Advertisement
E-Paper

শিরদাঁড়া বেয়ে ঠান্ডা স্রোত! রাতে কাকে দেখলাম তবে? ভূতচতুর্দশীর আগে লিখলেন অম্বরীশ

প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, রাতের বেলায় নাকি লোকের ভূতের ভয় হয়। আদতে তা নয়। সবটাই মানুষের মনে। তাই এই কথা শুনে ওই সকাল বেলাতেও আমাদের শরীরে ভয়ের চোরা স্রোত বইছিল।

অম্বরিশ ভট্টাচার্যের ভৌতিক অভিজ্ঞতা

অম্বরিশ ভট্টাচার্যের ভৌতিক অভিজ্ঞতা

অম্বরীশ ভট্টাচার্য

অম্বরীশ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০২৪ ১৭:০০
Share
Save

আমার তখন বেকার জীবন। হাতে খুব বেশি টাকা-পয়সা নেই, তাই দূরে কোথাও বেড়াতে যেতে পারতাম না। আমার এক বন্ধু ছিল সে সময়, সেই বন্ধু আর আমি কাছে-পিঠে এ দিক ও দিক ঘুরে বেড়াতাম।

আমাদের বাড়িতে মালতী মাসি কাজ করতেন। ওঁর এক আত্মীয়ের বাড়ি ছিল টাকি হাসনাবাদে। পাশে ইছামতি নদী। ওখানে জেলেপাড়া নামে একটি জায়গা আছে। ওই গ্রামের পুরুষেরা সন্ধের পর সকলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। সারা রাত নদীতে জাল ফেলে মাছ ধরে। তারপর সকালবেলা সেই মাছগুলো বিক্রি তারপর ফিরে আসে।

তাই সন্ধ্যার পর থেকে এলাকাটা পুরোপুরি পুরুষ বর্জিত হয়ে যায়। আমাদের খুব ভাল লেগেছিল এই গল্পটা শুনে। তাই আমি আর আমার বন্ধু জেলে পাড়া দেখতে গিয়েছিলাম।

মালতী মাসির আত্মীয় ছিলেন পেশায় জেলে, নাম ছিল বাবুলাল মণ্ডল। তাঁর বাড়িতে গিয়েই উঠেছিলাম আমরা। প্রথম দিন পৌঁছতে পৌঁছতে বিকেল। বাবুলাল এবং তাঁর ছেলে সন্ধ্যার পর মাছ ধরতে বেরিয়ে যান। আমাকে আর আমার বন্ধুকে সাবধান করে গিয়েছিলেন বার বার। বলেছিলেন, যেন সূর্য ডোবার পর ওই গ্রামে আর ঘোরাঘুরি না করি।

গ্রামে সেই সময় বিদ্যু এসে পৌঁছায়নি। আমি শহরে বড় হয়েছি, তাই একটা গোটা গ্রাম বিদ্যুৎহীন হলে কেমন দেখতে হয়, সেই প্রথম অভিজ্ঞতা হয়েছিল। শুধু চাঁদের আলোটুকু ছাড়া কোথাও কোন আলোর লেশমাত্র নেই।

সন্ধ্যার পর ঘরে বসে বসে আর ভাল লাগছিল না। তাই বাবুলালের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই রাস্তায় বেরিয়ে পড়ি। ইছামতি নদীর ধার দিয়ে হাঁটছি, ফুরফুর করে হাওয়া দিচ্ছে, আর চাঁদের আলো এসে পড়ছে আমাদের উপরে। আহা সে কী দৃশ্য!

বেশ কিছুটা হাঁটতে হাঁটতে দেখলাম একটা নীল আলো জ্বলছে আর নিভছে। এগিয়ে গেলাম আলোর দিকে। এই সময় গ্রামে কোনও পুরুষ থাকার কথা নয়। কিন্তু গিয়ে দেখি, খাটো ধুতি পরা একজন বয়স্ক ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে বিড়ি খাচ্ছিলেন। বয়স ৬৫ থেকে ৭০। ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে আমরা বললাম “আপনি মাছ ধরতে যাননি?” উনি উত্তরে বললেন “না আমি তো আর এখন মাছ ধরতে যাই না।”

আমরা নাম জিজ্ঞেস করতে উনি বলেন পরান মণ্ডল। তার পর নিজেই বললেন, “তোমরা তো বাবুলালের বাড়িতে এসেছ। তোমরা এখন বেরিয়েছ কেন? বাবুলাল তোমাদের বলে দেয়নি যে সন্ধ্যার পর এখানে ঘুরে বেড়ানোটা ঠিক নয়?”

আমরা বললাম, “হ্যাঁ বলেছিল, কিন্তু আমরা তাও একটু বেরিয়েছি গ্রামটা দেখতে।” পরান মণ্ডল তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে বললেন, “না সন্ধ্যার পর এখানে আর বেরিও না।”

চাঁদের আলোয় পরিষ্কার দেখলাম পরান মণ্ডলকে। বেশ কিছু ক্ষণ কথাও বললাম। এর পর বাড়ি ফিরে আসি। ওখানে সাড়ে ৮টা-৯টার মধ্যেই মধ্য রাত। খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। পরের দিন অনেক সকাল বেলা ঘুম ভেঙে গেল। ইতিমধ্যে বাবুলাল আর তাঁর ছেলে ফিরে এসেছেন।

উঠোনে বসে সকালে মুড়ি খেতে খেতে গল্প হচ্ছে। বাবুলাল, তাঁর ছেলে, স্ত্রী এবং আমরা দুই বন্ধু। কথা প্রসঙ্গে আমি বাবুলালকে জিজ্ঞেস করলাম, “আপনি যে বললেন সন্ধ্যার পর কোনও পুরুষ মানুষ এই গ্রামে থাকে না, কালকে তো সন্ধ্যাবেলা এক ভদ্রলোকের সঙ্গে আমাদের দেখা হল।” বাবুলাল জিজ্ঞেস করলেন, “কার সঙ্গে দেখা হল?” আমি বললাম “পরান মণ্ডল।” নামটা শুনেই আঁতকে উঠলেন সকলে। বাবুলাল আবার জিজ্ঞেস করল আমাকে, “কার সঙ্গে দেখা হয়েছে?” আমি আমার বন্ধুর দিকে তাকিয়ে বললাম “পরান মণ্ডল তো?” বন্ধুও সম্মতি জানাল। বাবুলাল জিজ্ঞেস করলেন “দেখতে কেমন?” আমি বললাম “ছোটখাটো, কাঁচা পাকা খোঁচা খোঁচা চুল, বয়স ৬৫ থেকে ৭০-এর মধ্যে।” এ কথা শুনেই বাবুলালরা একে অপরের দিকে চাওয়াচাওয়ি করলেন। এবং তাঁদের চোখে-মুখে ছিল ভয়। দেখলাম, মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গিয়েছে। কয়েক মুহূর্ত পরে বাবুলাল বললেন “এটা তো হতে পারে না।” আমরা কারণ জিজ্ঞেস করায় তিনি বললেন, “পরান মণ্ডল তো কাল দুপুরে মারা গিয়েছেন।”

আমি একেবারেই বিশ্বাস না করে বিরক্ত হয়ে বললাম “একদম বাজে কথা বলবেন না, এটা হতে পারে না।” বাবুলাল দৃঢ়ভাবে জানালেন “হ্যাঁ, গতকাল দুপুরে মারা গিয়েছেন তিনি। তোমরা এখানে আসার একটু আগেই তাঁকে দাহ করে আসা হয়েছে।” এই কথাটা শোনার পর দিনের আলোতেও আমাদের গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে।

প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, রাতের বেলায় নাকি লোকের ভূতের ভয় হয়। আদতে তা নয়। সবটাই মানুষের মনে। তাই এই কথা শুনে ওই সকাল বেলাতেও আমাদের শরীরে ভয়ের চোরা স্রোত বইছিল। ভয় ঠকঠক করে কাঁপছিলাম। কিন্তু মনের মধ্যে বিজ্ঞান বোধ বার বার উঁকি দিচ্ছে আর বলছে, এটা হতে পারে না।

সকাল সাড়ে ৯টা-১০টায় আমি আর আমার বন্ধু পরান মণ্ডলের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিলাম। একটু খুঁজতে হল। কিন্তু বাড়িটা বেশি দূরে ছিল না। গিয়ে দেখি পরান মণ্ডলের বাড়ির উঠোনে জ্বলজ্বল করছে তাঁর একটি ছবি, যার কপালে চন্দনের টিপ আর সামনে ধুপকাঠি জ্বলছে আর একটি ফুলের মালা। ছবির সেই ভদ্রলোকের সঙ্গেই তার আগের রাতে আমরা কথা বলে এসেছি। চিনতে বেগ পেতে হয়নি আর।

এই প্রতিবেদনটি 'আনন্দ উৎসব' ফিচারের একটি অংশ।

Kali Puja 2024 Ananda Utsav 2024 Durga Puja 2024 Celebrity Ghost Stories Horror Stories Celeb Puja

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।