Advertisement
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Indian Economy

বিলগ্নির নীতি বদলে ক্ষতি নয় অর্থনীতির, মত বিশেষজ্ঞদের

সরকারি সূত্রের খবর, বিলগ্নির সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে বর্তমানে প্রায় ২০০টি লাভজনক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকেই আরও বেশি করে মুনাফার মুখ দেখাতে চায় মোদী সরকার। সে জন্য বাজেটে ঢেলে সাজানো হতে পারে তাদের পরিচালনা নীতি।

—প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২৪ ০৭:৪৭
Share: Save:

লোকসভা ভোটের কিছু দিন আগে থেকেই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বেসরকারিকরণ নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। নির্বাচনে বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় সেই পথ থেকে তাঁর সরকার পুরোপুরি সরে আসবে কি না, সেই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে বিভিন্ন মহলে। যদিও অর্থনীতিবিদদের অধিকাংশেরই মত, কেন্দ্র পিছোলেও ক্ষতি হবে না অর্থনীতির। তবে এই সিদ্ধান্তের পিছনে ভোটই কারণ হলে আগামী দিনে শ্রম আই সংশোধন-সহ বেশ কিছু বিষয়ের উপরেই প্রশ্নচিহ্ন ঝুলতে পারে পারে বলে ধারণা শিল্প মহলের একাংশের। যদিও অন্য অংশ বলছেন, গত ক’বছরে বিলগ্নির লক্ষ্য পূরণ না হওয়াই এই নীতি বদলের ভাবনার মূল কারণ।

সরকারি সূত্রের খবর, বিলগ্নির সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে বর্তমানে প্রায় ২০০টি লাভজনক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকেই আরও বেশি করে মুনাফার মুখ দেখাতে চায় মোদী সরকার। সে জন্য বাজেটে ঢেলে সাজানো হতে পারে তাদের পরিচালনা নীতি। হাতে নেওয়া হতে পারে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা। বহু ক্ষেত্রে সরকারি আমলাদের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার শীর্ষ পদে বসানো হয়। এ বার পেশাদারদের হাতে সেই দায়িত্ব তুলে দিতে চাইছে কেন্দ্র। সে জন্য উচ্চপদের কাজে দক্ষ করে তুলতে ২.৩ লক্ষ অফিসারকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে তারা। আর এই সমস্ত পরিকল্পনা কার্যকর করার টাকার একাংশ জোগাড়ের জন্য সংস্থাগুলির উদ্বৃত্ত জমি এবং অন্যান্য সম্পদ ভাড়া দিয়ে বা বেচে অর্থের সংস্থান করা হবে।

অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকারের বক্তব্য, ‘‘রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা পুরোপুরি বা আংশিক বেচে অর্থ সংগ্রহ করাই ছিল মোদী সরকারের বেসরকারিকরণ নীতির অন্যতম উদ্দেশ্য। সম্প্রতি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের থেকে তারা ২.১১ লক্ষ কোটি টাকা পেয়েছে। তাই অর্থের জন্য এখনই বিলগ্নিতে জোর দেওয়ার প্রয়োজন ফুরিয়েছে। তা ছাড়া বেসরকারিকরণের পিছনে কেন্দ্রের অন্যতম যুক্তি ছিল যে সংস্থা চালানো সরকারের কাজ নয়। যা ফেলে দেওয়া যায় না। তবে রাজনৈতিক চাপ থাকলেও, ভোটের ফল খারাপ না হলে নীতি বদলের কথা কেন্দ্র আদৌ ভাবত কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।’’

শিল্প মহল অবশ্য নীতি বদলের বিপক্ষে। ভারত চেম্বারের সভাপতি এন জি খেতানের বক্তব্য, “শুধু প্রতিরক্ষার মতো জরুরি কিছু ক্ষেত্র ছাড়া সংস্থা চালানো সরকারের কাজ নয়। এটা বিশ্বজুড়েই স্বীকৃত। কেন্দ্রের কাজ পরিকাঠামো তৈরি ও সুষ্ঠু ভাবে দেশের শাসন ব্যবস্থা পরিচালনা করা। ভোটে আশানুরূপ ফল না হওয়ায় নীতি বদল করতে হলে শ্রম আইন সংশোধনের মতো আরও কিছু ক্ষেত্রে সরকার যে পদক্ষেপ করেছে, সেগুলি থেকেও সরে আসা উচিত। বহু রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা লোকসানে চলছে। বেসরকারিকরণ হলে অনেকগুলিই চাঙ্গা হতে পারে। বেসরকারি হাতে গেলে আরও বাড়তে পারে বহু লাভজনক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার মুনাফা।’’

বিলগ্নি পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়াতেই কেন্দ্র সেই রাস্তা থেকে সরার কথা ভাবছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ অজিতাভ রায়চৌধুরী। তিনি বলেন, “এই নীতি সফল করার বহু চেষ্টা হলেও ফল মেলেনি। শুধু এয়ার ইন্ডিয়াকেই টাটা গোষ্ঠীদের কাছে বিক্রি করা গিয়েছে। জোর করে সংস্থা বেচলে কম দাম পাওয়া যাবে। তার থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে চাঙ্গা করে লাভজনক করে তোলা ভাল উদ্যোগ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Disinvestment Economic Growth
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE