Advertisement
E-Paper

‘পুজোয় আমার আর প্রেম করা হল না’ আক্ষেপ দেবশঙ্কর হালদারের

পুজোয় প্রেমিকার সঙ্গে কেন তাঁর হাত ধরাধরি হাঁটা হল না? পুজো ঘিরে এমন অনেক কাহিনির মোড়ক খুললেন তিনি আনন্দবাজার অনলাইন-এর কাছে।

ছবি: সন্দীপ কুমার

ছবি: সন্দীপ কুমার

আনন্দ উৎসব ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৬:১৭
Share
Save

এখন পুজোয় নাটক করলেও, কৈশোরে পাড়ার পুজোয় কোনও দিন থিয়েটার করিনি। আমার বাবা, অভয় হালদার ছিলেন যাত্রার মানুষ। বাবার সুবাদে পুজোয় একটা সময় খুব যাত্রা দেখেছি। তবে বাবাকে পুজোতে পেতামই না।

যাত্রার জগতে একটা কথা আছে 'ষষ্ঠী থেকে জষ্ঠি’। আসলে, পুজোয় ষষ্ঠীর দিনে নতুন পালা শুরু হয়, সে পালা শেষ হয় পরের বছর জ্যৈষ্ঠ মাসে, তাই।

আমার সমস্ত বড় হওয়ার মধ্যে আমার দাদারা। জীবনে নানা রকম প্রেমের ব্যাপারে রঙিন হতে চাওয়া ওদের কাছেই শেখা। কিন্তু পুজোর সময় অনেকের মতো আমারও প্রেম পেত। কিন্তু মনের মতো প্রেমিকা কোনও দিন পাইনি। তাই প্রেমিকার সঙ্গে পুজোয় হাত ধরাধরি করে ঘুরতে যাওয়াও হয়নি।

সোদপুরে আমাদের একটা পারিবারিক পুজো হয়। এ বার সেখানে যাব সস্ত্রীক। আমার ছেলে শৌর্য, ডাকনাম পুটু। ও পুজোয় বেঙ্গালুরুতে থাকবে।

যে কোনও শব্দের মতো পুজো শব্দটারও একটা রূপ আছে। সেটা চিরকালীন। নীল আকাশ, সাদা মেঘের ভেলা, শিউলি ফুলের গন্ধ, কাশফুলের দোলা, ঢাক ঢোল কাঁসর ঘণ্টা...! শুধু একটাই বদল হয়েছে। ছোট বেলায় পুজোর আনন্দের অনেকটাই নির্ভরশীল ছিল বাবা-মা-মামা-কাকা-জ্যাঠা-জেঠিদের ওপর। এখন তা নেই। এখন নিজের রুচি মতো নিজের জামাকাপড় কেনার স্বাধীনতা আছে। কিন্তু এই নিজের জামা নিজে কিনতে পারার সক্ষমতা নতুন জামা কিনতে উদ্বুদ্ধ করে না। মনে হয় নিজের জন্য না কিনে অন্যদের জন্য কিনি।

ছেলে বেলায় পুজোর পর বহরমপুরে যেতাম। হরিহরপাড়ায় আমার মামার বাড়ি। লক্ষ্মীপুজো ওখানে কাটিয়ে কালীপুজোর আগে ফিরে আসতাম শহরে। এখন সে সব জীবন থেকে হারিয়ে গিয়েছে। পুজো এলে অনেক হারিয়ে ফেলাকে খুঁজি আমি। কত বন্ধু, যারা এক সময় কাছে ছিল, এখন প্রবাসে। অনেকে আবার এই পৃথিবী ছেড়েই চলে গিয়েছে।

আমাদের পাড়ায় টুটু বলে একটা বন্ধু ছিল। ভাল নাম ইন্দ্রনীল সিনহা। ওদের গোটা পরিবারে আর কেউ বেঁচে নেই। ওদের কথা মনে পড়লে কেমন আনমনা লাগে! টুটু প্রবল ভাবে শচীন দেব বর্মন আর রাহুল দেব বর্মনের অনুরাগী ছিল। পাড়ার পুজো মণ্ডপের মাইকে প্রথম যে আর ডি বা এস ডি-র গান বাজত, তা ওদের বাড়ির থেকেই আসত। প্রত্যেক পুজোয় টুটু আমার স্মৃতিতে প্রবল ভাবে ফিরে ফিরে আসে।

ইদানীং পুজোয় দু-একটা দিন কাজ রাখি না। ইচ্ছে করে বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন সবার সঙ্গে পুজোর দিনে দেখা করি, আড্ডা দিই। একটু জমিয়ে খাওয়াদাওয়া করি। ঠাকুর দেখতে যাই।

প্রতি পুজোয় আমি নিজেকে নতুন করে ফিরে পাই। পুজো আমার শৈশব, আমার কৈশোর। আমার যৌবনের থেকে ধীরে ধীরে প্রৌঢ়ত্বের দিকে যাওয়া। এই তিনটে কাল হাত ধরাধরি করে এসে আমায় এক জায়গায় দাঁড় করিয়ে দেয়। সেই প্রতিমা যাকে দেখেছিলাম এক দিন পঞ্চমীর ভোরে, যিনি আমাদের পাড়ায় এসেছিলেন কোন সে শৈশবে, আজও চোখ খুললে সেই মাতৃমূর্তি দেখতে পাই। সব যেন একই রকম আছে মনে হয় হঠাৎ।

ইচ্ছে আছে, এ বার পুজোয় আমি আর আমার স্ত্রী মুনমুন কোনও পুজো মণ্ডপে গিয়ে হারিয়ে যাব। অন্তত কিছুক্ষণের জন্য হারিয়ে গিয়ে পরস্পরকে খুঁজব। তবে বেশিক্ষণের জন্য নয়। পুজোয় এক সঙ্গে, অনেকে মিলে আরও আনন্দ করার বাসনা আছে। আজও, এখনও।

অনুলিখন: সংযুক্তা বসু

এই প্রতিবেদনটি 'আনন্দ উৎসব' ফিচারের একটি অংশ।

Debshankar Haldar Actor Celeb Puja

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}