এ বার শ্রীভূমির দুর্গোৎসবের উদ্বোধন ঘটবে অ্যাঞ্জেল দি'মারিয়া-র হাতে! যাঁর পা থেকে মাত্র মাস ন’য়েক আগেই বিশ্বকাপ ফুটবল ফাইনালে ফ্রান্সের জালে প্রথম গোলটা ঢুকিয়েছিল বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। আজ্ঞে হ্যাঁ, ২০১৮ ফিফা বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন ফরাসিদের থেকে মুকুট কেড়ে নেওয়া লিওনেল মেসির সেই ২০২২-এর কাপজয়ী আর্জেন্টিনা!
ইদানীং কলকাতার বড় বড় নামীদামি বারোয়ারি দুর্গাপুজোর বিশাল বিশাল মন্ডপের ফিতে কাটার জন্য বঙ্গের কোনও সমাজেরই গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ আর বাকি নেই, যাঁদের দেবীপক্ষ পড়তে পড়তে না পড়তেই তিলোত্তমার প্রতি কোণ থেকে সাদর আমন্ত্রণ না আসে! কে নেই সেই সেলিব্রিটি তালিকায়?
নায়ক-নায়িকা, গায়ক-গায়িকা, লেখক-লেখিকা, কবি, সুরকার-গীতিকার, মন্ত্রী-আমলা, বিচারপতি, শিল্পপতি থেকে রাজ্যপাল এবং সর্বোপরি রাজ্যের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী। মহালয়া থেকে মহাষষ্ঠী পর্যন্ত চলে শহর জুড়ে দুগ্গা মন্ডপের ফিতে কাটার ধুম।
তুলনায় বরং খেলোয়াড়দের চাহিদা সামান্য হলেও কম! সেখানে মন্ত্রী সুজিত বসুর পুজো বলে পরিচিত ভিআইপি রোডের ওপরে শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাব যে বিরাট অভিনবত্ব দেখাচ্ছে, বর্তমান বিশ্ব ফুটবল চ্যাম্পিয়ন দলের ফাইনাল ম্যাচের প্রথম স্কোরারকে দিয়ে দুর্গামন্ডপের ফিতে কাটিয়ে, সেটা বোধহয় না বললেও চলে।
কিন্তু জানেন কি এই 'বংশে' দি'মারিয়ার প্রথম পুরুষ কে? তা হলে বলি শুনুন, তাঁর নাম সনৎ জয়সূর্য। এমনিতে সেই শৈলেন মান্না থেকে শুরু করে পিকে-চুনী হয়ে সুব্রত-গৌতম, বাইচুং-ব্যারেটো জমানা পেরিয়ে বর্তমানে পেত্রাডস-কামিন্সের মতো ময়দানের দুই প্রধানের বিদেশি তারকা ফুটবলারদের দিয়ে দুর্গা পুজোর প্যান্ডেলের ফিতে কাটানো খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। তা-ও আবার বলব, তাতেও তুলনামূলকভাবে খেলোয়াড়দের এই 'কাজে'র জন্য 'ডিমান্ড' কম।
আবার কলকাতার মেগা দুর্গা পুজোর সঙ্গে যেমন রাজনৈতিক দাদাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, তেমনই নামীদামি খেলোয়াড়দের যোগাযোগ বড় বড় বারোয়ারি পুজোর সঙ্গেও কম।
তাঁর মধ্যেও কোনও কোনও বড় খেলোয়াড়, কেউ তাঁদের পাড়ার, কেউ তাঁদের আবাহনের পুজোর সঙ্গে যুক্ত থাকেন। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় যেমন পাড়ার পুজো বরিষা স্পোর্টিং-এর মহাষ্টমীর অঞ্জলি দেবেন-ই দেবেন। শিশির ঘোষ যেমন রিষড়ায় তাঁর পাড়া, যেটা প্রসিদ্ধ মিষ্টান্ন ভান্ডার ফেলু মোদকের দোকানের জায়গায়ও বটে, সেখানকার পুজোর সঙ্গে ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকেন। কিন্তু একটা শিশির, একটা সৌরভের বেশি এ ব্যাপারে ময়দানের বিশিষ্ট ফুটবলার বা ক্রিকেটারের সন্ধান পাওয়া যায় না।
এ রকম একটা বিবর্ণ আবহে দি'মারিয়া 'বংশে'র প্রথম পুরুষ জয়সূর্য। ১৯৯৬ বিশ্বকাপ ক্রিকেট চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কা দলের বিস্ফোরক ওপেনিং ব্যাটসম্যান জয়সূর্য। ওপেনিং পার্টনার কালুবিথর্নাকে নিয়ে ওই ওয়ান ডে বিশ্বকাপে প্রথম ১৫ ওভারের ব্যাটিংয়ের রসায়নটাই যিনি আমূল পাল্টে দিয়েছিলেন। ধুঁয়াধার ব্যাট চালিয়ে।
এ হেন জয়সূর্যকে লঙ্কাদেশ থেকে তাঁর পাড়ার কালীপুজোর উদ্বোধন করাতে নিয়ে এসেছিলেন সদানন্দ দাস। ইস্টবেঙ্গল ক্লাব তথা ময়দানে সেই নব্বইয়ের দশকে যিনি 'সদা' নামে এককথায় পরিচিত ছিলেন। একটা সময় লাল-হলুদের ক্রিকেট সচিব ছিলেন সদানন্দ। যাঁর কালীপুজো হিসেবে ওই সময় শহর জুড়ে জনপ্রিয়তা ছিল তারাতলার মোড়ের কালীপুজো। অজন্তা সিনেমা হলের ঠিক বিপরীতে। জয়সূর্যকে খোলা রাস্তার ওপর দেখতে ভিড় ভেঙে পড়েছিল সেই সন্ধ্যেয়। যে উন্মাদনার দৃশ্য তার আগে কোনও পুজো প্যান্ডেলে কোনও নামী আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়কে ঘিরে দেখেনি কলকাতা!
তারপর আরও অনেক আন্তর্জাতিক খেলোয়াড় পুজো প্যান্ডেলের ফিতে কাটতে এ শহরে এসেছেন। দিলীপ বেঙ্গসরকার থেকে শুরু করে অনেকে।
কিন্তু এই ধারার শুরু সনৎ জয়সূর্যকে দিয়ে। যাঁর এ বছর উত্তরসুরি হতে যাচ্ছেন অ্যাঞ্জেল দি'মারিয়া! আগে ব্যক্তিগত সম্পর্কের জোরে এটা ঘটত। তবে এখন এর পিছনেও এজেন্ট, স্পন্সরদের দাপট!
এই প্রতিবেদনটি 'আনন্দ উৎসব' ফিচারের একটি অংশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy