কোষাগারে টানাটানির এই বাজারেও রাজ্যের নিজস্ব উদ্যোগ পুঁজি তহবিলের (ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ড) হাতে রয়েছে সাড়ে তিন কোটি টাকা। যাতে তা ব্যবহার করে নতুন ব্যবসা তৈরির পা বাড়াতে পারে কোনও ‘স্টার্ট আপ’ সংস্থা। কিন্তু গত এক বছর ধরে সেই টাকা পড়ে রয়েছে অব্যবহৃত ভাবে। উদ্যোগ পুঁজির চাহিদা থাকা সত্ত্বেও রাজ্য সরকারের ঘর থেকে কেউ তা পায়নি। আর এই ছবি বদলাতেই এ বার সক্রিয় হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি দফতর। তৈরি হচ্ছে ছয় সদস্যের নতুন কমিটি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, সেখানে তথ্যপ্রযুক্তি সচিব এবং আইআইটি-আইআইএমের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের লোকেদের পাশাপাশি থাকবেন তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের প্রতিনিধিরাও। কমিটি তৈরি হলে, পুঁজি ঢালার প্রক্রিয়াও ত্বরান্বিত হবে বলে সরকারি মহলের দাবি।
ভাড়া করা গ্যারাজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘হস্টেল রুম’। মার্কিন মুলুক-সহ উন্নত দুনিয়ায় বেশির ভাগ প্রথম সারির তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাই উঠে এসেছে এমন ‘আঁতুড়ঘর’ থেকে। গুগ্ল কিংবা ফেসবুকের মতো শাণিত মেধা আর উদ্ভাবনী পরিকল্পনার ফসলকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে খুঁজে নিয়ে তাতে বিনিয়োগ করেছে বিভিন্ন উদ্যোগ পুঁজি সংস্থা। কোনও ব্যবসা শুরুর সময় তার ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা বিচার করে একেবারে গোড়াতেই সেখানে টাকা ঢালে যারা। যাতে পরে সেই ব্যবসা বড় হলে, সেখানে নিজেদের অংশীদারি বেচে মুনাফা করা সম্ভব হয়।
এই ‘মডেল’ মাথায় রেখেই মেধা সম্পদকে পুঁজি করে তথ্যপ্রযুক্তিতে বাজি ধরতে ২০০৬ সালে রাজ্যের নিজস্ব ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ড তৈরির পরিকল্পনা দানা বাঁধে। তা কাজ শুরু করে ২০০৮ সালে। পাঁচ কোটি টাকা থেকে ক্রমশ বেড়ে তহবিলের পরিমাণ এখন দাঁড়িয়েছে ২০ কোটিতে। অর্থাৎ, টাকা খরচ করতে পারলে ২০ কোটি টাকা পর্যন্ত সেখানে জোগাবে রাজ্য। কিন্তু সংশ্লিষ্ট মহলের অভিযোগ, প্রাথমিক বরাদ্দ থেকে সাড়ে তিন কোটি টাকাই যেখানে খরচ হয়নি, সেখানে নতুন করে বাড়তি সংস্থানের তো প্রশ্নই নেই। এই ফান্ডের জন্য কমিটি অবশ্য আগে থেকেই ছিল। এ বার তা ঢেলে সাজছে রাজ্য।
রাজ্য মনে করেছিল, এখানে ক্ষুরধার মেধা ও বাজার ধরার উপযুক্ত ব্যবসায়িক পরিকল্পনা রয়েছে। অভাব মূলধনের। আর পুঁজি জোগানোর সেই তাগিদ থেকেই এই ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ড তৈরি করেছিল তারা। কিন্তু সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, আর পাঁচটি সরকারি উদ্যোগের মতো এ ক্ষেত্রেও উদ্দেশ্য মহৎ ছিল। কিন্তু তা ব্যবহারে বাধা হয়েছে লাল ফিতের ফাঁস।
দেশের প্রযুক্তি সংক্রান্ত স্টার্ট আপগুলির প্রায় ২৮ শতাংশেরই শিকড় বেঙ্গালুরুতে। দিল্লিতে ২০%, মুম্বই-পুণে ১৫%। সেখানে কলকাতা-সহ সারা পূর্বাঞ্চলে তা মাত্র ১০%। কিন্তু তা হলে যে রাজ্যে ‘স্টার্ট আপ’ বা নয়া ব্যবসার সংখ্যা এত কম, সেখানে এ ধরনের সরকারি তহবিল অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে কেন? সরকারের তরফে যুক্তি, যথেষ্ট উদ্ভাবনী চিন্তা নজরে না-পড়াতেই ঢালা হয়নি উদ্যোগ পুঁজি।
কিন্তু এই যুক্তি মানতে নারাজ তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পমহল। তাদের দাবি, অন্যান্য উদ্যোগ পুঁজি সংস্থা কিন্তু যথেষ্ট সম্ভাবনা খুঁজে পেয়েছে স্থানীয় স্টার্ট আপগুলির মধ্যে। যেমন, চলতি বছরেই কলকাতায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক স্তরের সম্মেলন টাইকন-এর মঞ্চ থেকে মাইক্রোসফট্ ভেঞ্চার্স-এর মতো উদ্যোগ পুঁজি সংস্থা উৎসাহ দেখিয়েছে এ রাজ্যের স্টার্ট আপগুলিকে নিয়ে। ইতিমধ্যেই কলকাতার সংস্থা টুকিটাকি ডট কম-এ পুঁজিও ঢেলেছে তারা। তা ছাড়া, পুঁজির জন্য হন্যে স্টার্ট আপ সংস্থাগুলির অভিযোগ, সরকারি তহবিল থেকে টাকা পেতে বহু সময় নষ্ট হয়। এ ধরনের প্রযুক্তি-নির্ভর ব্যবসায় যা বরদাস্ত করা শক্ত। রাজ্যের দাবি, নতুন এই স্ক্রিনিং কমিটি এক বার তৈরি হয়ে গেলে সেই সমস্যা মিটবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy