একই গোষ্ঠীভুক্ত (ক্লোজড ইউজার গ্রুপ বা সিইউজি) মোবাইল নম্বরগুলির মধ্যে কার্যত নিখরচায় যত খুশি ফোনের সুযোগ টেলিকম শিল্পে পুরনো। ওই নম্বরগুলির জন্য গ্রাহকদের মাসে নির্দিষ্ট মাসুল দিতে হলেও, সেগুলির মধ্যে ফোন করতে আলাদা ভাবে আর পয়সা খরচ হয় না। পরের ধাপে মোবাইলের সঙ্গে ল্যান্ডলাইনকে জুড়ে এই একই পরিষেবা চালু করেছে বিএসএনএল। চেষ্টা করছে ওই টোপ দিয়ে ল্যান্ডলাইনের গ্রাহক সংখ্যায় ধস আটকানোর। কিন্তু এত দিন তাদের এই পরিষেবা সীমাবদ্ধ ছিল একই এক্সচেঞ্জ বা সার্কেলের মধ্যে। এ বার সেই পরিষেবার পরিধি বিস্তৃত করছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটি। যার দৌলতে ভিন্ রাজ্যের পরিচিতদের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে সিইউজি পরিষেবার সুযোগ নিতে পারবেন ল্যান্ডলাইন গ্রাহকেরা। এই পথে হেঁটে ল্যান্ডলাইনের ‘দিন ফেরাতে’ নতুন প্রযুক্তি (নিউ জেনারেশন নেটওয়ার্ক বা এনজিএন) ব্যবহার শুরু করল বিএসএনএল।
বিএসএনএলের আয়ের সিংহভাগ আসে ল্যান্ডলাইন পরিষেবা থেকে। কিন্তু মোবাইলের দাপট ও পরিষেবায় ঘাটতির জেরে ল্যান্ডলাইনের গ্রাহক হারিয়েছে সংস্থা। টেলিকম নিয়ন্ত্রক ট্রাইয়ের হিসাবে, ২০১৫ সালের ডিসেম্বরের তুলনায় গত জানুয়ারিতে তাদের ল্যান্ডফোনের গ্রাহক কমেছে প্রায় সওয়া দু’লক্ষ। শুধু কলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গ সার্কেলেই তা কমেছে যথাক্রমে ১৩ হাজার ও ১,৯০০। এখন এনজিএন প্রযুক্তি মারফত নানা বাড়তি সুবিধা পৌঁছে দিয়ে ল্যান্ডলাইন গ্রাহক টানার চেষ্টা করছে সংস্থাটি।
এত দিন ল্যান্ডলাইনে একই এক্সচেঞ্জ ও মোবাইলে একই সার্কেলে সিইউজি পরিষেবা মিলত। এর পর বিএসএনএলের পশ্চিমবঙ্গ সার্কেল ল্যান্ডলাইন ও মোবাইল মিলিয়ে তা চালু করে। কিন্তু কলকাতা বা রাজ্যের কেউ ভিন্ রাজ্যে থাকা পরিচিতকে সিইউজি-তে ঢোকাতে পারতেন না। এখন এনজিএন প্রযুক্তিতে সেই সুবিধাই মিলবে। অর্থাৎ, কলকাতা বা আসানসোলের ল্যান্ডলাইন গ্রাহক সিইউজি তৈরি করতে পারবেন দিল্লি বা চেন্নাইয়ের বিএসএনএল গ্রাহককে নিয়েও। তবে শর্ত হল, ‘মাস্টার’ বা মূল গ্রাহকের ল্যান্ডলাইন এনজিএন প্রযুক্তির আওতায় থাকতে হবে।
বি এস এন এলের (পশ্চিমবঙ্গ সার্কেল) জেনারেল ম্যানেজার (বিপণন) অসীম কুমার সিংহ জানান, ওই গ্রাহকের লাইনটি যে এক্সচেঞ্জের, সেখানে নতুন প্রযুক্তি জরুরি। বাকিদের ক্ষেত্রে তা বাধ্যতামূলক নয়।
সারা দেশে ধাপে ধাপে এই প্রযুক্তির যন্ত্র বসাচ্ছে বিএসএনএল। অসীমবাবু জানান, প্রথম পর্যায়ে আসানসোল ও শিলিগুড়ির ৫টি এক্সচেঞ্জের ২০ হাজার লাইনে এই প্রযুক্তি চালু হয়েছে। জুনের মধ্যে আরও ১৭টি এক্সচেঞ্জের ৪৭,৫০০ ল্যান্ডলাইনে এই প্রযুক্তি চালু হবে। বছর খানেকের মধ্যে চালু হবে রাজ্যের বাকি জায়গাতেও।
ক্যালকাটা টেলিফোন্সের প্রিন্সিপাল জেনারেল ম্যানেজার অপূর্ব কুণ্ডুও জানাচ্ছেন, প্রথম পর্যায়ে ১০টি এক্সচেঞ্জের (মূলত বড়বাজার, লেকটাউন, কেষ্টপুর, দমদম রোড, পিকনিক গার্ডেন ও হাওড়ার কিছু এলাকা) ৫৫ হাজার লাইনে এই প্রযুক্তি চালু হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে এ বছরের মধ্যে আরও ৭৫টি এক্সচেঞ্জে ২ লক্ষ ল্যান্ডলাইন এর আওতায় আসবে। বছর দুয়েকে এই প্রযুক্তি চালু হয়ে যাবে বাকি এলাকাতেও।
কিন্তু বিএসএনএলের ল্যান্ডলাইন পরিষেবা নিয়ে যেখানে গ্রাহকদের মধ্যে যথেষ্ট অসন্তোষ, সেখানে এই পরিষেবা নিতে কেউ আগ্রহী হবেন কেন? অপূর্ববাবু ও অসীমবাবুর দাবি, নিখরচায় ফোনের সুযোগ গ্রাহকদের মধ্যে বাড়তি আকর্ষণ তৈরি করবে। তা ছাড়া, নতুন প্রযুক্তিতে সার্বিক ভাবে উন্নত হবে পরিষেবার মান।
সংস্থার আশা, নতুন প্রযুক্তির হাত ধরে গ্রাহক টানতে পারলে তাদের অন্তত একটা নির্দিষ্ট আয় নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। তা কাজে লাগিয়ে সম্ভব হবে পরিষেবার গুণমান বাড়ানো। সে ক্ষেত্রে ভিন্ রাজ্যে ফোনের এই সুবিধা নিতে আগ্রহ দেখাবে বিভিন্ন সংস্থাও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy