পরান বন্দ্যোপাধ্যায়
প্রবাদে বলে — ‘বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর!’ ভূত এবং ভগবান, দুয়ের ক্ষেত্রেই মানুষের দর্শন কিছুটা এমনই। এই ‘বিশ্বাস’ কিন্তু বেশ গোলমেলে! কখন যে ‘যুক্তি’কে দশ গোল দিয়ে দেবে, বুঝতেও পারবেন না! যাকগে, ভূতচতুর্দশীর দিনে ভগবানের প্রসঙ্গ টেনে তেনাদের না হয় অপ্রস্তুতে নাই বা ফেললাম! ভূত নিয়েই গল্প হোক বরং। ভয় বিষয়টাকে আসলে প্রশ্রয় দিই আমরাই। বলা চলে, আমরা এক কথায় ‘ভয় বিলাসী’! ভয় পেতে ভাল লাগে আমাদের। আর মজাটাও সেখানেই! মানুষ তৈরিই থাকে ভূতের ভয় পাওয়ার জন্য। আর ঠিক সেই কারণেই ভয়টা পায়!
গ্রামাঞ্চলের কথাই ধরা যাক। দিনের বেলা হয়তো দেখলেন শুকনো কলা পাতা হাওয়ায় নড়ছে। সেটাই চাঁদের আলোয় দেখে মনে হয় কেউ যেন হাত নেড়ে ডাকছে। হয়তো এক ব্যক্তি রাতে রাস্তা দিয়ে হাঁটছেন, তখনই রাস্তায় ওই কলা গাছের পাতা দেখলেন। কিন্তু বাড়িতে গিয়ে কী বললেন? “জানেন তো, আমার নলিনীর মা আবার আবার ফিরে এসেছে… আরে ধুর মশাই! নিজের স্ত্রীকে চিনব না? আমি নিজের চোখে দেখেছি…” বোঝো কাণ্ড!
এখান থেকেই এক মজার ঘটনা মনে পড়ল। আমার বন্ধুর এক আত্মীয়ের বাড়ির ঘটনা। তাঁদের বড় বাড়িতে একটি পিয়ানো ছিল। রাত হলেই নাকি সেটা নিজে নিজে বেজে উঠত। তা-ও আবার অন্ধকার ঘরে। কিন্তু আলো জ্বালালেই সেই আওয়াজ বন্ধ! দিনের পর দিন এমন চলতে থাকায় শেষমেশ মনের ভুল কি না ধরার জন্য এক মনের চিকিৎসককে ডেকে আনা হল। জানেন, কী দেখা গেল শেষে?
পিয়ানোর মধ্যে ছোট ছোট ইঁদুরের বাচ্চা। ঘরের আলো নিভলেই ওদের দুষ্টুমি শুরু হয়ে যায়। ওদের মা যখন খাবার নিয়ে পিয়ানোর উপর দিয়ে যায়, তখনই আওয়াজটা হয় এবং আলো জ্বালানোর সঙ্গে সঙ্গেই সব ভয়ে চুপ! কিন্তু ওরা নিজেরাই জানে না, ওদের ভয়েই মানুষ কাবু হয়ে আছে!
আসলে ভূতের ভয়টা খুব মজার ভয়। ধরুন, আপনি কোনও নির্জন জায়গায় বসে আছেন। এমন সময়ে কোনও রাতজাগা পাখির ডাক কানে এল। স্বাভাবিক ভাবেই আপনি ভেবে নিলেন কেউ হয়তো আসছে! কিন্তু কে যে আসছে, তা ভগবানও জানেন না। সবটাই আপনার কল্পনা। কোথায় নিজের সৃষ্টিতে খুশি হবেন, তা না করে ভয় পেয়ে উঠে চলে গেলেন ওখান থেকে, আজব!
এখানেই আমি একটু ব্যতিক্রমী। অন্য মানুষের ভূত দেখে আত্মারাম খাঁচা ছাড়া হোক, আমার বেশ লাগবে! কিন্তু নিজে ভূতে ভয় পাই না কখনও। ওই যাকে বলে দূর থেকে মজা নেওয়া। যদিও এটাই সহজ প্রবণতা। একটা ভূতের গল্প আপনি যতটা শুনতে উপভোগ করবেন, ততটা কি অভিজ্ঞতা পেতে চাইবেন?
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy