বাঙালি ভোজনপ্রিয়। আর সদ্য গেল দুর্গোৎসব আর কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর লম্বা উৎসব মরশুম। অতএব দুয়ে-দুয়ে চার! পুজো মানেই বেহিসেবি খাওয়াদাওয়া আর তার ধাক্কায় বড়-ছোট-খুদে, সব বয়সিদের গ্যাস, অম্বল, চোঁয়া ঢেকুর, পেটের সমস্যার সমূহ সম্ভাবনা।
১. তা বলে কি অ্যান্টাসিড রেহাই দেবে?
এমনিতেই রোগভোগের মধ্যে গ্যাস-অম্বল আমাদের নিত্যসঙ্গী। তার উপর পুজোয় বেশির ভাগ মানুষের স্বাভাবিক জীবন ধারায় ব্যাঘাত ঘটে। সে কারণে অ্যাসিডের প্রাবল্য আরও বেশি হওয়ার আশঙ্কা।
গ্যাস-অম্বল হয় কেন? চোঁয়া ঢেকুর উঠলে কি মুঠো মুঠো অ্যান্টাসিড খাব? মোটেই খাবেন না। তার বদলে কিছু খুব সাধারণ নিয়মাবলী অনুসরণ করলে গ্যাস-অম্বলের হাত থেকে আপনার রেহাই নিশ্চিত।
২. আগে জানুন গ্যাস-অম্বল কেন হয়? বারবার হলে কেন সাবধানতা জরুরি?
পাকস্থলীর গ্যাস্ট্রিক গ্রন্থি অতিরিক্ত হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড নিঃসরণের ফলে অ্যাসিডিটি বা গ্যাসের সমস্যা হয়। প্রত্যেক মানুষের খাওয়ার স্বাভাবিক সময় আছে, সকাল থেকে রাত। সেই খাবার পাকস্থলীতে পরিপাক বা হজম করানোর জন্য নির্দিষ্ট এক অ্যাসিড সবসময় নিঃসরণ হয়ে চলেছে। এ বার অনেকক্ষণ খালি পেটে থাকলে পাকস্থলীর ওই অ্যাসিড তখন খাদ্যের অভাবে হজম করানোর কাজ না পেয়ে ওখানেই বাড়তি উৎসেচকের মতো ক্ষতিকারক উপাদান তৈরি করে। তার থেকে গ্যাস-অম্বল হয়। অনেকক্ষণ খালি পেটে থাকা ছাড়াও অতিরিক্ত চা-কফি খেলে, খুব বেশি মশলাযুক্ত খাবার খেলে, মাত্রাতিরিক্ত ভাজাভুজি খেলে, অনেক দিন ধরে খাওয়ায় খুব বেশি অনিয়ম হলে, রাতের খাবার খেয়েই সঙ্গে সঙ্গে শুয়ে পড়ার অভ্যেস থাকলে, অতিরিক্ত মদ্যপান, ধুমপান করলে, অনিদ্রারোগ, দুশ্চিন্তা ভাব বেশি থাকলে গ্যাস-অম্বলে পেট ফুলে ওঠে। গ্যাস-অম্বল হয়।
পাকস্থলীতে ক্ষতিকারক উপাদান জমার সম্ভাবনা এ সব থেকেই বাড়ে। অনেক দিন পাকস্থলীতে জমতে জমতে ওই ক্ষতিকারক উপাদান আলসার বা ঘা-এ পরিণত হয়। যেটা আরও বেশি মাত্রায় হলে বলা হয়, গ্যাসট্রিক আলসার।
৩. এ সব থেকে মুক্তি পেতে কিছু নিয়ম মেনে চলুন
ক. কলায় প্রচুর পটাসিয়াম থাকে, যা প্রাকৃতিক অ্যান্টাসিড। গ্যাস-অম্বল প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। কলা খান পারলে রোজ।
খ. তুলসী পাতা ৫-৬টা মুখে নিয়ে চিবিয়ে খেলে অথবা ৩-৪টে তুলসী পাতা সেদ্ধ করে সেই জল খেলে গ্যাস-অম্বল কমে। তুলসী পাতার বায়ুনাশক গুণ গ্যাস কমায়।
গ. দারচিনি মেশানো জল খেলে তার প্রাকৃতিক অ্যান্টাসিড হজম ক্ষমতা বাড়ায়। বদহজম কম হয় আমাদের।
ঘ. পুদিনা পাতা জলে ফুটিয়ে সেই জল খেলে গলা, বুক জ্বালা কমে।
ঙ. সারা রাত মৌরি জলে ভিজিয়ে রেখে সকালে সেই জল ছেঁকে খেলে গ্যাস-অম্বলের থেকে রেহাই মেলে
চ. টকদই খেলে তার মধ্যে থাকা প্রচুর ক্যালসিয়াম পাকস্থলীতে অ্যাসিডিক অ্যাসিড জমা কমায়।
ছ. গোলমরিচ, লবঙ্গ, এলাচ খেলেও অ্যাসিডের হাত থেকে অনেকটা রেহাই পাওয়া যায়।
জ. ঠান্ডা দুধ খেলে পাকস্থলীর গ্যাস্ট্রিক অ্যাসিড স্থিতিশীল থাকে। দুধের ক্যালসিয়াম পাকস্থলীতে অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণ করে।।
ঝ. অল্প বিট নুন দিয়ে আদা কুঁচি খেলে গ্যাস-অম্বল প্রতিরোধ হয়।
৪. জীবনধারায় কিছু পরিবর্তন কিছু দরকার
ক. প্রাতরাশ বেশ গুছিয়ে, পেট ভরে খেতে হবে।
খ. অনেকক্ষণ খালি পেটে থাকার সময়, কাজের ব্যস্ততায়, সময়াভাবে, কেবল বারবার চা-কফি না খেয়ে দুটো বিস্কুট বা এক মুঠো মুড়ি খান। একই সময় লাগে খেতে। চা খেলে তাতে এক টুকরো আদা ফেলে খান।
গ. খুব কম যেমন খাবেন না, তেমনই একবারে খুব বেশিও খাবেন না। তাতে পেট ফোলে।
ঘ. প্রতিদিন আধঘন্টা ব্যায়াম করুন। নিদেনপক্ষে ১৫ মিনিট হাঁটুন।
ঙ. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন। স্থূলতা গ্যাস, বদহজম ডেকে আনে।
চ. দিনে ২-৩ লিটার জল খান। জল শরীরের অম্লতাকে ডাইলুট অর্থাৎ তরলীকরণ করে মুত্র মারফত বের করে দেয়।
ছ. দুশ্চিন্তা যথাসম্ভব কম করুন, মনকে তাজা ও আনন্দে রাখার চেষ্টা করুন।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy