Advertisement

Associate Partner

Style Partner

Associate Partner

Weddings Partner

Food Partner

Cooch Behar Rajbari Durga Puja

অষ্টমী তিথিতে গভীর রাতে গুপ্ত পূজার মাধ্যমে দেবীকে আজও উৎসর্গ করা হয় নররক্ত

মহারাজ নরেন্দ্রনারায়ণ নিজে মহিষ বলি দিতেন। একবার বাঘ অবধি বলি দিয়েছিলেন। মহারাজ নরেন্দ্রনারায়ণ নিজে মহিষ বলি দিতেন। একবার বাঘ অবধি বলি দিয়েছিলেন। রাজ আমলে বিকেলের দিকে রাজপ্রাসাদ সংলগ্ন মাঠে মহারাজা হাতির পিঠে বসে খঞ্জন বা খঞ্জনা পাখি উড়িয়ে দিতেন। খঞ্জন পাখি যে দিকে উড়ে যেত মহারাজাও সেই দিকে যেতেন।

আনন্দ উৎসব ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২৩ ১৭:৪৮
Share: Save:

পুরাতন ঐতিহ্যে রাজবাড়ি-

কোচবিহার রাজবাড়ির পুজোর সাথে জড়িয়ে রয়েছে মহারাজ বিশ্ব সিংহ, নরনারায়ণ থেকে নৃপেন্দ্রনারায়ণ, কুমার গজেন্দ্র নারায়ণের হাজারও কাহিনি। এ বাড়ির ইতিহাসে কেশব কন্যা সুনীতি দেবী, ইন্দিরা কিংবা গায়ত্রী দেবী জড়িয়েছেন বিভিন্ন সময়ে। এই বাড়ির রাজা নরনারায়ণের অহমরাজকে লেখা চিঠিটি বাংলা গদ্য সাহিত্যের আদি নিদর্শন। ১৮৮৭ সালে বাকিংহাম প্যালেসের আদলে নির্মিত হয় কোচবিহার রাজবাড়ি। যে রাজবাড়ির দায়িত্বে এখন ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ।

রাজা বের হতেন হাতিতে চড়ে-

রাজার আমলে রাজপথে প্রজাদের ঢল নামত প্রায়শই। রাজার দর্শন মিলত সে সময়। বছরের আর পাঁচটা দিনের মতো রাজারা বের হতেন পুজোর সময়ও। শোনা যায়, রাজারা রাজপ্রাসাদ ছেড়ে হাতির পিঠে চড়ে দেবী বাড়ির পুজোয় আসতেন। কোচবিহারের রাজাধিরাজের সঙ্গে আসত রাজসিংহাসন। দেবী বাড়ির রাজসিংহাসনে বসে প্রজাদের মুখোমুখি হতেন কোচবিহারের রাজা। এখন রাজবাড়ি ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের রক্ষণাবেক্ষণে চলে এবং পুজো হয় প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে।

পুজোর পুঁথি-

এ বাড়িতে খাগের কলমে লেখা তাল পাতার কাগজের উপর দেবনাগরী হরফের একটি পুঁথির কথা শোনা যায়। এই পুঁথি ছাড়া কোনও অবস্থাতেই সম্ভব নয় কোচবিহার মহারাজা প্রচলিত কোনও দুর্গাপুজা। এই পুঁথির বয়স ৬০০ থেকে ৬৫০ বছর পুরনো। একসময় এই পুঁথি শোভা বর্ধন করত রাজবাড়ির রাজমাতার নিজস্ব মন্দিরে। পরবর্তী কালে এই পুঁথি সংরক্ষিত হয়ে আছে মদনমোহন বাড়িতে। দুর্গাপুজো, কালীপুজো, মদনমোহনের নিত্যপুজো ছাড়াও জগদ্ধাত্রী, গন্ধেশ্বরী, মহালক্ষ্মী, বিপত্তারিণী এবং মা ভবানী পুজোর নিয়ম-নীতি লিখিতভাবে রয়েছে এই পুঁথিতে।

পুজোর দেবীমূর্তি-

কোচ রাজবংশের কুলদেবী অষ্টধাতুর ভবানী দুর্গা মূর্তির অনুকরণে দূর্গা পুজোর মূর্তিটি তৈরি করা হয়। মা দুর্গার কোচবিহার রাজবাড়ির দুর্গাপ্রতিমাটি একেবারে ভিন্নধারার। এখানে দুর্গার পাশে লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক এবং গণেশের জায়গায় থাকে দুর্গার দুই সহচরী জয়া এবং বিজয়া। দুর্গার বাহন এখানে সিংহ নয়, বাঘ। মায়ের মুখ আজও তৈরি হয়ে আসছে তুফানগঞ্জ মহকুমার চামটা গ্রামে মহারাজাদের নির্দিষ্ট জমির মাটি থেকে। বড় দেবী এবং মদনমোহন বাড়ির পুজো শুরু হয় মহালয়ার দিন থেকে। মহালয়ার দিন ঘট বসে। তার পর থেকে একটানা সাত দিন অর্থাৎ দশমী পর্যন্ত বিভিন্ন রীতিনীতি মেনে পুজো করা হয়। অষ্টমী তিথিতে গভীর রাতে গুপ্ত পূজার মাধ্যমে দেবীকে উৎসর্গ করা হয় নররক্ত। এখনও অষ্টমীর পুজোয় পায়রা, পাঁঠা এবং মহিষ বলি হয়।

বলি প্রথা-

এক সময় পুজোয় হত নরবলি। মহারাজা নরেন্দ্র নারায়ণ তা বন্ধ করে দেন। সে সময় থেকে নরবলির জায়গায় নর-রক্ত উৎসর্গ করার রেওয়াজ শুরু হয়। বলি দেওয়া হয় চালের গুঁড়ো দিয়ে তৈরি মানুষের প্রতীক একটি পুতুলকে। আজও কোচবিহারের কালজানি গ্রামের শিবেন রায়ের পরিবার প্রতি বছর নর-রক্ত দিয়ে থাকে। নবমীতে থাকে অন্নভোগ। বোয়াল মাছ দিয়ে রান্না করা হয় খিচুড়ি, দেওয়া হয় দেবীকে। এ ছাড়া মহারাজা নরেন্দ্রনারায়ণের আমলে তিন দিন বলি প্রথা বজায় ছিল। ছাগ, মহিষ, কচ্ছপ থেকে পাখি বলিও হত। মহারাজ নিজে মহিষ বলি দিতেন। একবার বাঘ অবধি বলি দিয়েছিলেন।

দশমীতে 'হালুয়া পুজো'-

বিজয়া দশমীতে সকালবেলায় বড়দেবী দূর্গা প্রতিমা বিসর্জনের জন্য রাজবাড়ির নিজস্ব যমুনা দিঘিতে নিয়ে যাওয়া হয় , বিসর্জনের আগে পুকুর ঘাটে হালুয়া পুজো হয়। পুজোয় যে রাজকর্মচারী ফুল যোগান দিয়ে থাকে, তাকে বলে হালুয়া। পুজো শেষে প্রতিমা খন্ড খন্ড করে নদীতে বিসর্জন দেওয়া হয় প্রতিমা বিসর্জনের সময় কোচবিহার রাজপরিবারের সদস্যদের দেখা নিষিদ্ধ বলে তারা এই বিসর্জনে অনুপস্থিত থাকেন।

দিকবিজয় উৎসব-

রাজ আমলে বিকেলের দিকে রাজপ্রাসাদ সংলগ্ন মাঠে মহারাজা হাতির পিঠে বসে খঞ্জন বা খঞ্জনা পাখি উড়িয়ে দিতেন। খঞ্জন পাখি যে দিকে উড়ে যেত মহারাজাও সেই দিকে যেতেন যা 'দিক বিজয়' নামে পরিচিত ছিল। খঞ্জন পাখি ছেড়ে দেওয়ার পর রাজপ্রতিনিধি দুয়ারবক্স বা বক্সী দা দিয়ে একটি কুমড়ো বলি দিতেন।

ছবি সৌজন্য: তরুণ মজুমদার

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

অন্য বিষয়গুলি:

Cooch Behar Rajbari Bonedi Barir Durga Puja
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy