Advertisement
E-Paper

ছ’বিঘে জমি কিনে নিজের কবর খুঁড়ে রেখেছি : শিলাজিৎ

প্রেমজীবন থেকে কবীর সুমন-নচিকেতা চক্রবর্তী থেকে নিজের গানজীবন, এমনকি মুম্বইয়ে ডাক পাওয়া, গ্রামের বাড়ি, বাবা-মা। সবটা নিয়ে অকপট শিলাজিৎ! সামনে আনন্দবাজার অনলাইন

আনন্দ উৎসব ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২৩ ১৭:৫৮
Share
Save

শাহরুখ খানের পাড়ায় শিলাজিৎ কী করছেন?

(হাহাহাহা) আমি এখন কিন্তু মিঠুন চক্রবর্তীর পাড়ায়। মুম্বইয়ে মাড আইল্যান্ডে এসেছি। ছেলে নতুন চাকরি পেয়ে এখানে থিতু হল। তাই ইলিনা (বউ) আর আমি ওর সঙ্গে দেখা করতে এসেছি! ১১ তারিখ ফিরে যাব!

ইলিনা? ওর সঙ্গে তো শুনেছি আপনার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে!

আরে ধুর! ও আর আমি আলাদা বাড়িতে থাকি শুধু। আপনাকে যখন ইন্টারভিউ দিচ্ছি, তার মাঝেই ও চা দিয়ে গেল!

বোঝো! এক দিকে বৌ, অন্য দিকে অগণিত প্রেমিকা! সামলান কী করে?

ও হয়ে যায় বস! আমার আর ওর একটা মিউচ্যুয়াল বোঝা পড়া আছে। সেখানেও অবশ্য গল্প থাকে। আমার প্রেমে কেউ যদি পড়ে তবে চাপ নেই, সেটা মেনে নেয়। কিন্তু আমি যদি কারও প্রেমে পড়ি তা হলে তো চাপ খাবেই। একটা মজার কথা মনে পড়ল, আমার, ধী আর ইলিনা প্রসঙ্গে। সে দিন আমরা মেট্রো করে মেরিন ড্রাইভ যাচ্ছিলাম। আমাদের অজান্তে ধী একটা ছবি তুলে ইন্সটাতে দিয়েছে দেখলাম। তাতে একটা পুরনো গানের অডিয়ো ক্লিপ দিয়েছে, ‘গোলমাল হ্যায় ভাই সব গোলমাল হ্যায়’! হা হা হা হা।

শিলাজিতের বয়স কত হল?

দু’বছর বাদে প্রবীণ নাগরিক হয়ে যাব!

তাতেও তিনি যৌবনের উত্তাপ ধরে রেখেছেন! কী করে ভাই?

গুরু, এর জন্য ভাল করে চান করতে লাগে! প্রেম করতে হয় প্রচুর। কে কী বলল, তাতে ইয়ে করে নিজের মতো বাঁচতে লাগে!

শিলাজিৎ নিজের কবর নিজে খুঁড়েছেন! সত্যি?

হাহাহাহা! খুঁড়েছি! বোনক্ষতিপুর বলে একটা জায়গায় সস্তায় ছয় বিঘা মতো জমি কিনেছি। একটা সাঁওতাল গ্রাম। সেখানে ছ’ফট জুড়ে কবর। আমি জানি মরে গেলে ওই জায়গাটা একটা ট্যুরিস্ট স্পট হয়ে যাবে। ছেলেকে বলেছি, আমার মালপত্র যা যা থাকবে, হাড়গোড় সমেত সে সব ওখানে দিয়ে আমায় মাটি চাপা দিয়ে দিবি। আর ওপরে লিখে রাখবি, ‘লোকটা বেঁচে ছিল’।

বুঝলাম! আচ্ছা, একটা কথা বলি, শিলাজিৎ ‘অটোগ্রাফ’ দিতেও পয়সা চায়! লজ্জা করে না?

কীসের লজ্জা! এখন তো এক সঙ্গে ছবি তুলতেও তাই করি!

এ তো শাহরুখ খানও নেন না!

ওঁর সেই ধক নেই বলে! (হাহাহাহা) নিলে ভাল করতেন। ওই টাকায় সাধারণ মানুষের জন্য অনেক কাজ করতে পারতেন!

আপনি সে সব করেন? নাকি ফুর্তিবাজি করে উড়িয়ে দেন টাকা?

না ভাই! একটা সংস্থা আছে। সেখানে প্রচুর সেবামূলক কাজ হয়। এই টাকা সেখানে দিই।

হুম! আচ্ছা, শিলাজিতের গান নিয়ে যখন লোকে খোঁটা দেয়, আপনি কী করেন তখন?

কী আর করব! (হাহাহাহা) খোঁটাটা তো বাড়িতে ইলিনা থেকে শুরু হয়েছিল। এখন গা সওয়া হয়ে গিয়েছে।

না, এই ধরুন, কিছু দিন আগে আনন্দবাজার অনলাইন-কে এক সাক্ষাৎকারে নচিকেতা চক্রবর্তী বললেন, ওর কোনও গানই আমার ভাল লাগে না। তবে ও খুব সুস্বাস্থ্যবান!

এটা ওঁর স্ট্যান্ড। কিন্তু আমাদের সঙ্গে নচির সম্পর্ক খুব ভাল। কুড়ি বছর আগে হয়তো, ও বলত, ‘কে শিলাজিৎ?’, এ সব আজকাল বলে না। আর আমি স্বাস্থ্যবান এটা আমি জানি। এটা তো গুরু, আমার বাপ-মায়ের অবদান। কী করব! (হাহাহাহা) ও বোধ হয় কমপ্লেক্স থেকে বলেছে (হাহাহাহা)। ও-ও স্বাস্থ্যবান হোক। নচি আমার চেয়ে বয়েসে বড়। কিন্তু ‘দাদা’ বললে রেগে যায়! তবে এটুকু বলব, নচি খুব রসিক। আমাদের আড্ডাটাও খুব জমে।

খোঁটাটা এক সময় কবীর সুমনও দিতেন! এখন অবশ্য উনি বাংলা খেয়াল নিয়ে নিমগ্ন!

ওম্মা! তাই? সে ওঁর খেয়াল (হাহাহাহা)! তবে একটা কথা বলি, সুমনবাবু, নচি, অঞ্জনদা (দত্ত) এঁরা সব আমার চেয়ে ৩০-৪০ নম্বর এগিয়ে। গান, কম্পোজিশন, সবেতে। এর সঙ্গে আমি জুড়ে গেলাম। ৯০ দশক থেকে। বাঙালি কিন্তু বহু দিন বাদে এ জিনিস দেখছে!

আচ্ছা, আপনি কোনও দিন মুম্বই থেকে ডাক পেয়েছেন?

বিশাল ভরদ্বাজের যে সাম্প্রতিক সিনেমাটা রিলিজ করল, ‘খুফিয়া’ বলে, ওখানে বিশাল আমাকে ডেকেছিলেন। গিয়েওছিলাম। বৃষ্টির জন্য শুটিং ভেস্তে গেল। তার পর আমিই ‘ডেট’ দিতে পারিনি। মিউজিক করার জন্য অবশ্য ডাক আসেনি। তবে এটা বলি, ‘কেরালা স্টোরি’র সঙ্গীত পরিচালক আমায় নিয়ে আগ্রহ দেখিয়েছেন।

শোনা যায়, আপনাকে বিজেপি থেকে রাজনীতিতে যোগ দিতে বলা হয়েছিল। সত্যি?

শুধু বিজেপি নয়, তৃণমূলও ডেকেছিল। আসলে আমি দু’পক্ষকেই বলেছি, আগে আপনারা আপনাদের রাজনীতিটা বোঝান, তার পর আমি ভাবব!

তার পর?

তার আর পর নেই গুরু! আসলে এখানে একটা ব্যাপার আছে। বীরভূমে আমি গড়গড়িয়া অঞ্চলে প্রায়ই থাকি। ওখানে প্রায় ১২০ বছরের পুরনো বাড়ি আমাদের। আমার প্রপিতামহর করা। গড়গড়িয়াতে একটা সরকারি স্কুল রয়েছে, বহু পুরনো। কিন্তু খুব বেহাল অবস্থায় রয়েছে। স্কুলের একটা পাঁচিল অবধি নে‌ই। অনেকটা অংশর ভগ্ন দশা। দশ বছর ধরে চেষ্টা করছি, সমস্যা মেটানোর। পারিনি। অনেকেই বলছে, এ সব করতে গেলে নাকি রাজনৈতিক কোনও দলে নাম লেখাতে হয়। আমি এখনও ভাবছি, দেখি না, নিজে থেকে চেষ্টা করে। স্কুলটা আমার ঠাকুমার নামে। নিরুপমা বিদ্যামন্দির। আমার দাদু এবং অনেক গ্রামবাসী স্কুল গড়তে জমি দান করেন। এখন খোলা চত্বরের সুযোগ নিয়ে শনি মন্দির, মুরগির দোকান, শহিদ বেদি করে ফেলেছে অনেকে। ৩০-৩৫ বছর ধরে এমনটা চলছে। আমি লড়ে যাচ্ছি, স্কুলটাকে ভাল করার। দেখি কী হয়!

পুজোয় কি গড়গড়িয়ায় থাকবেন?

হ্যাঁ। একদম। ধী (ছেলে), ইলিনা মুম্বইতে থাকবে। গড়গড়িয়ার গ্রামের পুজো আছে। সেখান থেকে আমার মামার বাড়ির পুজো আছে। দু’টো মিলিয়ে থাকব।

আচ্ছা, আপনার ছেলের নামটা ‘মেঘ’ সরিয়ে ধী হয়ে গেল কী খেয়ালে?

এর জন্য দু’টো মানুষ দায়ি। এক অশোক শর্মা। প্রযোজক। যে এখন নাম বদলে নীতেশ শর্মা। দুই, সঙ্গীত পরিচালক ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত। যে আগে ছিল চিরদীপ। এই দু’টোতে ইলিনা খুব চাপ খেয়ে গিয়েছিল। তো, মুম্বই থেকে এক জ্যোতিষী এলেন, তিনি বললেন, ছেলের নাম ‘ধ’ দিয়ে রাখতে হবে। তখন ওর নাম হয়ে গেল ধী। পারলে আমার নামটাও বদলে দেয় আর কী! আমি বললাম, মরে গেলেও বদলাবো না। ওটা আমার বাবার দেওয়া।

ছোটবেলায় ইস্কুলে পড়তে আপনি মোটেই দুষ্টুমি করতেন না! ডানাটা গজালো কবে থেকে?

হাহাহাহা! সত্যিই। ডানাটা গজালো ক্লাস ইলেভেনে, স্কটিশে কলেজে ঢোকার পর।

তখন মিঠুন চক্রবর্তীকে আপনি বলতেন গৌরাঙ্গ কাকু! এটা কেন?

আসলে উনি আমার কাকার বন্ধু ছিলেন। তাই। ঢপ মারতাম না, ভাই। আমার ঠাকুমা ছিলেন ওঁর ভিক্ষে-মা। আমার বাবা ওঁকে প্রথম মঞ্চে ওঠার সুযোগ করে দেন।

আচ্ছা, শিলাজিতের কিছু কিছু বিশেষ ভাষা প্রয়োগ আছে। যেমন শিলাজিৎ ‘টাটা’ বলেন না, বলেন, 'টাট্টু'!

‘জয় গুরু, এন জয় গুরু’! এটাও তো! আসলে লোকজন যা বলে, করে সেই পথে না হেঁটে অন্য কিছু করতে যাওয়াটা আমার বোধহয় পারিবারিক সূত্রে পাওয়া। এই যেমন, আমার দাদুকে দেখতাম, দাঁত মাজতেন, মধ্যমা দিয়ে। অন্যরা যেখানে তর্জনী দিয়ে মাজতেন।

বাবা-মা শিলাজিতের খুব স্পর্শকাতর জায়গা! কোনও দিন ওঁদের নিয়ে গান লেখার কথা ভেবেছেন?

মা’কে নিয়ে একটা লাইন প্রায়ই মাথার মধ্যে ঘোরে, ‘মাকে নিয়ে কোনও গান লেখা আর হল না’। আর এগোতে পারিনি।

শেষ প্রশ্ন, শিলাজিৎ মানেই লোকে খুব রসিক, প্রাণোচ্ছল ভাবে। আমি জানতে চাই, শিলাজিতের কখন কান্না পায়?

(অনেকটা ভেবে) পায় কান্না। (থেমে) আমি কাঁদি। তবে সেটা প্রিয়জন বিয়োগ বা প্রেমজনিত কারণে নয়। অন্য কিছু। .. শেষ কবে কেঁদেছি, মনে পড়ে না। (থেমে গেলেন)

হুম। অনেক ধন্যবাদ। টাট্টু।

(হাহাহাহা) টাট্টু।

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

Silajit Majumder Celeb Puja Celebration

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।