চলতি বাজেটে চারটি ক্ষেত্রের উন্নয়নে মূলত জোর দিয়েছেন নির্মলা। যার মধ্যে একেবারে গোড়াতেই রেখেছেন কৃষিকে। এ দিন ‘প্রধানমন্ত্রী ধনধান্য কৃষি যোজনা’র ঘোষণা করেন নির্মলা। ওই প্রকল্পের মাধ্যমে মূলত জেলাভিত্তিক কৃষির উন্নয়নে জোর দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে ১০০ জেলায় ওই প্রকল্প শুরু হতে চলেছে। বাজেট নথিতে বলা হয়েছে, দেশে বহু জেলায় ফসলের ফলন তুলনামূলক ভাবে কম। সে সব জেলায় উৎপাদন বাড়াতেই ওই যোজনা আনা হয়েছে। রাজ্যের সহযোগিতায় যোজনাটি রূপায়িত করা হবে।
জমির উর্বরতা ধরে রাখতে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ফসলের চাষ করা, পঞ্চায়েত ও ব্লক পর্যায়ে উৎপাদিত ফসল গুদামে রাখার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, উৎপাদন বাড়াতে চাষের জমিতে জলসেচের ব্যবস্থা উন্নত করা, কৃষকদের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণের ব্যবস্থা করাও এই প্রকল্পের লক্ষ্য। সরকার দাবি করেছে যে, এই প্রকল্পের ফলে দেশের প্রায় ১.৭৫ কোটি কৃষক ভবিষ্যতে উপকৃত হবেন।
আন্দোলনরত কৃষকদের অন্যতম দাবি হল, ফসলের ন্যূনতম দামের আইনি স্বীকৃতি। আজ বাজেটে সে নিয়ে সরাসরি কোনও ঘোষণা হয়নি। কিন্তু আগামী ছ’বছরের মধ্যে ডালের ক্ষেত্রে আত্মনির্ভর হওয়ার প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। কৃষকদের থেকে ডাল কিনে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সরকার। আজ নির্মলা জানান, নাফেড এবং এনসিসিএফ-এর মতো কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি আগামী চার বছর ওই প্রকল্পে নথিভুক্ত কৃষকদের কাছ থেকে উৎপাদিত অড়হর, বিউলি ও মুসুর ডাল কিনে নেবে। কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকেরা যাতে ফসলের ন্যূনতম দাম পান, তা ঘুরিয়ে নিশ্চিত করতে চেয়েছে সরকার।
ভোজ্য তেলের ক্ষেত্রেও বিদেশি নির্ভরতা কমিয়ে আত্মনির্ভরতার লক্ষ্যে জাতীয় মিশন হাতে নিয়েছে সরকার। এ ক্ষেত্রেও কৃষকেরা যাতে ফসলের যোগ্য দাম পান, তা নিশ্চিত করবে সরকার। তুলোর উৎপাদন বাড়াতেও আগামী পাঁচ বছরের জন্য একটি যোজনার কথা ঘোষণা হয়েছে। বিশেষ ভাবে জোর দেওয়া হয়েছে উচ্চমানের বীজ সংরক্ষণ ও সেগুলির যথাযথ প্রয়োগের উপরে। রাজ্যগুলির সহায়তায় আনাজ, ফলের উৎপাদন বাড়ানোর সুপারিশও করেছে কেন্দ্র।
কৃষকদের উপর থেকে ঋণের বোঝা কমাতে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ক্ষেত্রে কৃষকদের ঋণ দেওয়ার প্রক্রিয়া আরও সহজ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বাজেটে। কিসান ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ঋণের পরিমাণ তিন লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে পাঁচ লক্ষ টাকা করা হয়েছে। ঋণের পরিমাণ বাড়ানোয় প্রায় ৭.৭০ কোটি কৃষক লাভবান হবেন বলে দাবি। চাষের প্রয়োজনে বাড়তি ঋণ নিতে পারবেন ওই কৃষকেরা। ‘সা-ধন’-এর অধিকর্তা জিজি মাম্মেন জানিয়েছেন, সরকার এই বাজেটে কৃষিক্ষেত্র, গ্রামোন্নয়ণ, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং নতুন উদ্যোগে জোর দিয়েছে। এর ফলে গ্রামীণ কর্মসংস্থান বাড়বে। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের মাধ্যমে গ্রামীণ মানুষের আর্থিক উন্নয়ন গতি পাবে।
আন্দামান ও নিকোবর এবং লক্ষদ্বীপ এলাকায় মৎস্যচাষ এবং সামুদ্রিক খাদ্যের রফতানি বাড়াতে বিশেষ যোজনার ঘোষণা করেছেন নির্মলা। এ ছাড়া ইউরিয়া সারের ক্ষেত্রে স্বনির্ভর হওয়ার লক্ষ্যে অসমের নামরূপে ১২.৭ লক্ষ টন ক্ষমতার একটি কারখানা গড়ার ঘোষণা হয়েছে বাজেটে। বিহারে মাখানার উৎপাদন ও বিপণন বাড়াতে নীতীশ কুমারের রাজ্যে মাখানা বোর্ড গঠনের কথাও বলা হয়েছে বাজেটে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)