গত শুক্রবার ৬২৯ পয়েন্ট উঠে সেনসেক্স সপ্তাহ শেষে পৌঁছে গিয়েছে ৬২,৫০২ অঙ্কে। প্রতীকী চিত্র।
গত শুক্রবার ৬২৯ পয়েন্ট উঠে সেনসেক্স সপ্তাহ শেষে পৌঁছে গিয়েছে ৬২,৫০২ অঙ্কে। সর্বকালীন উচ্চতা ৬৩,২৮৪ (ছুঁয়েছিল গত বছরের ১ ডিসেম্বর) থেকে সেটি এখন আর মাত্র ৭৮২ পয়েন্ট দূরে। বাজারে তেজি ভাব বজায় থাকলে চলতি সপ্তাহেই এই সূচককে নতুন শিখরে পা রাখতে দেখা যেতে পারে।
কয়েক সপ্তাহ ধরে দেশের একটি বড় অংশে তাপপ্রবাহ চলা সত্ত্বেও আবহাওয়া দফতর এ বার স্বাভাবিক বর্ষার (দীর্ঘ মেয়াদে গড়ে ৯৬% থেকে ১০৪% বৃষ্টিপাত) পূর্বাভাস দিয়েছে। এই খবরেই তেতে উঠেছে শেয়ার বাজার। বিভিন্ন শেয়ারের দাম অনেকটা করে বেড়ে ওঠায় অবশ্য লগ্নিকারীদের মুনাফা ঘরে তোলার তাগিদে বিক্রির চাপও আসতে পারে। সে ক্ষেত্রে ছোট মেয়াদে সূচক ওঠানামা করবে। তবে বড় মেয়াদে যে সেনসেক্স, নিফ্টির মতো ভারতের অন্যতম প্রধান দুই সূচক অনেক দূর যাবে, সে ব্যাপারে বেশিরভাগই আশাবাদী। আপাতত সকলের নজর বুধবার, ৩১ মে-র দিকে। ওই দিন বেরোবে গত অর্থবর্ষ (২০২২-২৩) এবং তার চতুর্থ ত্রৈমাসিকে (জানুয়ারি-মার্চ) আর্থিক বৃদ্ধির হার। গোটা অর্থবর্ষের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (জিডিপি) বৃদ্ধি ৭ শতাংশের পূর্বাভাস ছাপাতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেছে অনেক উপদেষ্টা সংস্থা। জানুয়ারি-মার্চেও প্রত্যাশার বেশি বৃদ্ধির অনুমান নিয়ে চর্চা চলছে। বাস্তবে অর্থনীতির অভিমুখ বুঝতে বেশি দেরি নেই। আশা মিলে গেলে শেয়ার বাজার লাফাতে পারে উচ্ছ্বাসের লগ্নিতে ভর করে। গড়তে পারে নজির।
আন্তর্জাতিক শেয়ার বিশেষজ্ঞ ক্রিস উড মনে করেন, সেনসেক্সের ১ লক্ষ স্পর্শ করা শুধু সময়ের অপেক্ষা। তাঁর ধারণা, সূচকটি এই উচ্চতায় উঠতে পারে আগামী ৫ বছরের মধ্যেই। তবে এই উত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে আগামী বছর সাধারণ লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের।
মার্চ এবং এপ্রিল, পর পর দু’মাস খুচরো বাজারে জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির হার কমার ফলে তা নেমে এসেছে ৪.৭০ শতাংশে। ভাল বৃষ্টি হলে মূলত খাদ্যপণ্যের হাত ধরে দাম বৃদ্ধির চাপ আরও কমে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কেরও আশা, মে মাসে এই হার সম্ভবত আরও নামবে। তবে তা প্রকাশের আগেই ৬ থেকে ৮ জুন বৈঠকে বসছে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের ঋণনীতি কমিটির বৈঠক। এপ্রিলে তারা সুদের হার বাড়ায়নি। আশা, এ বারও তা স্থির রাখার পথেই হাঁটা হবে। বরং মূল্যবৃদ্ধি এখনকার মতো মাথা নামাতে থাকলে সুদ কমানোর প্রশ্ন উঠবে। সেটা হলে, অর্থনীতিতে চাহিদা আরও চাঙ্গা হবে। যা উস্কে দিতে পারে আগামী দিনে জিডিপি বৃদ্ধির হারকে। সুদের হার আর বাড়বে না বরং তা কমতে পারে— এই সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখেই ঋণপত্রের বাজারে বন্ড ইল্ড নেমে এসেছে ৭ শতাংশের আশেপাশে।
সারা দেশের সমস্ত ব্যাঙ্কে এখন ২০০০ টাকার নোট জমা এবং বদল চলছে। এই নোট প্রত্যাহারের কিছুটা প্রভাব থাকবে ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা তথা গোটা অর্থনীতির উপরে। মার্চের শেষে বাজারে যে পরিমাণ ২০০০ ছিল, তার মোট মূল্য ৩.৬২ লক্ষ কোটি টাকা। এটা বাজারে থাকা সব টাকার নোটের মোট মূল্যের ১০.৮%। অনুমান, ২০০০-এর নোটের প্রায় পুরোটাই সেপ্টেম্বরের মধ্যে চলে আসবে ব্যাঙ্কের ঘরে। এতে তাদের হাতে নগদের পরিমাণ অনেকটা বেড়ে যাবে। ফলে কোনও কোনও ব্যাঙ্ক-কে জমার উপর সুদের হার বাড়িয়ে আর আমানত টানতে হবে না। বরং নির্দিষ্ট কিছু মেয়াদে সুদ কমানোর কথা ভাবতে পারে কেউ কেউ। মূল্যবৃদ্ধির হার কমতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে সুদ কমানোর কথা ভাবতে পারে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কও। এতে চাহিদা, উৎপাদন এবং কর্মসংস্থান মাথা তুলবে।
বিভিন্ন সংস্থার গত অর্থবর্ষ এবং জানুয়ারি-মার্চের আর্থিক ফল প্রকাশ একদম শেষ পর্যায়ে। তাক লাগানো ফলাফল উপহার দিয়েছে ভারতীয় স্টেট ব্যাঙ্ক। দেশের বৃহত্তম এই ব্যাঙ্কের ত্রৈমাসিক নিট মুনাফা ৮৩% বেড়ে পৌঁছে গিয়েছে ১৬,৬৯৪ কোটি টাকায়। গোটা বছরে লাভ ছাড়িয়েছে ৫০,০০০ কোটি টাকা। এই ফলাফলের সুবাদে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির মোট মুনাফা ১ লক্ষ কোটি টাকা অতিক্রম করেছে। অন্য দিকে, দেশের বৃহত্তম জীবন বিমা সংস্থা এলআইসি-র ত্রৈমাসিক মুনাফা ৪৬৬% বেড়ে উঠে গিয়েছে ১৩,৪২৮ কোটি টাকায়।
তবে ফলাফলে কিছুটা হতাশ করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল এবং গ্যাস সংস্থা ওএনজিসি। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষের শেষ ত্রৈমাসিকে এই সংস্থার নিট লাভ ৫৩% কমে গিয়েছে। তা দাঁড়িয়েছে ৫৭০১ কোটি টাকা। গোটা বছরে লাভ ৪% কমে হয়েছে ৩৮,৮২৯ কোটি। ফলাফলের মরসুম শেষ হওয়ার পরে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে শুরু হবে কর্পোরেট সংস্থাগুলির বার্ষিক সাধারণ সভা এবং তার পরে ডিভিডেন্ড বণ্টনের পালা।
(মতামত ব্যক্তিগত)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy