Advertisement

Associate Partner

Style Partner

Associate Partner

Weddings Partner

Food Partner

Susmita Chatterjee

Durga Puja 2021: ছোট চুল আর প্রেম ছাড়া দুর্গাপুজো হয় না: সুস্মিতা

এক অর্থে পুজো হল মায়ের নিজ-গৃহে আগমন। আমারও তাই। পুজোর ক’টা দিন আমার তোলা থাকে বাড়ির জন্য।

কোনও বন্ধু-বৃত্তের টানে নয়, পুজোয় আমার বাড়ি যাওয়ার একমাত্র কারণ আমার মা-বাবা।

কোনও বন্ধু-বৃত্তের টানে নয়, পুজোয় আমার বাড়ি যাওয়ার একমাত্র কারণ আমার মা-বাবা।

সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায়
সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৪:১৮
Share: Save:

আমার মতো যারা ঘর-ছাড়া, তাদের কাছে হই-হুল্লোড়, আড্ডা, খাওয়া-দাওয়ার পাশাপাশি পুজোর এক অন্য তাৎপর্য আছে— ঘরে ফেরা। এক অর্থে পুজো হল মায়ের নিজ-গৃহে আগমন। আমারও তাই। সেই ২০১৪ সালে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে কলকাতা চলে আসি। তার পর থেকে এখানেই। এখন ছবির কাজে ব্যস্ততা আরও বেড়েছে। তাই পুজোর ক’টা দিন আমার তোলা থাকে বাড়ির জন্য। পঞ্চমী-ষষ্ঠী অবধি আমি কলকাতায় পুজো দেখে নিই, তার পর সপ্তমী থেকে বাকি পুজো কুলটিতেই কাটাই মা বাবার সঙ্গে— যেখানে আমার বে়ড়ে ওঠা।
পুজো মানে তাই আমার কাছে ছুটি। এই সময়ে ছবির কাজ থাকে না, তাই সারা বছরের ব্যস্ততা সামলে এই ক’টা দিনই একটু ফাঁক পাই। কোনও বন্ধু-বৃত্তের টানে নয়, পুজোয় আমার বাড়ি যাওয়ার একমাত্র কারণ আমার মা-বাবা। আমি না গেলে ওঁদের পুজো কাটে একা একা। বুঝি, আমার জন্যও অধীর এক অপেক্ষা থাকে ওঁদের। আর যাই হয়ে যাক, মহাষ্টমীর অঞ্জলি বরাদ্দ থাকে ওঁদের জন্য। তবে স্কুল শেষ হওয়া পর্যন্ত যেহেতু আমার পুজো কেটেছে কুলটিতেই, তাই বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে ঘোরারও বহু মজার স্মৃতি আছে। অষ্টমী-নবমীর দিন প্যান্ডেলে বসে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা ছিল বাঁধা-ধরা। অঞ্জলি শেষ হলে মা-বাবা চলে আসতেন, তার পরেও চলত আড্ডা।
তবে এক বার দারুণ মজা হয়েছিল। অবশ্য এখন একটু দূরত্ব থেকে দেখি বলেই মজা পাই— তখন যা বকুনি খেয়েছিলাম, তাতে মজার গন্ধও ছিল না। ঘটনাটা হয়েছিল পুজোর দিনেই। কুলটিতে কোনও শপিং মল ছিল না, আসানসোলে ছিল। সেই টানে মা-বাবাকে কিচ্ছু না জানিয়ে বন্ধুরা মিলে সে বার আসানসোল চলে গিয়েছিলাম। আমাদের তখন আর পায় কে! কিন্তু সুখ টেকেনি বেশিক্ষণ। সে ছিল প্রাক-মোবাইল ফোন যুগ। ফিরতে দেরি হলে তুরন্ত যোগাযোগের কোনও উপায় নেই। বাড়ি যখন ফিরেছি অবশেষে, তখন যে সাংঘাতিক বকুনি খেয়েছিলাম তা তো বলাই বাহুল্য। তার পর থেকে কখনও কোথাও গেলে বলেই যেতাম। বন্ধু শ্রেয়াকে তো ওর মা-বাবা ফোনই দিয়ে দিলেন যোগাযোগের জন্য।
আর পুজো বলতে ছিল খাওয়া-দাওয়া। ফুচকা, চাট থেকে শুরু করে মোগলাই— সব খাবারই থাকত আমাদের তালিকায়। এবং শুধু তাই নয়, প্যান্ডেল পরিক্রমার মতো খাওয়ার জন্যও আমাদের ঘুরপাক চলত। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে যে দোকানে যে খাবার ভাল, সেটা খেতে চলে যেতাম সেখানে। এখনও খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে কোনও আপস করতে রাজি নই আমি। খাওয়া-দাওয়া ছাড়া প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ঘুরে ঠাকুর দেখা তো ছিলই। আশেপাশের কিছু জায়গায় বেশ বড় পুজো হত, যেমন দুর্গাপুর বা চিত্তরঞ্জন। সেখানেও যেতাম ঠাকুর দেখতে। আর প্রেম ছাড়া কি পুজো হয়? সেও এক বড় অংশ ছিল। তখন বয়সও ছিল কম, অনেককে দেখতাম প্যান্ডেলে, ভাল লাগত।
সে দিন এখন পেরিয়ে এসেছি। কাজ করতে শুরু করার পর এখন ধীরে ধীরে পরিচিতি হচ্ছে। তার প্রভাব যে কুলটিতেও এসে পড়বে, তা টের পাচ্ছি। ঘরের মেয়ে চলচ্চিত্রের জগতে পা দিলে তাকে দেখার দৃষ্টিও বদলে যায়। এত দিন আমার বাড়ি ফেরার অপেক্ষা ছিল কেবল বাবা-মায়ের। কিন্তু এখন সেই অপেক্ষা প্রায় গোটা কুলটির। মা বাবার মুখেই শুনছি যে ওখানকার মানুষ ঘন ঘন ওঁদের কাছে জানতে চাইছেন, আমি কবে ফিরব। বুঝতে পারছি, এ বারের ফেরাটা হবে অন্য রকম, আগের থেকে আলাদা। আমি হয়তো আর যে কোনও জায়গায় গিয়ে বসতে পারব না।

এত দিন আমার বাড়ি ফেরার অপেক্ষা ছিল কেবল বাবা-মায়ের। কিন্তু এখন সেই অপেক্ষা প্রায় গোটা কুলটির।

এত দিন আমার বাড়ি ফেরার অপেক্ষা ছিল কেবল বাবা-মায়ের। কিন্তু এখন সেই অপেক্ষা প্রায় গোটা কুলটির।

তবে সত্যি বলতে, আমি যে এই বদলটা উপভোগ করছি না তা নয়। অন্যের মনোযোগ পেতে কে না ভালবাসে? তা ছাড়া আমি ছোট জায়গায় বড় হয়েছি। কেউ সামান্য সাফল্য পেলেও এখানে সকলের কাছে তা বিরাট বড়! কারণ এমন ছোট শহর থেকে কোনও বড় জায়গায় জমি তৈরি করতে যে যথেষ্ট লড়াই করতে হয়, তা তাঁরা জানেন। এই যে এত মানুষ আমার জন্য অপেক্ষা করছেন, মুখিয়ে আছেন আমার কাছ থেকে এই স্পটলাইটের জীবনের অভিজ্ঞতা শুনবেন বলে— এ কথা ভেবেও ভাল লাগছে।
আগের ছবিতে আমার চরিত্রের ছোট চুল ছিল। সামনে মুক্তি পাচ্ছে অরিন্দম শীলের পরিচালনায় ‘খেলা যখন'। এই ছবিতেও তাই। আমি হয়তো সহজেই উইগ পরে নিতে পারতাম, কিন্তু বেশ কিছু অ্যাকশন-দৃশ্য থাকায় পরিচালক নিজেও কোনও ঝুঁকি নিতে চাননি। এবং আমি নিজেও কোনও নতুন চ্যালেঞ্জ নিতে ভয় পাই না। সেই সৎসাহস আমার আছে। চুল এতটা ছোট করে ফেললে আবার বড় করতে অনেক সময় লাগে। তাই অনেকেই চুল ছোট করতে পিছপা হন। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে ছোট চুলই আমার পরিচিতি-ব্যক্তিত্বের সঙ্গে প্রায় জুড়ে গিয়েছে। আগামী ছবিতে আমার চরিত্র একজন চোরের, পরিচালনা করছেন সুদেষ্ণাদি। আমার চুলের স্টাইল এতটাই পছন্দ হয়েছে সুদেষ্ণাদির যে, এই ছবিতেও আমার ছোট চুলই থাকছে। তা ছাড়া চরিত্রের সঙ্গেও এই লুক মাননসই।
মা প্রশ্ন করেছিলেন, পুজোর সাজের সঙ্গে আমার এই চুল কী ভাবে যাবে। মাকে জানিয়েছি যে, শাড়ি পরি বা অন্য কিছু, আমি এই ছোট চুলই রাখব। কারণ এটাই আমি। নায়িকা হয়ে গিয়েছি বলে তাঁরা যেমন সাজেন, তেমনটাই আমাকেও সাজতে হবে— এ কথা আমি বিশ্বাস করি না। আমি যেমন, আমি তেমনই। এবং যাঁরা ছোট চুলে পুজোর সাজ কী ভাবে হবে সেই নিয়ে চিন্তিত, তাঁদেরও বলব নিজের উপর বিশ্বাস রাখতে। ছোট চুলই হয়ে উঠতে পারে আপনার আত্মপরিচয়।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy