Advertisement
E-Paper

বাঘের উপদ্রব আজ অতীত, আন্দুল রায়বাড়িতে এখনও দশমীতে পূজিত হন দক্ষিণরায়

বাংলার বনেদি শারদোৎসবের মধ্যে অন্যতম আন্দুল মৌরির রায়পাড়ায় এই রায়বাড়ির পুজো।

অর্পিতা রায়চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০২০ ১৫:০৫
Share
Save

তাঁরা ছিলেন পিরালি ব্রাহ্মণদের একটি শাখা। পূর্ববঙ্গের ভিটেমাটি ছেড়ে দেশান্তরী হয়েছিলেন বিভিন্ন কারণে। কোথায় যাবেন, ঠিক নেই। নতুন জায়গায় পা রাখার আগেই বজরায় প্রসব বেদনা উঠল পরিবারের ভাইদের এক জন, বাবুরাম কুশারীর স্ত্রীর। মাঝপথেই থামল বজরা। সপরিবার নেমে গেলেন বাবুরাম। যেখানে নামলেন, সে জায়গার নাম আন্দুল।

কন্যাসন্তানের জন্ম দিলেন বাবুরামের স্ত্রী। বাবুরাম পরিবার নিয়ে থেকে গেলেন আন্দুলেই। পরে মহেশ্বর বটব্যালের সঙ্গে বিয়ে দেন একমাত্র মেয়ের। মহেশ্বর ছিলেন পেশায় শাঁখারি। হুগলির হরিপাল থেকে বাবুরামের পরিবারে শঙ্খ ও শাঁখা বিক্রি করতে আসতেন তিনি। সৎ ও পরিশ্রমী মহেশ্বরকেই ঘরজামাই হিসেবে বেছে নেন দূরদর্শী বাবুরাম। ধীরে ধীরে সেই মহেশ্বরই পত্তন করলেন বিশাল জমিদারির। ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে মিলল ‘রায়’ উপাধি। সেই থেকে তাঁর উত্তরসূরীরা এই উপাধি ব্যবহার করে আসছেন। পারিবারিক পুজোর বয়স পেরিয়েছে কয়েকশো বছর। বাংলার বনেদি শারদোৎসবের মধ্যে অন্যতম আন্দুল মৌরির রায়পাড়ায় এই রায়বাড়ির পুজো।

প্রতি বছর রায়বাড়ির ঠাকুরদালানেই তৈরি হয় প্রতিমা। এ বছর অতিমারির প্রকোপে কিছুটা বদলেছে সে নিয়ম। মূর্তির কাজ বেশ কিছুটা এগিয়ে তার পরে কুমোর নিয়ে এসেছেন রায়বাড়িতে। বাকি কাজ সেখানেই সারা হয়েছে তার পরে। রায়বাড়ির প্রতিমা নির্মাণ সম্পূর্ণ হলে বাড়ির খুদে সদস্যরা একে একে মায়ের হাতে দেয় পিতলের অস্ত্র। পরিয়ে দেওয়া হয় সিন্দুক থেকে বার করে আনা সোনার গয়না।

পুজোর পরে আবার দক্ষিণরায় চলে যান ঝুড়ির আড়ালে।

শুধু দেবীর গয়নাই নয়। এ বাড়িতে যত্ন ও নিষ্ঠাভরে পালন করা হয় সাবেকিয়ানার প্রতিটি রীতি- জানালেন পরিবারের এই প্রজন্মের সদস্য রণদীপ রায়। নবপত্রিকা প্রতিষ্ঠা থেকে সন্ধিপুজো, দুর্গাপুজোর প্রতিটি বিধি পালিত হয় সনাতনী রীতি মেনে। তবে দুর্গাপুজোয় এই বাড়িতে কোনও রকম বলির চল নেই। প্রাণীবলি তো নয়ই, দেওয়া হয় না চালকুমড়ো বলিও। কেন এই নিয়ম? সে কারণ জানা নেই রণদীপের। তবে আশৈশব দেখে আসছেন এই রীতিই।

আরও পড়ুন: বৌদ্ধতন্ত্রাচারে পুজো পান বলাগড় পাটুলির দ্বিভুজা দুর্গা

মহাষষ্ঠীর বোধন থেকে বিজয়া দশমীর বিসর্জন- দুর্গোৎসবের প্রতিদিন এ বাড়িতে নিরামিষ ভোগ উৎসর্গ করা হয়। বাড়ির হেঁশেলেও এ ক’দিন আমিষপ্রবেশ নিষিদ্ধ। দশমীর ঘট বিসর্জনের পরে সকলে মাংস খান। প্রতি বছর দুর্গাপুজোয় এ বাড়িতে প্রায় ১২০ জনের পাত পড়ে। সারা বিশ্ব থেকে পরিজনেরা এক জায়গায় হন এই পারিবারিক দুর্গোৎসব উপলক্ষে। এ বার সে ছবি কিঞ্চিৎ পাল্টেছে। পুজোয় যোগ দিতে পারছেন পরিবারের ৫০ থেকে ৬০ জন সদস্য। শারদোৎসবের আকর্ষণ যেন বছরভরই একসূত্রে বেঁধে রাখে সাবেকি এই পরিবারের সদস্যদের।

রায়বাড়ির পারিবারিক পুজোর একটি বৈশিষ্ট্য আছে, যা সচরাচর দেখা যায় না অন্য কোনও বাড়ির দুর্গাপুজোয়। বিজয়াদশমী তিথিতে প্রতিমা বিসর্জনের পরে এখানে পুজো করা হয় দক্ষিণরায়কে। ঠিক বাড়ির ঠাকুরদালানে নয়। ব্যাঘ্রদেবতা পূজিত হন বাড়ির বাইরে মাঠে। সারা বছরই দক্ষিণরায়ের মূর্তি রাখা থাকে বাড়ির সামনে। তাঁকে ঢেকে রাখা হয় ঝুড়ি দিয়ে। দশমীতে ঝুড়িচাপা মূর্তিকে বাইরে বার করে এনে পুজো করা হয়। পুজোর পরে আবার তিনি চলে যান ঝুড়ির আড়ালে।

প্রতি বছর রায়বাড়ির ঠাকুরদালানেই তৈরি হয় প্রতিমা।

আরও এক দিন পুজো করা হয় দক্ষিণরায়কে। সেটা নীলষষ্ঠী তিথি। বছরে শুধুমাত্র এই দুই তিথিতে এ পরিবারে আরাধনা করা হয় তাঁকে। বাকি দিনগুলিতে তাঁকে দেখা যায় না। সুন্দরবনের লৌকিক দেবতা কী করে অংশ হয়ে উঠলেন হাওড়ার এক জমিদারবাড়ির শারদোৎসবে? তার কারণ আজ বিস্মৃত।

আরও পড়ুন: বিজয়িনীর হাসি আর আয়ত চোখের স্নিগ্ধতায় অনন্যা মাতৃমূর্তি

তবে অনুমান, বনজঙ্গলঘেরা এই স্থানে অতীতে বাঘের উপদ্রব থেকে বাঁচতেই দক্ষিণরায়ের পুজো শুরু হয়েছিল। সেই রীতি আজও রয়ে গিয়েছে বছরের দু’টি তিথিতে। বছরের বাকি দিনগুলিতে তাঁকে ঝুড়িচাপা দিয়ে রাখার পিছনেও আছে এক আখ্যান। রায় পরিবারে প্রচলিত সেই গল্প বলে- কোনও কালে দক্ষিণরায়ের মন্দির নির্মাণের চেষ্টা করেছিলেন এ বাড়ির কোনও কর্তা। কিন্তু যত বারই মন্দির তৈরি করা হচ্ছিল, তত বারই রহস্যজনক ভাবে ভেঙে পড়ছিল অর্ধসমাপ্ত মন্দির। শেষ অবধি পরিবারের ধারণা হয়, নিজের জন্য মন্দির চাইছেন না স্বয়ং দক্ষিণরায় দেবতাই। তাই মন্দির তৈরির সিদ্ধান্ত খারিজ হয়। দক্ষিণরায় রয়ে যান পরিবারের সঙ্গেই। অন্তরাল থেকেই রায় পরিবার এবং তাদের জমিদারির সব বাসিন্দাকে বাঘের আক্রমণ থেকে রক্ষা করবেন বলে।

Durga Puja 2020 Durga Puja Celebration 2020 Durga Puja Andul RoyBari heritage

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।