আমাদের জীবনটা সত্যিই ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’র গানটার মতো হয়ে উঠেছে। পৃথিবীটা ছোট হতে হতে, মুঠোফোনে বন্দী। বাস্তবের কথোপকথন চলে গিয়েছে ভার্চুয়াল চ্যাটে। রক্ত মাংসের সঙ্গী ছেড়ে মন ধাওয়া করেছে কম্পিউটারের দিকে। প্রবেশ ঘটেছে রোবট সঙ্গীর।
আপাত দৃষ্টিতে রোবট সঙ্গী এমন একটি রোবট যা দরকারি সহায়তা দিতে সক্ষম। এর মানে হল রোবট সহচরের প্রথম লক্ষ্য হল, মানুষকে সাহায্য করা, তা সেটা বন্ধুত্বপূর্ণ এবং আকর্ষক উপায়ে হতেই পারে।
বর্তমানে রোবট সঙ্গীর বিভিন্ন রকমের। কোনওটা প্রাণীর মতো দেখতে। যেমন আইবো, পারো এবং মফলিন। এই রোবট গুলি মানসিক আরাম থেকে তাৎক্ষণিক মজা প্রদান করতে পারে। কিছু রোবট হল একদম মানুষের মতো যেমন পেপর, সোফিয়া এবং পাইলো। এই রোবট গুলি মানুষের মতো ভাষা, মুখের অভিব্যক্তি বা অঙ্গভঙ্গি ব্যবহার করে মানুষের সাথে কথা বলতে পারে।
কেন দরকার রোবট সঙ্গী ?
রোবট সঙ্গীরা মানুষের অনেক কাজে স্বাছন্দ এনে দেয়। বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে যেমন দৈনন্দিন কাজকর্মে সহায়তা করতে পারে, তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে পারে, সমস্যা বুঝলে ডাক্তার ডাকতে পারে, এমনকি হারানো উদ্দীপনা প্রদান করতে পারে। এমনই এই রোবট সঙ্গীরা অটিজম আক্রান্ত শিশুদের মানসিক বিকাশে সহায়তা করতে পারে। এমন শিশু ও তাদের বাবা-মা বা থেরাপিস্টদের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসাবে কাজ করতে পারে। প্রতিবন্ধীদের শারীরিক সহায়তা দিতে পারে। আর তা ছাড়া দিতে পারে মানসিক সান্ত্বনা, যেটা ইঁদুর দৌড়ের জীবনে ধীরে ধীরে কমে আসছে।
ঝুঁকি কিন্তু আছে
প্রযুক্তিগত সমস্যার কথা ছেড়ে দিলেও নৈতিক আর সামাজিক ঝুঁকিটা থেকেই যাচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে, আমরা কী ভাবে নিশ্চিত করব যে, রোবট সঙ্গীরা গোপনীয়তাকে সম্মান করবে। খারাপ সময়ে রোবট সঙ্গীর কাছে গড়গড় করে বলে ফেলা কথা, অন্য কেউ খারাপ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করবে না তো? নিজে থেকেই ব্ল্যাকমেলের হাতিয়ার তুলে দেওয়া হবে না তো? অথবা কী ভাবে নিশ্চিত করব যে, রোবট সঙ্গীরা মানুষের সম্পর্ককে প্রতিস্থাপন করবে না বা তৈরি করে দেবে না, এমন নির্ভরতা, যেটা কাটানো হয়ে পড়বে আর শক্ত? বিশেষ করে, যেখানে ‘লাভট’-এর মতো রোবট সঙ্গীকে শারীরিক ভাবেও জড়িয়ে ধরা যায়!
পারবে কি দূর করতে একাকীত্ব?
একাকীত্ব এই সময়ে দাড়িয়ে, সত্যিই একটি জটিল সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে। ক্রমাগত বেড়ে টলা আত্মহত্যা, তার এক বড় উদাহরণ। একাকীত্ব নিয়ে আসে বিষণ্ণতা, উদ্বেগ। বন্ধুত্ব একাকীত্বের বিরুদ্ধে লড়াই করার অন্যতম কার্যকর উপায়।
আপাত দৃষ্টিতে রোবট সঙ্গীদের একাকীত্বের একটি সম্ভাব্য সমাধান হিসাবে দেখা যেতে পারে, কারণ তারা এক ধরনের সামাজিক সাহচর্য দিতে পারে। তবে তারা মানুষের বন্ধুত্বকে প্রতিস্থাপন করতে পারে না, সেটা মনে রাখতে হবে।
তাই রোবট সঙ্গীকে মানুষের বন্ধুত্বের বিকল্প না হয়ে পরিপূরক হিসাবে দেখা উচিত। এগুলিকে সামাজিকতা কম করার পরিবর্তে বাড়িয়ে তোলার হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করা উচিত। মানুষের যোগাযোগকে যেন এটা কম না করে, বরং ব্যবহার করা হোক উৎসাহিত করার জন্য।
এই প্রতিবেদনটি 'আনন্দ উৎসব' ফিচারের একটি অংশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy