মঞ্চে অনুষ্ঠানের শেষ গানটি গাওয়ার আগে যখন ‘জয় রক’ ধ্বনি তোলেন, আবেগে ভাসে অগণিত ফসিলস ভক্ত। ‘রূপম একক’ শুনে রসদ পায় কত শত অনুরাগী।
শিল্পীর পুরনো পাড়ায়, বাড়ির পাশের রাস্তায় মৃগেন্দ্রলাল মিত্র রোডে একটি পুজো হয়। অন্য দিকে, পার্ক সার্কাস ময়দানের একটি বড় পুজো। "আমার পড়শীরা ছিলেন পঞ্জাবি ও মাড়ওয়ারি পরিবার। ফলে পুজোর উন্মাদনা তাঁদের মধ্যে দেখিনি। তবে মাটির প্রতিমার থেকে মানব প্রতিমাই ছিল আমার আগ্রহের কেন্দ্রে— যুবকদের তো তাই হওয়ার কথা। মানব প্রতিমাদের ভিড় নিশ্চয়ই আমি উপভোগ করতাম। পুজোয় ছেঁড়া জিনস পরে ফুচকা খাওয়াটা বাধ্যতামূলক ছিল," বললেন শিল্পী নিজেই।
চার দিনের উৎসবে শুধুই মানব প্রতিমা আর ফুচকা! আর কিছু করার থাকত না রূপমের!
আর একটা-দুটো আকর্ষণ ঠিকই ছিল। পূজাবার্ষিকী আর নতুন বই। লাল শালুতে মোড়া বামপন্থী বইয়ের স্টলে যাওয়া হত রোজই। গায়কের কথায়, "তখন ছোট আমি, হাতে পয়সা থাকত না বেশি। তবু পার্ক সার্কাসের পুজো মণ্ডপের বাইরে ওই লাল মণ্ডপে গিয়ে আমি ঘুর ঘুর করতাম। পড়তাম। রাশিয়ান শিশু সাহিত্য কিনতাম নিয়মিত । একটু বড় হয়ে লুইজি বার্তোলিনির ‘বাইসাইকেল থিভস’। ‘বাইসাইকেল চোর’ গানটি লেখার সময় ওই বই আমার অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠে। আমায় অভিজ্ঞ করেছেন লুইজি বার্তোলিনির মতো অনেকেই।"
মানব প্রতিমা তা হলে প্রেমিকা হয়ে উঠল না ! পার্ক সার্কাস ময়দানের মেলায় কালো জামা পরা মেয়েটি শেষে হারিয়েই গেল ভিড়ে?
পুজোর সময়ে তখন মেলা জমেছে পার্ক সার্কাস ময়দানে। যুবক রূপম মানব প্রতিমার ভিড়ে আত্মহারা! হঠাৎই চোখ আটকে গেল কালো জামা পরা এক ললনায়। চুল তার বিদিশার নিশা। শুধু মুখটা দেখা হয়নি। তবে এক সৃষ্টি হল সে দিন- ‘আমি তোমার চোখের কালো চাই।’ সে-ও ছিল পুজোর কোনও এক বিশেষ বেলায়।
এ বছর পুজোয় অনুষ্ঠান করেই কাটাবেন শিল্পী। ঝড় তুলবেন বেঙ্গালুরুতে। তাঁর সঙ্গে মাতোয়ারা হবেন বাংলা রকের ভক্তরা। এ ছাড়া পুজো শেষ হতেই আসছে লেখক রূপম ইসলামের নতুন উপন্যাস।
শুধু সঙ্গীতশিল্পী বা লেখক নন, তিনি এক জন ভাল শিক্ষকও নিঃসন্দেহে। তাঁর ভক্তকুল সে রকমটাই মনে করেন। তবে ছেলে রূপ-কে পড়ানোর দায়িত্ব একাধারে সামলান রূপসা, শিল্পীর গুণী স্ত্রী। কারণ স্কুলের নিয়ম মাফিক পাঠে অশ্রদ্ধা না থাকলেও ভরসা নেই রূপমের। তাঁর কাছে প্রিয় মূল্যবোধের পাঠ। মানবতার পাঠ।
স্ত্রী রূপসা-র সঙ্গে সম্পর্কের শুরু মনোমালিন্যে হলেও এই মুহূর্তে তাঁরা সুখী ও সকলের প্রিয় দম্পতি।
ছেলের ধর্ম কী হবে, রূপ বাঙালির মহোৎসবকে কতটা গুরুত্ব দেবে সে সব নিয়ে চিন্তিত নন শিল্পী। কারণ তাঁর মতে, তাঁর অনুভূতির মিছিল চির কালই বৈপ্লবিক ছিল, আছে ও থাকবে। সঙ্গে থাকবে ঝাঁকুনি দেওয়া এক মহামন্ত্র—জয় রক!
এই প্রতিবেদনটি 'আনন্দ উৎসব' ফিচারের একটি অংশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy