Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪

বিপদ সামনেই, বার্তা নির্মলাকে

শিক্ষকের ভূমিকায় পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। বোঝাচ্ছেন ‘ফিলিপ্‌স কার্ভ’। মূল্যবৃদ্ধির হারের সঙ্গে বেকারত্বের সম্পর্ক। স্বাভাবিক নিয়মে প্রথমটি বাড়লে দ্বিতীয়টি কমে।

আলোচনা: রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের সঙ্গে প্রাক্‌-বাজেট বৈঠক কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের। উপস্থিত রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র (ডান দিকে)। পিটিআই

আলোচনা: রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের সঙ্গে প্রাক্‌-বাজেট বৈঠক কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের। উপস্থিত রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র (ডান দিকে)। পিটিআই

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৫:১০
Share: Save:

যেন অর্থনীতির ক্লাস চলছে!

শিক্ষকের ভূমিকায় পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। বোঝাচ্ছেন ‘ফিলিপ্‌স কার্ভ’। মূল্যবৃদ্ধির হারের সঙ্গে বেকারত্বের সম্পর্ক। স্বাভাবিক নিয়মে প্রথমটি বাড়লে দ্বিতীয়টি কমে।

মনোযোগী ছাত্রদের মতো বাকি রাজ্যের অর্থমন্ত্রীরা শুনছেন। অমিতের আসল লক্ষ্য অবশ্য কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। তাঁকে ‘স্ট্যাগফ্লেশন’ সম্পর্কে সাবধান করছেন তিনি। বোঝাচ্ছেন তার বিপদ। বলছেন, ভারতের অর্থনীতি কখনও যে বিপদের মুখোমুখি হয়নি, আগামী বাজেট করতে গিয়ে নির্মলা দাঁড়িয়ে তারই সামনে। যার নাম ‘স্ট্যাগফ্লেশন’।

বাজেটের প্রস্তুতি পর্বে রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের মত জানতে বৈঠক ডেকেছিলেন নির্মলা। কিন্তু সেখানে তাঁকেই কার্যত অর্থনীতির তত্ত্ব শেখালেন অমিতবাবু। সঙ্গে যোগ দিলেন অর্থনীতির প্রাক্তন অধ্যাপক, কেরলের অর্থমন্ত্রী টমাস আইজ্যাক।

শুধু ‘ক্লাস’ নেওয়া নয়। অর্থনীতির ঝিমুনি কাটাতে আজ পশ্চিমবঙ্গ, কেরলের পাশাপাশি বিহারের অর্থমন্ত্রীও দাবি তুলেছেন, আগামী অর্থবর্ষে রাজ্যের রাজকোষ ঘাটতি ৪% পর্যন্ত আলগা করতে দেওয়া হোক। বড় সংখ্যক রাজ্যের অর্থমন্ত্রীরা সমর্থন করেন তাঁদের। বাজেট শৃঙ্খলা সংক্রান্ত এফআরবিএম আইন অনুযায়ী, রাজ্যের রাজকোষ ঘাটতি ৩ শতাংশের মধ্যে বেঁধে রাখতে হয়। কিন্তু অমিতবাবু যুক্তি ‘‘কেন্দ্রের তো ইচ্ছেমতো ধার করার ক্ষমতা আছে। টাকা ছাপানোর সুযোগ আছে। কিন্তু রাজ্যের ভাঁড়ারে টান পড়ছে। অর্থনীতির শ্লথ গতির ফলে কেন্দ্রের কর আদায় কমছে। ফলে কেন্দ্রীয় করের

ভাগ হিসেবে রাজ্য যে টাকা পায় কমছে তা-ও। পশ্চিমবঙ্গই এপ্রিল-নভেম্বরে কেন্দ্রীয় করের ভাগ বাবদ ৮৯৩ কোটি কম পেয়েছে। এতে সামাজিক পরিকাঠামো খাতে ব্যয় কমছে।’’

শুধু রাজ্যগুলির রাজকোষ ঘাটতি নয়, কেন্দ্রের ঘাটতিও লক্ষ্যমাত্রা ছোঁবে কি না, তা নিয়ে সংশয় গভীর হয়েছে। এই অর্থবর্ষে ওই লক্ষ্য ৩.৩%। অথচ কর্পোরেট কর ছাঁটায় সরকার হারাবে ১.৪৫ লক্ষ কোটি টাকার রাজস্ব আয়। তবে অর্থনীতিবিদদের মত, বৃদ্ধির হার বাড়াতে ঘাটতির রাশ কিছুটা আলগা করতেও সমস্যা নেই।

দিন দুয়েক আগেই মোদী সরকারের দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে এসেছে আইএমএফের মুখ্য অর্থনীতিবিদ গীতা গোপীনাথের হুঁশিয়ারি, আরও কমানো হতে পারে ভারতের বৃদ্ধির পূর্বাভাস। আজ সরকারি সূত্রের দাবি, এই পরিস্থিতিতে বৃদ্ধির চাকায় গতি আনাকেই অগ্রাধিকারের তালিকায় রাখছে অর্থ মন্ত্রক। আর্থিক শৃঙ্খলা আইনে সুযোগ আছে, ঘাটতি ৩ শতাংশে কমানোর লক্ষ্য ২০২০-২১ সাল পর্যন্ত পিছোনোর। ঘাটতি যথাসম্ভব কম রাখার চেষ্টা হবে। কিন্তু বৃদ্ধির মাথা তোলা বেশি জরুরি।

কেরলের অর্থমন্ত্রী আইজ্যাক বলেন, ‘‘চলতি বছরে রাজ্যের খরচে ছাঁটতে হয়েছে। অর্থনীতির মন্দার এ এক বিপজ্জনক ফল। যাতে আর্থিক বৃদ্ধির হার আরও কমবে।’’ অমিত বলেন, ‘‘দরজায় যখন স্ট্যাগফ্লেশন কড়া নাড়ছে, তখন সামাজিক খাতে খরচ কমে গেলে আরও বিপদ।’’

সরকারি পরিসংখ্যানই জানিয়েছে, নভেম্বরে খুচরো মূল্যবৃদ্ধি ৫.৫৪% হয়েছে। অক্টোবরে শিল্পোৎপাদন কমেছে ৩.৮%। জুলাই-সেপ্টেম্বরে বৃদ্ধি ৪.৫ শতাংশে নেমে ছুঁয়েছে ছ’বছরের তলানি। অমিতবাবু নির্মলাকে বুঝিয়েছেন, সাধারণত মূল্যবৃদ্ধির হার বাড়লে বেকারত্ব কমে। কারণ মূল্যবৃদ্ধি বাড়ছে মানে বাজারে চাহিদা বহাল। যা মেটাতে কারখানায় বেশি উৎপাদন হবে। বেকারত্ব কমবে। কিন্তু দেশে এখন মূল্যবৃদ্ধির হার বাড়লেও, কারখানায় উৎপাদন কমছে। বৃদ্ধির হার কমছে। ফলে বেকারত্বের হার আরও বাড়বে। এটাই ‘স্ট্যাগফ্লেশন’।

অমিতবাবুর প্রশ্ন, আমেরিকায় ‘স্ট্যাগফ্লেশন’ এসেছিল তেলের দামের ধাক্কায়। মোদী সরকার অর্থনীতিকে কোন ধাক্কা দিল যাতে ‘স্ট্যাগফ্লেশন’-এর বিপদ দেখা দিল?

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy