ছোটপর্দা থেকে বড় পর্দা, সময়ের হাত ধরে প্রতিবার বিভিন্ন রূপে পূজিত হয়ে এসেছেন শ্যামা মা। তবে বাংলা ধারাবাহিকে দেবীর প্রসঙ্গে দর্শকদের মনে যে সমস্ত অভিনেত্রী চিরস্থায়ী হয়ে রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম পায়েল। ‘বেহুলা’ হোক কিংবা ‘দেবী দুর্গা’, পৌরাণিক চরিত্রকে নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলতে বরাবরই সফল হয়েছেন তিনি। কর্মজীবনে একটি দীর্ঘ বিরতি, তার পরই পর্দায় ‘রামপ্রসাদ’-এর হাত ধরে পায়েল ফেরেন মা কালী হয়ে। কেমন ছিল সেই অনুভূতি? কালীপুজোর দিনে আনন্দবাজার অনলাইনের আবদারে স্মৃতির পাতায় ডুব দিলেন অভিনেত্রী।
তিনি বলেন, ‘‘আমার কাছে ‘রামপ্রসাদ’ ধারাবাহিকে কালী মায়ের চরিত্রটির প্রস্তাব কিছুটা অপ্রত্যাশিতভাবেই আসে। আমি তখন সাময়িক বিরতিতে। হঠাৎ চ্যানেলের তরফ থেকে আমার কাছে ফোন আসে। জিজ্ঞেস করা হয়, একটি পৌরাণিক চরিত্রে অভিনয় করতে আমি ইচ্ছুক কি না। কী চরিত্র জিজ্ঞেস করতেই যে উত্তরটা আমার কাছে এল, তা শুনে আমি কিছু ক্ষণের জন্য স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম।”
মা কালীর চরিত্রে অভিনয় করতে হবে শুনে প্রথমেই কী মাথায় এসেছিল অভিনেত্রীর? কিছুটা মজা করেই পায়েল বলেন, “মা কালীর নাম শুনে প্রথমেই ভেবেছিলাম তা হলে বোধহয় আমার সারা গায়ে কালো রঙের প্রলেপ বসবে! প্রথমেই আমার প্রশ্ন ছিল, তাহলে কি আমাকে রোজ রং মাখতে হবে? আসলে প্রতিদিন রং মাখলে ত্বকের সমস্যা হতে পারে, সেই ভয়টাই পাচ্ছিলাম আমি। যদিও পরে রাজি হয়ে যাই।” মজার বিষয় হল, দীর্ঘ কর্মজীবনে একাধিক পৌরাণিক চরিত্রে দর্শকদের মন জয় করেছেন পায়েল। কিন্তু অভিনেত্রী জানান মা কালীর চরিত্রটি তাঁর কাছে নাকি একটু বেশিই গুরুত্বপূর্ণ। কেন? পায়েল বলেন, “পৌরাণিক, লৌকিক থেকে শুরু করে অন্যান্য একাধিক চরিত্রে অভিনয় করে আমি যতটা ভালবাসা কুড়িয়েছি, আমার মনে হয় এই চরিত্রটি করার পর তার ৩ গুণ ভালবাসা আমি পেয়েছি। আমার জন্য এক অন্যরকম ভক্তি-শ্রদ্ধা দেখেছি মানুষের চোখে।”
লৌকিকতায় বিশ্বাস রাখেন পায়েল? উত্তরে তিনি বলেন, “আমি নাস্তিক নই। ইতিবাচক শক্তিতে খুব বিশ্বাস করি। তবে নিয়ম মেনে মন্ত্র উচ্চারণ করে হয় তো পুজো করা হয় না।” এই প্রসঙ্গ ধরেই শুটিংয়ের সময়ের একটি অদ্ভুত অভিজ্ঞতার কথা জানালেন পায়েল। তিনি বলেন, “শুটিংয়ের সময়ে যে গয়নাগুলি আমি পরতাম। আমি বলব না যে, সেগুলি আমার তুলনায় অনেক বেশি ভারী, কিন্তু সেই সব কিছু পরে তাণ্ডব নৃত্যের সময়ে শরীরে এক অদ্ভুত শক্তি কাজ করত। ওই মুণ্ডমালা, ফুলের মালা, ভারী গয়না পরে মায়ের তাণ্ডব নৃত্যের সময়ে মনে হত যে এক অন্য সময়ে পৌঁছে গিয়েছি। সেই অনুভূতিটা ভাষায় প্রকাশ করা মুশকিল। অ্যাকশন আর কাটের মাঝে যেন ম্যাজিক হত! আমি জানি আমার সাজপোশাক সবটাই পোশাকশিল্পীদের কৃতিত্ব। তবে আমি জানি না যে, নাচের সময়ে ফুলের মালা ছিঁড়ে গেলেও পোশাক, গয়না, অত বড় মুকুট এমনকি মুণ্ডমালাটাও একই জায়গায় থাকত। সবটাই যেন কেউ সুন্দরভাবে করিয়ে নিচ্ছে।”
কখনও সামনে থেকে গর্ভগৃহে ঢুকে মায়ের দর্শন পাওয়ার সুযোগ হয়েছে? অভিনেত্রী বলেন, “আমি অনেক ছোটবেলায় তারাপীঠ গিয়েছিলাম। তবে শুটিংয়ের সূত্রে হরিদ্বারের সতীকুণ্ড ঘুরে দেখার সুযোগ হয়েছে।” সবশেষে একগাল হাসি নিয়ে পায়েল বলেন, “দেখা সাক্ষাৎ হয়েছে সবার সঙ্গেই…”
প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy