আর্থিক স্বাধীনতা আর নেট-প্রযুক্তির ডানায় ভর করে এখন একা বাড়ি কেনার ‘আকাশ ছুঁতে’ চাইছেন অনেক মহিলা। পরিসংখ্যান থেকেই স্পষ্ট যে, বাড়ি বা ফ্ল্যাট কিনতে আগ্রহী এই ‘সিঙ্গল উওম্যান’ বা একক মহিলা ক্রেতার সংখ্যা বাড়ছে তরতরিয়ে। ফলে ক্রমশ তৈরি হচ্ছে আস্ত এক নতুন বাজার। আর সেই বাজারের দখল নিতে ওই মহিলাদের পছন্দ-অপছন্দ মাথায় রেখে প্রকল্পের নীল নকশা তৈরিতে পিছপা হচ্ছে না নির্মাণ সংস্থাগুলি।
কেউ নিজের শহরেই মাথার উপর ছাদের জোগাড় করতে চান। কেউ চাকরিসূত্রে অন্য শহরে এসে সেখানে খুঁজছেন মাথা গোঁজার ঠাঁই। কেউ আবার ফ্ল্যাট বা বাড়ি কিনতে চান ভবিষ্যতের বিনিয়োগ হিসেবে। সঙ্গে পেতে চান গৃহঋণের সুদে করছাড়ের সুবিধাও। এমন নানা প্রয়োজন থেকেই ফ্ল্যাট বা বাড়ির চাহিদা বাড়ছে একা নারীদের মধ্যে। তাঁরা বিভিন্ন পেশার, বিভিন্ন বয়সের এমনকী সমাজের বিভিন্ন স্তরেরও।
এক বিনিয়োগ সংস্থার সমীক্ষা অনুযায়ী, চলতি বছরের মধ্যেই দেশের আর্থিক প্রগতির ১২ শতাংশ হবে মেয়েদের হাত ধরে। আর ২০২৫ সালের মধ্যে তা দাঁড়াবে ২৫ শতাংশ। এই সমীক্ষার একটি প্রতিফলন ইতিমধ্যেই দেখা যাচ্ছে দিল্লি, মুম্বই, চেন্নাই, বেঙ্গালুরু, কলকাতার মতো বড় শহরে। বাড়ির নতুন ক্রেতাদের মধ্যে অনেকেই সেখানে একা মহিলা। একই ছবি স্পষ্ট হতে শুরু করেছে জয়পুর, চণ্ডিগড়, ইনদওরের মতো দ্বিতীয় স্তরের শহরেও। ফলে সে কথা মাথায় রেখেই এখন ঘুটি সাজাচ্ছেন আবাসন নির্মাতারা।
রিয়েল এস্টেট বিশেষজ্ঞ সংস্থা কুশম্যান অ্যান্ড ওয়েকফিল্ডসের অন্যতম মুখপাত্র অভিজিৎ দাস বলেন, ‘‘কাজের জায়গায় মহিলাদের সংখ্যা বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে তাঁদের রোজগারের অঙ্ক। ফলে এখন বাড়ি কেনার মতো গুরুত্বপূর্ণ ও খরচসাপেক্ষ সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধা করছেন না তাঁরা। তা ছাড়া, লগ্নির লাভজনকতা ও নিরাপত্তার বিচারেও বাড়ি বেশ আকর্ষণীয়।’’
রোজগারের পাশাপাশি রয়েছে বদলে যাওয়া জীবনধারাও। বিয়ের আগে, পরে কিংবা বিয়ে না-করলে, সব অবস্থাতেই অনেক সময়ই এখন অন্য শহরে চাকরি করতে যাচ্ছেন মহিলারা। কিন্তু একা মেয়ে হিসেবে বাড়ি ভাড়া পেতে নানা সমস্যা আর অপ্রিয় প্রশ্নের মুখে পড়তে বাধ্য হন তাঁরা। ফলে তা এড়াতে এঁদের অনেকেই এখন চেষ্টা করছেন নিদেন পক্ষে এক কামরার একখানা ফ্ল্যাট কিনে ফেলতে। জামশেদপুর থেকে কলকাতায় চাকরি করতে এসে এই সমস্যা পোহাতে হচ্ছিল সুতপা রায়কে। শেষমেশ ছোট একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন তিনি। তাঁর কথায়, বাড়ি কেনার পরিকল্পনা ছিলই। পরিস্থিতির চাপে সেই সিদ্ধান্ত দ্রুত নিতে হয়েছে।
সুতপার মতো এই একা মহিলা ক্রেতাদের টানতে এখন বিশেষ ভাবে প্রকল্প পরিকল্পনা করছে অনেক আবাসন সংস্থা। যেমন, বিশেষ ভাবে জোর পাচ্ছে নিরাপত্তা ও যাতায়াতের সুবিধার বিষয়টি। সিদ্ধা গোষ্ঠীর সঞ্জয় জৈন, প্রাইমার্কের সিদ্ধার্থ পাসারি থেকে শুরু করে জৈন গোষ্ঠীর ঋষি জৈন— সকলেরই দাবি, বাড়ি তৈরির সময় মাথায় রাখা হচ্ছে মহিলাদের সুবিধা-অসুবিধা। দেখা যাচ্ছে, বিপণি, জিম, সুইমিং পুলের মতো সুবিধা পেতে অনেকেই একটু বেশি দাম দিতে পিছপা নন। অনেকে আবার শুরু থেকেই ফ্ল্যাট তৈরি করতে চান নিজেদের প্রয়োজন মাফিক। তাই সেই বিষয়টিও নির্মাণ সংস্থাগুলিকে মাথায় রাখতে হবে বলে মনে করেন আর এক বিশেষজ্ঞ সংস্থা জোনস লাং লাসেলের এক মুখপাত্র।
নতুন গজিয়ে ওঠা এই বাজারের দিকে নজর রাখছে ব্যাঙ্কগুলিও। অধিকাংশ ব্যাঙ্কই গৃহঋণের সুদে মহিলা ক্রেতাদের বিশেষ ছাড় দেয়। ব্যাঙ্কগুলির দাবি, তা নিতে এগিয়ে আসছেন অনেক বেশি মহিলা ক্রেতা।
মহিলাদের নামে বাড়ি কেনার চল নতুন নয়। কিন্তু তা কেনা হয় নিছকই কাগজে-কলমে। আসল মালিক হন গৃহকর্তাই। ব্যাঙ্ক এবং নির্মাণ সংস্থাগুলির দাবি, সেই ছবি এখন বদলে দিচ্ছেন একক মহিলা ক্রেতারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy