ঢাকার রাস্তায় মানুষের ঢল। নিজস্ব চিত্র
অগ্নিস্নানে শুদ্ধ হয়ে ওঠার প্রত্যাশার সঙ্গে বাঙালির এবারের বৈশাখ আবাহনে মিশেছে প্রতিবাদের সুর। বঙ্গাব্ধ ১৪২৪ এর অভূতপূর্ব সকালে বাঙালিত্বের শপথই শুধু শোনা যায়নি, সুর বেজেছে অসাম্প্রদায়িকতারও। ডাক শোনা গেছে জাগরণের।
রাজধানী ঢাকায় ছায়ানটের ৫০তম বর্ষবরণ কর্মসূচির প্রভাতেই সাংস্কৃতিক জাগরণের ডাক দেওয়া হল। পাঠ হল মৌলবাদ রুখবার শপথ। রমনার বটমূলে ফিরে ফিরে এলেন রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, লালন, অতুলপ্রসাদ কিংবা সলিল চৌধুরীরা।
‘আলোকের এই ঝর্ণাধারায় ধুইয়ে দাও’ গানে বাংলাদেশি সময় সকাল ৬টা ৩০-এ শুরু হয় অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানটি বার বার ফিরে গেছে ৫০ বছর আগে ১৯৬৭-র সকালে। পাকিস্তানি রাষ্ট্রীয় সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে বাঙালির রাজনৈতিক যুদ্ধের হাতিয়ার হিসেবেই ১৯৬৭তে রমনায় প্রথম বর্ষবরণ করেছিল ছায়ানট। সেই সংগ্রামের ধারায় স্বাধীন ভূখণ্ড পাওয়ার চার দশক পর অনেক অর্জনের মধ্যেও জেগেছে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প। তাই আবারও নতুন করে জেগে ওঠার ডাক। বাংলাদেশের সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর পাঠ করলেন, ‘শ্রদ্ধেয় পিতা ক্ষমা করবেন, যদি অপরাধ হয়। আমরা কি আজও দিতে পারলাম মানুষের পরিচয়!’
মানুষ আর মানবতার কথাই শুনলেন রমনায় সকালের আয়োজনে যোগ দেওয়া হাজারো মানুষ। মঞ্চে প্রায় চারশো শিল্পী গানে পাঠে প্রতিবাদের রঙ আঁকলেন। বলা হয়ে থাকে, সংকটেই তাঁর অতীত থেকে সাহস নেয় মানুষ। ২০০১-এর বোমা হামলা থামিয়ে দিয়েছিল যে গান, ‘এ কি অপরুপ রূপে মা তোমার’- সেই গান গাওয়া হল আবার, এই সকালে।
আরও পড়ুন: বাঙালির পাতে মাছের পার্বণ
গানে গানে বর্ষবরণ। নিজস্ব চিত্র
আনন্দ, আত্মপরিচয়ের সন্ধান আর মানবতার কথা সাজিয়ে তিন পর্বে সাজানো হয়েছিল ছায়ানটের বর্ষবরণের ৫০ বছরের অভিযাত্রা। সেই যাত্রা অটুট আছে। অটুট থাকবে, বললেন ছায়ানট সভাপতি সনজীদা খাতুন। তাঁর কথায়, ‘আমাদের আর এক স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দিতে হবে। এখানে অস্ত্র নয়, সংস্কৃতি দিয়ে আমরা রুখব অন্ধকার’।
একই শপথ শোনা গেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা অনুষদের আয়োজনে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’য়।
বিশাল বাঘের মুখ, সমৃদ্ধির প্রতীক হাতি আর টেপা পুতুলের সেই শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দিয়েছে আঁধার ফুঁড়ে বেরিয়ে আসা নতুন সূর্যমুখ। সেই সূর্যের আলোয় উগ্রবাদের কালোকে রোখার ডাক দিয়ে হাজারো মানুষের মিছিল হেঁটেছে শাহবাগ মোড়, রূপসী বাংলা, শাহবাগ হয়ে চারুকলা।
‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্য সুন্দর’- প্রতিপাদ্যে শোভাযাত্রায় আরও স্থান পেয়েছে বাংলাদেশের সমুদ্র বিজয়, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে শিল্প কাঠামো। সামনে পিছনে ঢাকের বাদ্যের তালে তালে নৃত্য, হাতে বাহারি মুখোশ আর নানা লোকজ মোটিফে ফুটে উঠেছিল বাংলার ইতিহাস আর ঐতিহ্য।
তবে সব ঘুচিয়ে সব আয়োজনেই থেকেছে আঁধার কাটানোর শপথ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy