একের পর এক আর্থিক কেলেঙ্কারির সূত্র ধরে হালে প্রশ্ন উঠেছে অডিট সংস্থাগুলির ভূমিকা নিয়ে।
তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা সত্যম থেকে শুরু করে ব্যাঙ্ক নয় এমন আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফসি) আইএল অ্যান্ড এফএস— এ যাবৎ আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়ানো বহু সংস্থার ক্ষেত্রেই তাদের অডিটরদের বিরুদ্ধে আঙুল তুলেছে তদন্তকারী সংস্থা। প্রশ্ন উঠেছে, হিসেব পরীক্ষাই যাঁদের কাজ, হিসেবের গরমিল তাঁদের চোখ এড়ায় কী করে? তবে শনিবার ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব ইন্ডিয়ার (আইসিএআই) অডিট বোর্ডের চেয়ারম্যান জি শেখরের দাবি, চাইলেও স্বাধীন ভাবে অডিটের কাজ করা বহু ক্ষেত্রেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক সময়ে হিসেবের খাতায় ধরা পড়া বিশেষ কিছু বিষয় অডিট রিপোর্টে না-দেখানোর জন্য নানা মহল থেকে চাপ আসে। স্বাধীন ভাবে হিসেব পরীক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরির জন্য কেন্দ্রকে অডিটরদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার আর্জি জানিয়েছেন তিনি।
সংশ্লিষ্ট মহলের অনেকেরই দাবি, মুদ্রার একটা পিঠই দেখে সকলে। অথচ অডিটরদের সুরক্ষা দেওয়া গেলে বহু সংস্থার আর্থিক নয়ছয় হয়তো বন্ধ করা যাবে কিংবা শুরুতেই আটকে দেওয়া যাবে অনেক কেলেঙ্কারির আশঙ্কা। তাদের অভিযোগ, বহু ক্ষেত্রে শুধু চাপ নয়, রীতিমতো প্রাণনাশের হুমকির মুখে পড়েন তাঁরা। নিরাপত্তার অভাব বোধ করেন। ফলে সুরক্ষা নিশ্চিত না-করলে ঠিক পথে থেকে কাজ করা অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে।
এ দিন কলকাতায় আইসিএআইয়ের আঞ্চলিক কাউন্সিল আয়োজিত এক সভার শেষে শেখরও বলেন, ‘‘প্রকৃত অর্থে স্বাধীন ভাবে অডিটের ক্ষেত্রে বহু সমস্যা রয়েছে।’’
আরও পড়ুন: ৫ শতাংশেই বৃদ্ধি, বলছেন প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা
কী ধরনের সমস্যা? শেখরের উত্তর, ‘‘সব খোলাখুলি বলা সম্ভব নয়। শুধু এটুকু বলতে পারি, প্রকৃত অর্থে স্বাধীন ভাবে অডিট করা খুব ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ কিছু বিষয় দেখেও না-দেখার ভান করার জন্য চাপ দেওয়া হয় আমাদের উপরে। বিভিন্ন মহল থেকে চেষ্টা করা হয় যাতে সেগুলি অডিট রিপোর্টে না-আনি আমরা। যা উপেক্ষা করা অনেক সময় অডিটরদের পক্ষে কঠিন হয়।’’
উদ্যোগ
• নথিভুক্ত সংস্থার আর্থিক অনিয়ম এবং বেআইনি লেনদেন সম্পর্কে তথ্য পাওয়ার জন্য নতুন হুইসলব্লোয়ার (গোপন অভিযোগকারী) নীতি আনতে বছর খানেক আগেই উদ্যোগী হয় বাজার নিয়ন্ত্রক সেবি।
• অডিটর ও সংস্থার স্বাধীন ডিরেক্টরেরা যাতে বিনা ঝুঁকিতে হিসেবের গরমিল সংক্রান্ত তথ্য সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রককে জানাতে পারেন, তার সংস্থান ছিল সেবির প্রস্তাবিত বিধিতে।
• সেই সূত্র ধরেই সম্প্রতি সংস্থার আর্থিক অনিয়ম ও বেআইনি লেনদেনের হদিস পেতে নতুন নজরদারি ব্যবস্থা
(ভিজ়িল মেকানিজ়ম) এনেছে কেন্দ্র। তা কোম্পানি আইনের আওতায় রয়েছে।
একের পর এক আর্থিক কেলেঙ্কারির সূত্র ধরে হালে প্রশ্ন উঠেছে অডিট সংস্থাগুলির ভূমিকা নিয়ে। আতসকাচের তলায় এসেছে পিডব্লিউসি, আর্নস্ট অ্যান্ড ইয়ং, ডেলয়েট, কেপিএমজি-র মতো সংস্থা। সত্যম কেলেঙ্কারির পরে নথিভুক্ত সংস্থার হিসেব অডিটের ক্ষেত্রে ২০১৮ সালে পিডব্লিউসি-র শাখা সংস্থাগুলির উপরে জারি হয় দু’বছরের নিষেধাজ্ঞা। আগামী এপ্রিল পর্যন্ত আর্নস্ট অ্যান্ড ইয়ংয়ের এক সংস্থার উপরে চেপেছে নিষেধ। সম্প্রতি আইএল অ্যান্ড এফএস কেলেঙ্কারিতে অডিটের নিয়ম ভাঙার অভিযোগ উঠেছে ডেলয়েট ও কেপিএমজি স্বীকৃত সংস্থার বিরুদ্ধেও।
এ দিন অবশ্য শেখরের দাবি, এমন একটি বিধিবদ্ধ ব্যবস্থা চালু করা হোক, যাতে হিসেবের গোলমাল সংক্রান্ত সত্যিটা সামনে আনা নিয়ে অডিটরদের কোনও মহল থেকে হুমকি দেওয়া হলে বা তাঁদের উপরে আক্রমণ হলে পুলিশ ও সরকার যেন দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারে।
শেখরের ওই মন্তব্য বিশেষ করে সাধারণ অডিটের (বিশেষ বা ফরেন্সিক নয়) ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। আইসিএআইয়ের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের সদস্য দেবাশিস মিত্র জানান, সাধারণ অডিটের ক্ষেত্রে অডিটরদের কাজ করতে হয় সংশ্লিষ্ট সংস্থা যে সব নথি দেয়, তার উপর নির্ভর করে। সেখানে আইন অনুসারেই তদন্তমূলক অডিটের সুযোগ কম। যে সুযোগ ফরেন্সিক অডিট বা বিশেষ অডিটের ক্ষেত্রে রয়েছে অডিটরদের। দেবাশিসবাবুর দাবি, ‘‘তবে হিসেবের মোটামুটি সত্যিকারের একটা ছবিই আমরা অডিট রিপোর্টে তুলে ধরতে চাই।’’
এ দিন সভায় ডেপুটি কনট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল ভেঙ্কটেশ মোহন অডিটরদের ডিজিটাল ব্যবস্থা সম্পর্কে দক্ষতা অর্জনের পরামর্শ দিয়েছেন। বলেছেন, হিসেব রাখার পুরো ব্যবস্থাই আগামী দিনে ডিজিটাল পদ্ধতিতে হবে। তাই বিষয়টি আয়ত্তে আনা জরুরি। ভেঙ্কটেশের বার্তা, আর্থিক হিসেব পরীক্ষার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সংস্থা পরিবেশ ও সামাজিক কর্তব্য পালন করছে কি না, তা-ও দেখতে হবে অডিটরদের। সময়ের চাহিদা মেনেই জোর দিতে হবে তাতে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy