের মাধ্যমে, বিনিয়োগ করতেও এই সব প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন।
বাসের টিকিট বুকিং, বিদেশে হোটেল ঠিক করা, রাতে ডিনারের অর্ডার দেওয়া কি আগে এত সহজে করা যেত? সাবেকি মানুষ সবাই একযোগে বলবেন, না। ইদানীং এসব করা অতি সাধারণ, অতি স্বচ্ছ ভাবে সম্ভবপর। কারণ অবশ্যই মোবাইল টেকনোলজি, মানে ইন্টারনেটের নিরন্তর প্রয়োগ। লাইফস্টাইল সাপোর্ট বা যাপন-সহায়ক পরিষেবা এ দেশে (বিদেশেও নিঃসন্দেহে) এক উঠতি সম্ভাবনাময় ব্যবসা। এর ভবিষ্যত সহজেই অনুমেয়।
স্মল ফার্মা তথা হেলথকেয়ারও ঠিক তাই। ‘স্মল’ লিখেছি বুঝেশুনেই, দেশের বিশালাকৃতি ফার্মা কোম্পানিগুলো থেকে তুলনায় নব্য, ক্ষুদ্র সংস্থাদের আলাদা ভাবে চিহ্নিত করতে। রিসার্চ, ডায়াগনস্টিক্স, স্পেশালিটি ওষুধ বা বিশেষ কোন হসপিটাল ইকুইপমেন্ট সাপ্লাই— বেশ কিছু ব্যবসার মোড় ঘুরে গেছে এই মহামারির বাজারে।
ইলেকট্রিক ট্রান্সপোর্ট যাকে বলা যায় ‘বৈপ্লবিক’ ক্ষেত্র তো আমাদের পরিবহণ প্রযুক্তির এক সন্ধিক্ষণে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। অনেক পুরনো কোম্পানি (বিরাট বড় গাড়ি নির্মাতারা আছে এই তালিকায়) এবং একগুচ্ছ ছোট সংস্থা এর টানে প্রবল বেগে ছুটেছে। বিশাল এক বাজার তাদের জন্য যে অপেক্ষা করে আছে তা জোর গলায় বলা যায়।
শুধু ক্ষেত্র দেখলেই হবে না। নতুন ক্ষেত্রের একটা বড় ঝুঁকি হল সংস্থার মূল বিনিয়োগকারীদের সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া। তাঁদের ইতিহাস জানা। একেবারে নতুন কোম্পানি হলে (যেমন ধরুন, ফিনটেকে একদম আনকোরা স্টার্ট-আপ অনেক আছে) প্রমোটারদের ব্যাপারে জেনে নিতে ভুলবেন না। অবশ্যই প্রতিবারের মতো, এ সমস্ত লগ্নির ক্ষেত্রে যে প্রচুর ঝুঁকি আছে, তা মাথায় রেখেই এগোন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy