Advertisement
E-Paper

ঐতিহ্যবাহী চণ্ডীমণ্ডপেই এখনও হয় শ্রীপুর মিত্রমুস্তাফিদের পুজো

এই পরিবারের নবপত্রিকা গঙ্গাস্নানে যায় না, চণ্ডীমণ্ডপেই তার স্নানপর্ব সারা হয়।পুজোয় এখনও পশুবলি হয়।

বিভূতিসুন্দর ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০২০ ১৫:০৫
Share
Save

ঔরঙ্গজেবের শাসনকালে সুবা বাংলার কোষাধ্যক্ষ হয়েছিলেন উলা-বীর নগরের রামশ্বর মিত্র।জনশ্রুতি, হিসেব সংক্রান্ত একটি গরমিল চিহ্নিত করায় (মতান্তরে হিসেব সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান করায়) তিনি ঔরঙ্গজেবের কাছ থেকে ‘মুস্তৌফি’ উপাধি লাভ করেছিলেন। তাঁরই পুত্র রঘুনন্দন ছিলেন ধর্মপ্রাণ এবং সেকালের একজন প্রসিদ্ধ গণৎকার। মাঝে মধ্যেই তাঁকে ডেকে পাঠাতেন কৃষ্ণনগরের মহারাজা।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, রঘুনন্দন প্রতিদিনই গঙ্গাস্নানে যেতেন।এ দিকে, গঙ্গা তার গতিপথ পরিবর্তন করেবীরনগর থেকে অনেকটা দূরে সরে যাওয়ায় রঘুনন্দন সমস্যায় পড়েন। তাই তিনি গঙ্গাতীরবর্তী কোনও বসবাসযোগ্য জায়গার সন্ধান করছিলেন।এ সময় কৃষ্ণনগরের মহারাজা ও বাঁশবেড়িয়ার মহারাজা তাঁকে আঁটিশ্যাওড়ায় কিছু জমি দান করেন।অন্য একটি মত অনুসারে বীরনগর থেকে গঙ্গা দূরে সরে গিয়ে বাণিজ্যে ও চাষবাসে প্রভাব ফেলায় রঘুনন্দন গঙ্গাতীরবর্তী আঁটিশ্যাওড়ায় বসবাস শুরু করেন।

১৭০৭ নাগাদ রঘুনন্দন আঁটি শ্যাওড়ায় এসে উপযুক্ত বাসস্থান, মন্দির, চণ্ডীমণ্ডপ নির্মাণ করে বসবাস শুরু করেন।নতুন গড়ে ওঠা অঞ্চলটির নামকরণ করেন হাটগোবিন্দগঞ্জ। পরে সে নাম বদলে হয় শ্রীপুর। যদিও গঙ্গার ভাঙনের ফলে বর্তমানে হাটগোবিন্দগঞ্জের অবস্থান গঙ্গার অপর পারে।শাক্ত ও বৈষ্ণব দুই ধারায় সমান আস্থাবান ছিলেন রঘুনন্দন।এক দিকে তিনি যেমন রাধাগোবিন্দের মন্দির নির্মাণ করে বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, ঠিক তেমনই উলা-বীরনগরে পূর্বপুরুষদের প্রবর্তিত দুর্গোৎসবের ধারা বজায় রাখতে শ্রীপুরেও খড়ের চালযুক্ত কাঁঠাল কাঠের একটি অপরূপ চণ্ডীমণ্ডপ তৈরি করেন।

আরও পড়ুন: মা লক্ষ্মী ঘরের মেয়ে, তাই বিদায় দেয় না বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার

থামের উপরে এবং কড়িতে খোদাই করা দেবদেবীর মূর্তি ও নকশা সকলেরই নজর কাড়ে।

বীরনগরের সেই প্রাচীন চণ্ডীমণ্ডপটি আজ না থাকলেও শ্রীপুরে রঘুনন্দন প্রতিষ্ঠিত চণ্ডীমণ্ডপটি কালের প্রভাব উপেক্ষা করে টিকে থাকা বাংলার দারু ভাস্কর্যের এক অনুপম নিদর্শন। থামের উপরে এবং কড়িতে খোদাই করা দেবদেবীর মূর্তি ও নকশা সকলেরই নজর কাড়ে। পুজোর দিনগুলি ছাড়াও সে সব দেখতে মাঝেমধ্যেই ভিড় করেন দেশ বিদেশের পর্যটকেরা।

রঘুনন্দনের ছিল সাত ছেলে।নিজ নির্মিত গড়ের মধ্যে একটি প্রাসাদোপম বাড়ি তৈরি না করে তিনি সাত ছেলেকে সাতটি আলাদা বাড়ি তৈরি করে দেন।এখনও পুজোর সময় সাতটি পরিবারের নামে সঙ্কল্প করা হয়।সাবেক বাংলা শৈলীর প্রতিমাকে পরানো হয় শোলার ডাকের সাজ।এখানে পুজো শুরু হয় কৃষ্ণনবম্যাদিকল্পে, অর্থাৎমহালয়ার আগের নবমীতে। এ বছর মল মাস থাকায়১১ সেপ্টেম্বর থেকে মোট ৪২ দিনবোধন ঘরে এবং বেলতলায় দেবীর বিশেষ পুজো চলছে।সকালে নৈবেদ্য ও সন্ধ্যায় চিঁড়ে, মুড়কি, সন্দেশ ও গরুর দুধ নিবেদন করা হয়।

এই পরিবারের নবপত্রিকা গঙ্গাস্নানে যায় না, চণ্ডীমণ্ডপেই তার স্নানপর্ব সারা হয়।পুজোয় এখনও পশুবলি হয়। সপ্তমী থেকে শুরু করে নবমী পর্যন্ত জ্বলে হোমকুণ্ড।পুজোয় অন্নভোগ হয় না। পরিবর্তে নৈবেদ্যে নানা প্রকার ফলের সঙ্গে থাকে কাঁচা আনাজ, চাল,ডাল তেল, নুন ইত্যাদি। আজও বাড়িতেই তৈরি হয় নানা ধরনের নাড়ু, সন্দেশ।

সপ্তমী থেকে শুরু করে নবমী পর্যন্ত জ্বলে হোমকুণ্ড।

পরিবারের সদস্য তাপস মিত্র মুস্তাফি বলছিলেন, অতীতের রীতি মেনেই সপ্তমীতে বলির হাঁড়িকাঠ মাটিতে বসানো হলে নবমীতে হোম শেষে দক্ষিণান্ত না হওয়া পর্যন্ত গ্রামের বিধবা মহিলারা অন্ন গ্রহণ করেন না।দক্ষিণান্ত হয়েগেলে পরিবারের প্রবীণতম সদস্য ঢাকিকে সঙ্গে নিয়ে পুরো গ্রামে ঘুরে ঘুরে সকলকে সেই বার্তা জানান। এর পর বিধবারা বাসনপত্র ধুয়ে ভাত চড়ান উনুনে। এই প্রথা আজও চলছে।

রঘুনন্দন বিভিন্ন মৌজায় দেবসেবার জন্য যে জমি রেখে গিয়েছিলেন তাঁর থেকে এখনও দেবসেবা হয়।এই পরিবারে কালীপুজোও হয়। তবে চণ্ডীমণ্ডপে নয়, কাছারি বাড়িতে।রঘুনন্দনের সাত ছেলের মধ্যে চতুর্থ পুত্র অনন্তরাম শ্রীপুরের কাছেই সুখারিয়াতে প্রাসাদোপম বাড়ি তৈরি করে বসবাস শুরু করেন। সেখানে নবনির্মিত বাড়িতে দুর্গোৎসবেরও প্রচলন করেন। সেই পুজো আজও চলছে।

প্রতি বছর দূর দূরান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ ভক্তি ও সরল বিশ্বাস নিয়ে ছুটে আসেন দেবী দর্শনের জন্য। তবে পরিবার সূত্রে জানা গেল, এ বছর করোনা আবহে সামাজিক দূরত্ব বিধি মেনে চলা হবে।

ছবি সৌজন্য: অনীশ মিত্র মুস্তাফি

কৃতজ্ঞতা: সুমিত মিত্র মুস্তাফি

Durga Puja 2020 Durga Puja Celebration 2020 Durga Puja Celebration Sripur Mitra Mustafi Family

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।