শুনতে কী ভাল লাগছে! লোকে বলছে, দেবলীনা তোমারই তো পুজো। গত বছর ‘রঙ্গবতী’ হয়ে ধরা দিলে। এ বছর ‘গেন্দা ফুল’! এত বিষন্নতার মধ্যেও এ কথাগুলো ইতিবাচক শোনাচ্ছে। বহু বছর পরে ২০১৯-এ বাংলা নেচেছিল ‘গোত্র’র আইটেম সঙের সঙ্গে। অনেকেই বলছেন, ২০২০ নাকি বিষকুম্ভ! বলতে পারি না। অমৃত কি তার মধ্যে থেকেই খুঁজে নেওয়া যায় না?
শপিং করব কী! ল্যাদ খেয়ে গিয়েছি...
মনটা আমারও যে খুব ভাল, তা কিন্তু নয়। একে ‘ত্রিধারা’র পুজো ছোট হচ্ছে। ভাবতে পারেন, তার উপরে এখনও পুজো শপিং কিচ্ছু হয়নি! অন্য বার এই সময়ে এক গাদা কেনাকাটা হয়ে যায়। এ বছর অতিমারী পুরো ল্যাদ খাইয়ে দিয়েছে। সংক্রমণ ঠেকাতে এত্ত নিয়ম মানতে হচ্ছে যে, বেরনোই হয়ে উঠছে না। অনেকেই বলবেন, কেন? অনলাইন আছে! আসলে আমি পুজোতে শাড়ি, সালোয়ার, আনারকলিতে সাজি। তাই দোকানে গিয়ে নিজে দেখেশুনে না কিনলে মন ওঠে না।
তার মধ্যে একটা ভাল বিষয়, আমায় কাউকে কিচ্ছু দিতে হয় না পুজো উপহার হিসেবে। মা-বাবার কাছে আমি এখনও ‘খুকি’। তাঁরা কিছুতেই আমার থেকে নেবেন না। এক জনকেই খালি দিই, গৌরব চট্টোপাধ্যায়। ওঁকে দুটো পাঞ্জাবি দেব। অর্ডার দেওয়া হয়ে গিয়েছে। ছেলেদের বেশ ঝামেলা কম, তাই না? মাপ আর ডিজাইন দিয়ে দিলেই গল্প শেষ। আমাদের মেয়েদের এত ঝট করে সব মিটতেই চায় না!
আরও পড়ুন: মায়ের আঁচল ক্যারামে পড়ল...গুটি উধাও!
প্রতি বছর উদ্বোধন, বিচারকের আসন থাকেই। বিচারকই বেশি হই।
বোধন হোক, উৎসব নয়
সবাইকে ভাল রাখার প্রয়াস নিয়েছে ত্রিধারাও। তাই এ বারের পুজো থিম ‘বোধন হোক, উৎসব নয়’। খুবই ছোট করে দেওয়া হয়েছে পুজোর জায়গা। যাতে কেউ ঠাকুরের বেদিতে উঠতে না পারেন। আর যাতে কম মানুষ আসেন পুজো দেখতে। এ বছর গৌরাঙ্গ কুইল্যাকে দিয়েও কাজ করানো হচ্ছে না। বাজেট থেকে প্যান্ডেল- সব দিকেই ২০২০-র ত্রিধারার পুজো ভীষণ সাদামাঠা।
আমি এবং আমার মতো যাঁরা ত্রিধারার পুজো দেখে বড় হয়েছেন, তাঁরা জানেন- দেবাশিস কুমারের পুজো মানে রাত বাড়বে আর লাইন পৌঁছবে লেক মার্কেট বা গড়িয়াহাট। সেটা এ বছর যেন না হয়, মন থেকে চাইছি।
ত্রিধারার বাইরে বড় জোর ডিনার
আজন্ম এই পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে। তাই বাবার পুজোর বাইরে পা রাখব, চিন্তাতেই তা আসে না। ঘুম ভাঙলেই প্যান্ডেলে। সেখানেই অঞ্জলি, দুপুরে কমিউনিটি হলে একসঙ্গে পাত পেড়ে খাওয়াদাওয়া। বড় জোর রাতের ডিনারটুকু সারতে বাইরে যাই। আসলে ঢাকের বাজনা, লোকের ভিড়, পুজো মণ্ডপ ভীষণ টানে। প্রতি বছর উদ্বোধন, বিচারকের আসন থাকেই। বিচারকই বেশি হই। নাচের দল নিয়ে নানা প্রোগ্রামে যেতে হয় বলে উদ্বোধনে তুলনায় কম থাকি। এ বছর বিচারকের আসনেও নেই। কয়েক জন বলেছিলেন অনলাইনে প্রতিমা দেখে বিচার করতে। শুনে মনে হল- মা কেমন, এটা অনলাইনে দেখে বোঝা সম্ভব নাকি? তাই রাজি হইনি। তার বদলে আমার নাচের স্কুলের ইউ টিউব চ্যানেলের জন্য প্রোগ্রাম করলাম। ত্রিধারার প্যান্ডেলে এ বার এলসিডি লাগানো হবে। সেখানেই এই অনুষ্ঠান দেখানো হবে। কারণ, এ বছর আলাদা করে প্রাক-পুজো উদ্বোধনী করছে না ত্রিধারা।
প্রতি পুজোয় আমার বয়ফ্রেন্ড বদলে যেত।
ফুচকা? ওরে বাবা...
এ বছর কিছুতেই নয়। প্রতিজ্ঞা করেছি। ভ্যাকসিন বেরোচ্ছে না যে রোগের, তাকে আটকাতে ফুচকা থেকে দূরে থাকাই বাঞ্ছনীয়। খুব কষ্ট হচ্ছে জানেন! এই ত্যাগ স্বীকার করতে গিয়ে। কী করব? আগে তো বাঁচি! সামনের বছরের পুজোয় ডবল মজা করে নেব। রেস্তোরাঁতেও যাওয়ার আগে দু’বার ভাবব। কারণ, কর্তৃপক্ষ কতটা স্যানিটাইজড করে উঠতে পেরেছেন বুঝতে পারছি না। তবে, এই ক’দিন বাড়ির রান্না কক্ষনও না। বিরিয়ানি, মোগলাই, চাইনিজ- চলবে অনলাইনে। বাড়িতে বসে গুছিয়ে খাব। তবুও মনটা ফুচকার জন্যই হু হু করছে!
আরও পড়ুন:বাগডোগরার প্লেনের টিকিটটা শেষ মুহূর্তেও হয়ে যেতে পারে...
পুজো এলেই প্রেম বাড়ত
পুজো থাকবে আর প্রেম থাকবে না! প্রতি পুজোয় আমার বয়ফ্রেন্ড বদলে যেত। একটা করে নতুন পুজো, এক জন করে নতুন প্রেমিক। তাদের সব্বাইকে পাড়ায় নিয়ে চলে আসতাম। ফলে পাড়ার লোকেরাও আমার বয়ফ্রেন্ড বদল দেখতে দেখতে এক সময়ে বোর হয়ে গিয়েছিলেন! আতঙ্কে থাকতেন সবাই- এই রে! এ বছর না জানি আবার নতুন কাকে ধরে নিয়ে আসবে! কী করব, পুজো এলেই প্রেম বাড়ত আমার।
ঠাকুর ঠাকুর করে গৌরব আসার পরে গত তিন বছর ধরে তাতে লাগাম পরিয়েছি। এখন পাড়ার লোকেরাও নিশ্চিন্ত। বলতে ভুলে গিয়েছি, পুজোর একটা দিন গিরিশ মুখার্জি রোড যাওয়া বাঁধা থাকে। সবাই জমায়েত হই। একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া, আড্ডা, হইহই করতে করতেই দেখি পুজো ফিনিশ!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy