সঙ্গে ১২-১৫টা কাঠের বাক্স। যার মধ্যে ঝাঁঝরি লাগানো সাত-আটটা পাটাতনে মৌমাছিদের বাসা। সেই বাক্স নিয়েই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে চলে মধু সংগ্রহ। কিন্তু এ বছরে প্রথমে লকডাউনে বন্ধ ছিল কাজ। তার পরে আমপানের ধাক্কায় গৃহহীন হয়েছেন বহু মৌমাছি পালক। ঝোড়ো হাওয়ায় গাছ-বাড়ি ভেঙে পড়ে বা জলের তোড়ে নষ্ট হয়েছে গিয়েছে বাক্সও। উড়ে গিয়েছে হাজার-হাজার মৌমাছি। ফলে বিপুল ক্ষতির মুখে পড়েছেন নদিয়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার মধু সংগ্রহকারীদের বড় অংশ। এই অবস্থায় কেন্দ্রের কাছে আর্থিক সাহায্য চেয়ে খাদি ভিলেজ অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ় কমিশনের (কেভিআইসি) দ্বারস্থ হল পশ্চিমবঙ্গ মৌমাছি পালক সমিতি। সংগঠনের সম্পাদক তরুণ হালদার জানান, কেভিআইসি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।
দেশে পঞ্জাব, হরিয়ানার মতো প্রথম কয়েকটি মধু উৎপাদক রাজ্যের মধ্যেই রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের নাম। যুক্ত প্রায় ১৩,০০০-১৫,০০০ মৌমাছি পালক। তাঁরা যেখানেই যান, সঙ্গে করে নিয়ে যান মৌমাছি সুদ্ধু বাক্স। নির্দিষ্ট অঞ্চলে গিয়ে খোলা হয় সেগুলি। মৌমাছিরা নিজে থেকেই মধু সংগ্রহ করে বাক্সে ফিরে আসে। এ ভাবে এক এক জায়গায় প্রায় দু’তিন মাস ধরে মধু জোগাড় হয়। যার মধ্যে বাঁকুড়া, পূর্ব মেদিনীপুরের জঙ্গলের ইউক্যালিপটাস ছাড়াও সরষে, কালো জিরে, ধনে, তিল, লিচু ও সুন্দরবনের মধুর ভাগই বেশি।
এমনিতে রাজ্যে বছরে মধু সংগ্রহ হয় ২০,০০০-২২,০০০ টন। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও, ভিন্ রাজ্য থেকে খদ্দেররা এসে পাইকারি দরে তা কিনে নিয়ে যান। অসংগঠিত ক্ষেত্র বলে বছরে মধু কেনাবেচায় কত টাকা লেনদেন হয় তার ঠিক তথ্য থাকে না। তবে সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, এ বছর যা অবস্থা, তাতে উৎপাদন ৫০০০-৬০০০ টন কমতে পারে। তার উপরে একটা বাক্স তৈরি করতে গড়ে ৫০০০-৬০০০ টাকা লাগে। কিন্তু ঝড়ে ক্ষতির জেরে সেই সামর্থ্য অনেকেরই নেই। এই পরিস্থিতিতে মৌমাছিদের নতুন ঘর বানিয়ে কাজ শুরু করতে কেভিআইসির কাছে চিঠি দিয়েছেন মধু সংগ্রহকারীরা।
তরুণবাবুর দাবি, এক একজন ছোট-মাঝারি সংগ্রহকারীর গড়ে ৪০,০০০-৫০,০০০ টাকা ক্ষতি হয়েছে। অনেকের ঘরে আর মৌমাছিও নেই। তাঁর অভিযোগ, মৌমাছি পালকেরা কখনওই মধুর ন্যায্য দাম পান না। তাই তাঁদের হাতে ব্যবসা চালানোর পুঁজি বা সঞ্চয় থাকে না। ফলে ঝড়ে যে ক্ষতি হয়েছে, তাতে সরকারি অনুদান না-পেলে অনেকেই মধু সংগ্রহের কাজ ছেড়ে দিতে বাধ্য হবেন। সেই কারণেই দ্রুত সাহায্য চেয়েছেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy