মাস্ক পরে ঠাকুরও দেখতে বেরোব হয়তো। মন খারাপ হবে জানি। তবে ধরেই নিন না, এ এক অন্য পুজো। ছবি: ফেসবুক।
আমার মনখারাপ। পুজো আসছে আর সন্দীপ্তা সেন কোথাও ঘুরতে যাচ্ছে না! এমনটা আবার হয় নাকি। এই তো দিন কয়েক আগেই এক বন্ধু জিজ্ঞাসা করল, ‘‘কী রে, এ বার কোথায়?’’ তাকে বললাম, ‘‘প্যাকিং ডান। পুজো আসতে দে। বেরিয়ে পড়ব।’’ সে চমকে গিয়ে জিজ্ঞাসা করল, ‘‘এ বারেও যাচ্ছিস! তুই পারিসও।’’ একবুক দুঃখ নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আমার উত্তর, ‘‘হ্যাঁ, হিন্দুস্থান পার্ক। বাড়ি থেকে হাঁটা পথ।’’
ওই ক’টা দিন টানে পাহাড়-সমুদ্র
এমনিতেই প্যান্ডেল হপিং আমার কোনও কালেই তেমন পছন্দ নয়। অত ভিড়ভাট্টা ভাল লাগে না। আমায় তখন পাহাড় টানে, মলদ্বীপের সমুদ্র হাতছানি দেয়। এই যেমন গত বার হুট করেই বেরিয়ে পড়েছিলাম নাগাল্যান্ড। কী অপূর্ব জায়গা... ছিমছাম... নিরিবিলি... প্রকৃতি দু’হাতে সাজিয়েছে যেন। আমায় তখন পায় কে? তার আগের বার গিয়েছিলাম লাক্ষাদ্বীপ। সমুদ্রের নোনা জল ছুঁয়ে যাচ্ছে পা, মনে বাজছে ঢাকের আওয়াজ। আমি তখন অন্য মেজাজে। অথচ এ বার সে সব কিছুই হবে না। এক-দু’দিনের জন্য বেরিয়ে পড়তে পারি। কিন্তু বেশ লম্বা একটা ছুটি নিয়ে ট্যুর, নাহ! কোনও সম্ভাবনাই নেই।
শপিংয়ের কী হাল?
অনেকেই জিজ্ঞাসা করছেন, শপিং করেছি কি না? আসলে বাঙালি তো, হাজার সমস্যার মধ্যেও পুজো এলে নতুন জামার গন্ধ পেতে ইচ্ছে করে খুব। অনলাইনে কেনাকাটা শুরু করেছি টুকটাক। বেশ কয়েকটা ডিজাইনার মাস্ক গিফট পেয়েছি। তবে জামার সঙ্গে মিলিয়ে মাস্ক কিনিনি। আমার পছন্দ ট্রেন্ডি, কটন মাস্ক। ফ্যাশন স্টেটমেন্টটাও থাকবে, আবার একই সঙ্গে করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধটাও জারি রাখা যাবে।
ওপেনিং-এ নেই
পুজোর সময়টা আমাদের প্রফেশনে অনেকেই খুব ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ফিতে কাটা থাকে, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নিতে হয়। এ বার কী হবে ঠিক বুঝতে পারছি না। আমি যদিও কোনও দিনই সে ভাবে ওই সব অনুষ্ঠানে অংশ নিই না। তবুও যে দু’চারটে অনেক অনুরোধে করতে হয়, তা-ও করব না এ বার। যাঁরা আমায় ভালবাসেন আমি গেলে তাঁরা দেখা করতে আসবেন, ভিড় জমবে আর এই অবস্থায় সেটা না হওয়াই ভাল। ধরে নিন না, এই বছরটা রেস্ট নেওয়ার বছর। বিশ্রামের বছর।
আরও পড়ুন: ধুতি সামলাতে পারিনা, তবে এ বার পুজোয় ট্রাই করতে পারি
এক বুক দুঃখ নিয়ে জানালেন পুজো আসছে আর সন্দীপ্তা সেন কোথাও ঘুরতে যাচ্ছে না!
পুজোয় প্রেম না হওয়ার পিছনে দায়ী বাবা
লিখতে লিখতে হঠাৎই ছোটবেলার কথা খুব মনে পড়ে যাচ্ছে। ভবানীপুরে আমাদের ৩০০ বছরের পুরনো বাড়ি ছিল। বড় বাড়ি, ঝুল বারান্দা, অনেক মানুষ একসঙ্গে। এখন যদিও সবটাই ফ্ল্যাট। সে যাই হোক, পুজো এলেই সারা বাড়ি জুড়ে হইহই। তুতো দিদি-দাদাদের সঙ্গে কত কথা, আড্ডা। তখন সবে সবে বড় হচ্ছি। প্রেম কী বুঝতে শিখছি। ফিসফিস করে দিদিদের আলোচনা করতে শুনছি, ‘‘দেখ দেখ, ওই ছেলেটা কি হ্যান্ডসাম!’’ রাতে দিদির পাশে ঘাপটি মেরে শুয়ে পরিষ্কার শুনতে পাচ্ছি, নতুন প্রেমের আদর মাখা ইজাহার। তবে দুঃখের বিষয় কি জানেন, কোনও পুজোতেই নিজের প্রেমটা হল না! তার জন্য দায়ী আমার বাবা।
আরও পড়ুন: বাঁকুড়ায় দেশের বাড়ির পুজোর একশো বছর, টেনশন হচ্ছে খুব
ভাবছেন তো, আমার বাবা হিটলার গোছের? উল্টো! হ্যাঁ, হ্যাঁ, ঠিক পড়ছেন! একেবারে উল্টো। কোনও দিন শুনেছেন, মেয়ে প্রেম করে না বলে কারও বাবা দুঃখ পাচ্ছে? একটা ঘটনা বলি শুনুন, তখন ক্লাস নাইন-টেনে পড়ি। বাবা আমাকে আর আমার এক দিদিকে ম্যাডক্স স্কোয়ারে নিয়ে গেল। পৌঁছেই বাবা বলে উঠল, ‘‘আচ্ছা শোন, আমি ওই সাইডে দাঁড়াচ্ছি। তোদের কাউকে পছন্দ-টছন্দ হচ্ছে কি না দেখা। একটু তাকানোর হলে তাকিয়েও নিতে পারিস। ‘ঝারি মারার’ পারমিশনও আছে। আমার সামনে তো পারবি না। তাই সরেই যাচ্ছি বরং। হয়ে গেলে বলিস।’’ আমরা তো শুনে হাঁ, এ আবার কী! এ বার আপনিই বলুন, এত স্বাধীনতা পেয়ে গেলে প্রেম করার থ্রিলটা মাঠে মারা যায় কি না!
এ বারেও মা আসবে, মণ্ডপে ঢাক বাজবে, মাস্ক পরে ঠাকুরও দেখতে বেরোব হয়তো। মন খারাপ হবে জানি। তবে ধরেই নিন না, এ এক অন্য পুজো। ভাল থাকার ইচ্ছের পুজো, নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখার পুজো!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy