বুধবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে নীতিগত ভাবে ঠিক হয়েছে যে, এই দু’টি টেলিকম সংস্থাকে মিশিয়ে দেওয়া হবে।
আর্থিক সঙ্কটে জর্জরিত দুই রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিকম সংস্থা বিএসএনএল এবং এমটিএনএল-কে অক্সিজেন জোগাল নরেন্দ্র মোদীর সরকার। ঘোষণা করল প্রায় ৬৯ হাজার কোটি টাকার পুনরুজ্জীবন প্যাকেজ।
বুধবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে নীতিগত ভাবে ঠিক হয়েছে যে, এই দু’টি টেলিকম সংস্থাকে মিশিয়ে দেওয়া হবে। স্বেচ্ছাবসর দেওয়া হবে পঞ্চাশোর্ধ্ব কর্মীদের। পাশাপাশি, সংযুক্ত সংস্থার পরিষেবা চাঙ্গা করতে বরাদ্দ করা হবে ফোর-জি স্পেকট্রাম। মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, ‘‘বিএসএনএল, এমটিএনএল বন্ধ করে দিচ্ছি না। বিলগ্নিকরণ করছি না। তৃতীয় পক্ষের হাতেও তুলে দিচ্ছি না। বরং আরও প্রতিযোগী, পেশাদার করে তুলতে চাইছি।’’
এমটিএনএল দিল্লি ও মুম্বইয়ে টেলিফোন পরিষেবা দেয়। দিল্লিতে আসন্ন বিধানসভা ভোটের আগে আজ সেই এমটিএনএল কর্মীদেরও আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছে বিজেপি সরকার।
পুনরুজ্জীবন প্রকল্প
• বিএসএনএল এবং এমটিএনএল-এর সংযুক্তি
• ৫০ বছর ও তার বেশি বয়সী কর্মীদের জন্য স্বেচ্ছাবসর প্রকল্প
• নিলাম ছাড়াই বরাদ্দ ৪ জি স্পেকট্রাম। কেন্দ্র দেবে ২০,১৪০ কোটি টাকা
• ওই স্পেকট্রামের জিএসটি বাবদ ৩,৬৭৪ কোটি টাকাও মেটানো হবে বাজেট থেকে
• দীর্ঘমেয়াদি বন্ড ছেড়ে ১৫,০০০ কোটি টাকা তুলে ধার পুনর্গঠনের পাশাপাশি অন্যান্য খরচ মেটানো হবে
• দুই সংস্থার সম্পত্তি বেচে
চার বছরে ৩৮,০০০ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্য
বিএসএনএল-এর সিএমডি পি কে পুরওয়ার সম্প্রতি দেশের সব সার্কলকে ৫০ বছর বা তার বেশি বয়সের কর্মীদের চাকরির নথি (সার্ভিস বুক) সম্পূর্ণ (আপ টু ডেট) করার নির্দেশ দেন। তার পরেই স্বেচ্ছাবসর ঘিরে জল্পনা বেড়েছিল। এ দিন মন্ত্রিসভা সেই জল্পনাতেই সিলমোহর দিল। বিএসএনএল-এ এখন কর্মী সংখ্যা ১ লক্ষ ৬৫ হাজার। তাঁদের মধ্যে ১ লক্ষ ৬ হাজার ৩০২৪ জন কর্মীরই বয়স আগামী বছর ১ জানুয়ারি ৫০ বা তার বেশি হবে। এমটিএনএল-এর ২২ হাজার কর্মীর অর্ধেকের বেশির বয়স ৫০-এর উপরে। এই কর্মীদের একটা বড় অংশকে স্বেচ্ছাবসর দিয়ে বেতন খাতে খরচ কমিয়ে আনতে চাইছে সরকার। এখন বিএসএনএল-এ প্রতি মাসে বেতন দিতে ৮৫০ কোটি টাকার উপর খরচ হয়। রবিশঙ্করের দাবি, ‘‘অন্যান্য টেলিকম সংস্থায় যেখানে মোট খরচের ৫% বেতন খাতে যায়, সেখানে এই দুই সংস্থায় যায় ৭০%।’’
The Modi Govt has announced several measures to revive BSNL & MTNL.
— Prakash Javadekar (@PrakashJavdekar) October 23, 2019
1⃣ Sovereign bond worth Rs 15,000 crore to be raised
2⃣ Assets worth Rs 38,000 crore to be monetized
3⃣ 4G Spectrum will be allotted to the Telecom PSEs pic.twitter.com/mlmacQhSJk
স্বেচ্ছাবসর প্রকল্পের জন্য ২৯,৯৩৭ কোটি টাকা ঢালবে সরকার। এই প্রকল্পকে ‘আকর্ষণীয়’ আখ্যা দিয়ে রবিশঙ্কর বলেন, ‘‘কেউ যদি সাড়ে ৫৩ বছর বয়সে স্বেচ্ছাবসর নেন, তা হলে তিনি অবসরের আগে পর্যন্ত প্রাপ্য বেতন-পেনশন-গ্র্যাচুইটির ১২৫ শতাংশ অর্থ পাবেন। তবে কাউকে অবসর নিতে বাধ্য করা হবে না।’’
পাশাপাশি সংস্থা পুনরুজ্জীবনের লক্ষ্যে ফোর-জি স্পেকট্রাম বরাদ্দ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রিসভা। রবিশঙ্কর বলেন, ‘‘বিএসএনএল-এর সঙ্গে অনেক অবিচার হয়েছে। ফোর-জি স্পেকট্রাম ২০১৬-র দরেই দেওয়া হবে।’’ দুই সংস্থার দেনার পরিমাণ এখন ৪০ হাজার কোটি টাকা। সেই দেনা শোধ ও নতুন পুঁজির ব্যবস্থা করতে ‘অপ্রয়োজনীয়’ সম্পত্তি বেচে ৩৮ হাজার কোটি টাকা তোলা হবে। আর বাজারে ছাড়া হবে সরকারি গ্যারান্টিযুক্ত ১৫ হাজার কোটি টাকার বন্ড। সরকারের আশা, পুরো প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার দু’বছরের মধ্যে লাভ করতে শুরু করবে বিএসএনএল। আর্থিক সঙ্কটের জেরে সেপ্টেম্বরের বেতন বকেয়া ছিল সংস্থায়। বুধবারই সেই বেতন হয়েছে। সেই সঙ্গে এসেছে সংস্থা পুনরুজ্জীবনের ‘সুখবর’।
নরেন্দ্র মোদী ও রবিশঙ্কর প্রসাদকে ধন্যবাদ দিয়ে সঞ্চার নিগম এগ্জ়িকিউটিভস অ্যাসোসিয়েশনের অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল সেক্রেটারি দিলীপ সাহা বলেন, ‘‘সরকার এতটা সাহায্য করবে ভাবিনি। এতে শুধু সংস্থাটির কর্মী-আধিকারিকদেরই নয়, গ্রাহকদেরও সংস্থার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আস্থা বহু গুণ বাড়বে। পরিষেবা ছেড়ে দেওয়া অনেক গ্রাহকও ফের বিএসএনএল-এর সংযোগে ফিরবেন বলে আশা করি।’’ বিএসএনএল এগ্জ়িকিউটিভস অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট শুভাশিস মিত্র বলেন, ‘‘বিএসএনএল-কে বাঁচার সুযোগ দেওয়ার জন্য মন্ত্রীর কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। সরকারি সহায়তার পাশাপাশি এ বার ব্যাঙ্ক থেকে ঋণও মিলবে।’’
তবে আইএনটিটিইউসি সমর্থিত ঠিকা কর্মী ইউনিয়নের নেতা শেখ সাহাবুদ্দিনের প্রশ্ন, তাঁদের কী হবে? তিনি জানান, কলকাতায় শাখার ঠিকা কর্মীদের সাত-আট মাস বেতন বাকি। মাসে তাঁদের কাজের দিন ও সময় অর্ধেক করা হয়েছে। ১২০০ নিরাপত্তা রক্ষীকেও বসিয়ে দেওয়া হবে।
বিএসএনএল পুনরুজ্জীবনের প্রকল্পকে কটাক্ষ করেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী। এ দিন তাঁর টুইট, প্রথম ধাপ: সংযুক্তি, দ্বিতীয় ধাপ: ভুল পরিচালনা, তৃতীয় ধাপ: বিপুল ক্ষতি দেখানো, চতুর্থ ধাপ: সস্তায় প্রাণের বন্ধুদের কাছে সংস্থাটি বেচে দেওয়া।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy