আমাদের বাড়ি নদিয়া জেলার তেহট্ট গ্রামে। গ্রামের পাশেই জলঙ্গি নদী। আমাদের জীবনের সব কিছুর সঙ্গে এই নদীও ওতপ্রোত জড়িত। দুর্গাপুজো বিসর্জনের সঙ্গেও রয়েছে জলঙ্গি নদীর গভীর যোগসূত্র। আমার ছোটবেলার বিসর্জনের স্মৃতিও এই নদীর সঙ্গেই জড়িয়ে আছে।
ছোটবেলায় যখন দেশের বাড়িতে থাকতাম তখন সব আত্মীয়স্বজন মিলে বিসর্জনের দিন নৌকায় করে ঘুরে বেড়াতাম। নদীতে ঘুরে ঘুরে ঠাকুর দেখতাম। আমাদের এক ডাক্তার দাদু ছিলেন। তিনি সবার জন্য নৌকা ভাড়া করতেন আমাদের সবাইকে দশমীর দিন নদীতে ঘোরানোর জন্য। প্রতি বছর তাঁর ভাড়া করা নৌকায় ঘোরার জন্য আমরা খুব অপেক্ষা করে থাকতাম। গ্রামের যত ঠাকুর তখন নৌকায় করে নদীতে ঘুরছে। বাজি ফাটানো হচ্ছে, ঢাক বাজছে, মাইকে গান চলছে... সে এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা। অন্ধকার আকাশের গায়ে বাজির ফুলকি ছড়িয়ে পড়ছে। দারুণ লাগত দেখতে। মাইকের গান হাওয়ার গতির সঙ্গে ভেসে ভেসে কখনও একেবারে কাছে শোনা যাচ্ছে তো কখনও মনে হচ্ছে দূর থেকে গান ভেসে আসছে। ভাসানের মেলা উপলক্ষে নদীর ধারে কত অস্থায়ী দোকান যে বসত! তেলেভাজার দোকান, খেলনার দোকান, বেলুন ফাটানোর দোকান, মেয়েদের গয়নার দোকান। কত রকম জিনিস যে কিনতে পাওয়া যেত। আর অবশ্যই থাকত পাঁপড় ভাজা আর জিলিপির দোকান। তখন অনেকেই আমরা ছোট ছিলাম। নানা জিনিস কেনার জন্য অনেকেই বায়না করতাম। মা-বাবারা কিনেও দিত অনেক কিছু। আত্মীয়স্বজন, ডাক্তার কাকুও সবার জন্য খাবার কিনত। আমাদের জন্য খেলনাও কিনত। আর গ্রামের কত লোকজন যে নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে নতুন পোশাক পরে ভাসান দেখত! সবার পক্ষে তো নৌকা ভাড়া করে নদীতে ভেসে পড়া সম্ভব ছিল না। কিন্তু তাও সবার মুখে উৎসবের আনন্দ টের পাওয়া যেত।
আমরা বিকেল থেকে নৌকায় ঘোরা শুরু করতাম। ঘণ্টা দেড়েক ধরে নদীতে আমাদের ঘোরাঘুরি চলত। সে এক হইহই রইরই ব্যাপার। খুব মজা করতাম সবাই মিলে। নিজের চোখে ভাসান দেখার সেই স্মৃতি এখনও আমার মনে পড়ে। বিসর্জনের পরে অবশ্যই মনটা একটু একটু খারাপ হত।
আরও পড়ুন:বেড়াতে এসে পুজোটা খুব ভাল কাটাচ্ছি: অপরাজিতা
‘বকুল কথা’-র শুটিংয়ে ঊষসী
আরও পড়ুন:পুজো কাটবে খুব টেনশনে: অনির্বাণ
শেষ ক’বছর পুজোর সময় দেশের বাড়ি যাওয়া হয় না। মাত্র ক’দিনের ছুটিতে সব কিছু করা সম্ভবও হয় না। তা ছাড়া গ্রামের আত্মীয়স্বজন সবাই কাজের সূত্রে নানা জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকে কলকাতাতেই থাকে। সেই আগের মতো মজাটাও এখন হওয়া সম্ভব নয়।
ইদানীং দশমীর দিনটা অন্য রকম ভাবে কাটে। আমি সাধারণত পুজোর সময় বেড়াতে চলে যাই। কলকাতার বাইরে থেকে দশমীতে সে রকম কিছু বুঝতে পারি না। বিসর্জনের দিনটা কখন এল আর কখন গেল আলাদা করে ঠিক বুঝতে পারি না। কিন্তু অবশ্যই পুজোর জন্য সারা বছর আমরা অপেক্ষা করে থাকি। বিসর্জনের দিনটা যখন আসে একটু তো মন খারাপ হয়ই। আবার এক বছরের অপেক্ষা শুরু হয়। সব মিলিয়ে একটা মিশ্র অনুভূতি হতে থাকে। কারণ দুর্গা পুজো শেষ হওয়া মানে আবার ভাইফোঁটা আছে, কালীপুজো আছে, লক্ষ্ণীপুজো আছে, জগদ্ধাত্রী পুজো আছে। এখন যেহেতু পড়াশোনার পাট চুকে গিয়েছে, তাই হাফ ইয়ার্লি পরীক্ষা, রেজাল্ট বেরনো এগুলো আর নেই। সব মিলিয়ে এখন পুজোর সময়টা উপভোগই করি, মিলিয়ে-মিশিয়ে একটা অনুভূতি হয়।
কিন্তু পুজো শেষ মানে আমাদের ছুটিও শেষ। নিজের মতো ঘুরে বেড়ানোও শেষ। এখন সবার আগে কাজ। তাই পুজোর পর আবার শুটিংয়ে যোগ দিতে হয়। ‘বকুল কথা’-র ‘বকুল’ হয়ে যেতে হয় আবার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy