প্রতীকী ছবি।
কেন্দ্র আজ ২০২১-২২ অর্থবর্ষের বাজেট পেশ করবে। দেশের অর্থনীতির উপরে অতিমারি যে কালো ছায়া ফেলেছে, তা থেকে খানিকটা উদ্ধার পাওয়ার জন্য বহু মানুষ এই মুহূর্তে সেই দিকে তাকিয়ে। তবে রাজকোষের যা অবস্থা তাতে সরকার বাজেটের মাধ্যমে পরিস্থিতি কতখানি সামাল দিতে পারবে, তা নিয়ে অনেকে চিন্তিত। যে কারণে এ বার কী কী ঘোষণা করা হতে পারে, তাই নিয়ে জল্পনাও ছড়াচ্ছে বিস্তর।
সত্যি কথা হল, আশার তুলনায় আশঙ্কাতেই ভুগছেন বেশির ভাগ মানুষ। বিশেষত শেয়ার বাজারের লগ্নিকারীরা। যে কারণে গত ছ’টি লেনদেনে নাগাড়ে পড়েছে সূচক। ৫০ হাজার পার করে ফেলার পরেও ৩৫০৭ পয়েন্ট খুইয়েছে সেনসেক্স। নেমেছে ৪৬,২৮৬ পয়েন্টে। যেমন দ্রুত গতিতে উঠেছিল, নেমেও এসেছে প্রায় সমান ক্ষিপ্রতায়। ছ’দিনে তার পতনের হার ৭%। নজিরবিহীন ১৪,৬৪৫ থেকে ১০০৯ পয়েন্ট গড়িয়ে গিয়ে নিফ্টি এখন ১৩,৬৩৫।
যাদের মোটা লগ্নিতে বাজার উঠছিল, মূলত সেই বিদেশি আর্থিক সংস্থাগুলির শেয়ার বেচে মুনাফা তুলতে নামাই এ জন্য দায়ী। বস্তুত এই আশঙ্কাটা ছিলই। কারণ দেশের আর্থিক অবস্থার সঙ্গে বাজারের উত্থান সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না। অর্থাৎ, এই পতনে কিছুটা হলেও বাজার যুক্তিযুক্ত উচ্চতায় এসে দাঁড়িয়েছে। উত্থান যুক্তিপূর্ণ নয় এই ধারণায় বহু মানুষ যেমন শেয়ার কিনে সূচকের নাগাড়ে ওঠার সুযোগ নিতে পারেননি, তেমনই বাজার এত দ্রুত এতখানি নামায় অনেকেই পারেননি হাতের শেয়ার বিক্রি করে লাভ ঘরে তুলতে। বাজেট যদি বাজারের পছন্দ হয়, তবে সূচক আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে। উল্টোটা হলে নিম্নচাপ বহাল থাকারই আশঙ্কা।
তবে শিল্প এখনও সে ভাবে চাঙ্গা হতে পারেনি। অক্টোবর, নভেম্বরের পরে ডিসেম্বরেও সঙ্কুচিত (১.৩%) হয়েছে দেশের আটটি প্রধান পরিকাঠামো শিল্প। দেশে কর্মসংস্থানের হারের বেশ খারাপ অবস্থা। ২০২১-২২ অর্থবর্ষে বৃদ্ধির হার ১১% ছুঁতে পারে বলা হচ্ছে ঠিকই (আর্থিক সমীক্ষায় দাবি, আইএমএফ-ও বলেছে ১১.৫%)। কিন্তু এতে তেমন আনন্দিত হওয়ার কোনও কারণ দেখা যাচ্ছে না। কারণ এই হারের হিসেব কষা হয়েছে চলতি অর্থবর্ষে (২০২০-২১) জিডিপি ৭.৭% কমে যাওয়ার অনুমানের ভিতের উপরে দাঁড়িয়ে। ২০১৯-২০ সালের সঙ্গে তুলনা করলে প্রকৃত বৃদ্ধির হার দাঁড়াতে পারে মাত্র ২.৪%।
এখনও উদ্বেগ
• ডিসেম্বরেও ইস্পাত ও সিমেন্ট শিল্পে উৎপাদন অনেকখানি কমে যাওয়া চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে যে লকডাউনের আগের অবস্থায় ফিরে যেতে এখনও ঢের দেরি।
• উপদেষ্টা সংস্থা সিএমআইই-র পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত মাসে বেকারত্বের হারও ছিল ৯.০৬%। নভেম্বরের ৬.৫০% বা অক্টোবরের ৭.০২ শতাংশের থেকে বেশি।
• আগামী অর্থবর্ষে আর্থিক বৃদ্ধির পূর্বাভাস ১১% বলা হচ্ছে আসলে চলতি অর্থবর্ষে ৭.৭% সঙ্কুচিত জিডিপি-র অনুমানের নিরিখে। ২০১৯-২০ সালের সঙ্গে তুলনা করলে প্রকৃত বৃদ্ধির হার দাঁড়াতে পারে মাত্র ২.৪%।
• বাজেটে সাধারণ মানুষের আর্থিক সুরাহার বন্দোবস্ত হবে তো?
অর্থনীতির চাকা ঘোরাতে এক দিকে যেমন পরিকাঠামো-সহ বিভিন্ন শিল্পে সরকারকে মোটা টাকা বরাদ্দ করতে হবে, অন্য দিকে তেমনই আয় বাড়িয়ে বাগে রাখার চেষ্টা করতে হবে রাজকোষ ঘাটতিকে। এখানেই আশঙ্কা অনেকের। পুরনো যে সব কর যেমন— সম্পদ কর, এস্টেট ডিউটি, দান কর ইত্যাদি যা অতীতে তুলে দেওয়া হয়েছিল, তার কোনও কোনওটিকে আবার ফিরিয়ে আনা হবে না তো? কোভিড সেস বসানো হবে কি? ঘাড়ে বিপুল বোঝা নিয়ে সেই আমজনতাকেই ভুগতে হবে না তো?
সব মিলিয়ে বাজেট থেকে এ বার আশার তুলনায় আশঙ্কাই যেন বেশি। আর সেটাই গ্রাস করেছে শেয়ার বাজারকে। পূর্বাভাসের ভিত্তিতে নয়, আর মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বাস্তব অবস্থার নিরিখে আন্দোলিত হবে শেয়ার বাজার।
গত সপ্তাহে আর্থিক ফল প্রকাশ করেছে বেশ কিছু বড় মাপের সংস্থা। অক্টোবর-ডিসেম্বর (তৃতীয়) ত্রৈমাসিকে মারুতির নিট লাভ ২৬% বেড়েছে। কোটাক মহিন্দ্রা ব্যাঙ্কের বেড়েছে ১১%, হিন্দুস্তান ইউনিলিভারের ১৯%, আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কেরও ১৯%। ৩৭৮ কোটি টাকার নিট লাভ ঘরে তুলেছে আইডিবিআই ব্যাঙ্ক। অনাদায়ি ঋণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কারণে অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কের লাভ কমেছে ৩৬%। লাভের খাতায় ফিরেছে ব্যাঙ্ক অব বরোদা। সেল-এর নিট লাভ ৩৯৮% বেড়ে পৌঁছেছে ১২৮৩ কোটি টাকায়।
(মতামত ব্যক্তিগত)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy