Advertisement
E-Paper

একার পুজোতেই উজ্জয়িনী হতে শিখল বিক্রম, নিজেকে আঁকড়ে ধরার সাহসে ভর করে

বিক্রমকে সে দিন চেনা যাচ্ছিল না। মনে হচ্ছিল, যেন হঠাৎ করে অনেকটা সাহস পেয়েছে, এপ্রিল থেকে যে তীব্র শূন্যতা ওকে ক্রমাগত গ্রাস করতে চেয়েছে, তার বিপরীতে যেন একটা অদ্ভুত শান্তি অনুভব করছে সে।

হয়তো বৃত্তাকারে এই যন্ত্রণা ঘুরে ঘুরে আসবে। তবুও কোথাও গিয়ে এক চিলতে আরাম, কিছু মুহূর্তের জন্য অনুভব করা যে আমরা একা নই, আমরা কেউই একা নই।

হয়তো বৃত্তাকারে এই যন্ত্রণা ঘুরে ঘুরে আসবে। তবুও কোথাও গিয়ে এক চিলতে আরাম, কিছু মুহূর্তের জন্য অনুভব করা যে আমরা একা নই, আমরা কেউই একা নই।

অনির্বাণ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২১ ১৪:১৯
Share
Save

(যখন এই লেখাটা লিখছি, কানের কাছে ‘আয় গো উমা’ গানটা বাজছে। আমি নিউ জার্সিতে। হঠাৎই রাহুলের মুখটা মনে পড়ল। রাহুল আর দুর্গা পুজো, কালী পুজো কোথাও আমার মনের মধ্যে মিশে আছে। লিখতে ইচ্ছে হল। লেখাটা পড়ার সময়েও গানটা চালিয়ে নিলে ভাল হয়।)

আপাতত দিনের যে সময়টায় এসে দাঁড়িয়েছি, সেই সময়টাকে অনেক মিষ্টি মিষ্টি বাংলা শব্দে আজকাল প্রকাশ করা হয়। কিন্তু কোনও শব্দই আমার মনের মতো করে সময়টাকে বর্ণনা করতে পারে না। পুজো পরবর্তী কলকাতায় এই যে বিকেল শেষ হব হব করছে, সূর্যের আভাসটা হাল্কা ভাবে দিগন্তে ছড়িয়ে যাচ্ছে, গঙ্গার ধারে বসে ঠিক কানের ডগা ছুঁয়ে একটা ঠান্ডা বাতাস ছুটে যাচ্ছে, গায়ের চাদরটা আরেকটু জড়িয়ে নিলে মন্দ লাগছে না– এই সবকিছুকে ব্যক্ত করার মতো শব্দ আছে কি?

এই বছরটা এই নাম-না-জানা সময়গুলো, আর এই প্রিন্সেপ ঘাটের ধারে বসে থাকার বৃত্তেই বারবার ঘুরে ফিরেছে। ইদানীং অনেকটা সাক্ষীর মতো মনে হয় এখানকার সবকিছুকে। প্রকৃতি এখানে দাঁড়িয়ে থাকে ঠায়, আদি অনন্তকাল ধরে দেখে চলে। আমরা অসমান যুদ্ধের পর যুদ্ধ, অতিমারির ঢেউয়ের পর ঢেউয়ের সঙ্গে লড়তে লড়তে, যুঝতে যুঝতে নিজেদের উপর হেসে, ঘাটের এই জায়গাটায় এসে বসে পড়ি।

কয়েক মাস আগে অবশ্য বাড়ি ছেড়ে বেরোনোর খুব একটা সুযোগ ছিল না। করোনার প্রকোপ তখন সাংঘাতিক, বিশ্ব জুড়ে তখন এক অদ্ভুত অসম যুদ্ধের দামামা বেজে উঠেছে। হাতিয়ারহীন যুদ্ধে আমাদের বিরুদ্ধে মৃত্যু। মৃত্যুকে এত দিন ভয় পেতাম চোখে-না-দেখা শরীরহীন অবয়বের মতো। কিন্তু এই শেষ কয়েকটা দিনে মৃত্যুকে মনে হয়েছিল অত্যন্ত কাছের। রাতের পর রাত ঘুম নেই। আবার হয়তো আরও একটা সাহায্যের জন্য ফোন আসবে, হয়তো সাক্ষী হতে হবে আরও একটা মৃত্যুর।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সেই রকমই বিভীষিকার সময়ে রাহুলের ফোন আসে আমার কাছে। সে দিনও এ রকম হাওয়া দিচ্ছিল কানের পাশ দিয়ে। অবশ্য ঘাটে যাওয়ার সুযোগ হয়নি। বাল্যবন্ধু ফোন করায় মনটা ভাল হয়ে গিয়েছিল।

“অনির্বাণদা, আমার খুব সম্ভবত কোভিড হয়েছে। তুমি একটা টেস্টের ব্যবস্থা করে দিতে পারবে? আর একটা যদি অক্সিজেন সিলিন্ডারের ব্যবস্থা করে দাও, খুব ভাল হয়।”

সিলিন্ডার জোগাড় করতে বেশিক্ষণ লাগেনি, পিপিই কিট গলিয়ে ছুটেছিলাম ওর বাড়ির দিকে। কিন্তু গিয়ে দেখি অবস্থা বেশ গুরুতর। সঙ্গে সঙ্গে অ্যাম্বুল্যান্স ডেকে নিয়ে গেলাম হাসপাতালে। করোনা পরীক্ষা করিয়ে ইমার্জেন্সি থেকে বেডে দিতে দিতে রাত হয়ে এসেছে। তখন কানের পাশের হাওয়াটা কেমন করে জানি না বেশ গরম লাগছে। একটা অদ্ভুত অস্বস্তি হচ্ছিল সারা দেহে, অস্থির লাগছিল ভীষণ। বিক্রমের মুখটা বার বার চোখের সামনে ভেসে উঠছিল।

বিক্রম। রাহুলের প্রেমিক। বাকিরা ডাকে ‘ছক্কা’ বলে। ওদের প্রেমটা বেশ একটা বলিউডের সিনেমার মতো হয়েছিল। লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করেছে ওরা কত দিন। বিয়ে না করলেও, একসঙ্গে থাকার ইচ্ছেটা নিয়ে কোনও রকম আড়ালের চেষ্টা করেনি কোনও দিন দু’জনের কেউই। একটা ফ্ল্যাট কিনেছিল ওরা দু’জনে মিলে। বেশ মিষ্টি একটা ব্যাপার ছিল রাহুল আর বিক্রমের।

কিন্তু সেই রাতে বারবার চেষ্টা করেও ফোনে পাইনি বিক্রমকে। বাড়ি ফিরে ঘুম হয়নি এ বারও। দু’দিন লড়াইয়ের পরে রাহুল চলে যায়। সেই দিন ফের চেষ্টা করি বিক্রমের সঙ্গে যোগাযোগ করার, কিন্তু আবারও পারিনি। বিক্রমকে রাহুলের ‘ভাল থাকিস’টা আমার বলা হয়নি আর।

৬ মাস কেটে গিয়েছিল। রাহুলের চলে যাওয়ার পরে তত দিনে আবার পুজোর গন্ধ পেতে শুরু করে দিয়েছি আমরা। কলকাতা আবার মৃত্যুশয্যা থেকে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াচ্ছে। ধর্মতলা, গড়িয়াহাট, নিউ মার্কেট জুড়ে অতিমারি সরে যাওয়ার আনন্দ, উৎসবের চিহ্ন। পুজো এগিয়ে এল ঠিকই, তবু শরতের আকাশে মেঘের রং এ বার আরও গাঢ় বলে মনে হল। এ বার নাকি দুর্গা এসেছিলেন ঘোড়ায়। ঈশ্বরে বিশ্বাস করি না ঠিকই, কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই অদ্ভুত মিলে যাওয়াগুলো খুব অবাক করে দেয়। পৃথিবী জুড়ে এই মৃত্যুমিছিলে জুড়ে থেকে গিয়েছি যারা, তাদের কাছে এ বারের পুজো কোথাও গিয়ে একটু অন্য রকম। হয়তো এ বার দুর্গাকে আসতেই হত এই রূপে, জানি না। ভবিতব্য বলে কিছু হয় বলে কোনও দিনই মানিনি। কিন্তু তাই বলে পৃথিবীতে রোজ ঘটে চলা সমস্ত শুভ-অশুভ সময়ের সব কিছুর যে একটা সুন্দর ‘সুস্থ’ ব্যাখ্যা দিয়ে খুব আরাম পেয়েছি, তা-ও নয়। পাওলো কোয়েলহো একটা শব্দ ব্যবহার করেছিলেন, ‘মাকতুব’- সব লেখা থাকে। অলিখিত, লিখিত অবস্থায়, সবাই আছে, সবার সবটুকু আছে।

বিক্রম তখনও ওদের ফ্ল্যাটেই একা থাকে। সেই ৬ মাসে খুব একটা কারও সঙ্গে যোগাযোগ রাখেনি। রাহুল চলে যাওয়ার পরে বহু দিন বিক্রমের কোনও খবর পাওয়া যায় নি। এখনও খুব একটা দেখা করে না কারও সঙ্গে। ভদ্রতার খাতিরে, না সহানুভূতির দাবিতে, জানি না, তবে ইচ্ছে করল দেখা করার। বিক্রম রাজি।

সেদিন দু’জনে বসে আছি বিক্রমদের বারান্দায়। বিক্রমের চোখের তলায় মোটা কালির দাগ; কেমন যেন বসে গিয়েছে চোখ-মুখ। খুব তীক্ষ্ণ একটা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে। আজকে আকাশ বেশ মেঘলা। মেঘ জমে জমে পড়ন্ত বিকেলে কেমন হলুদ আলোয় ভরে গিয়েছে চারপাশ। হাওয়া দিচ্ছে বেশ জোরে। চুপ করে বসে আছি দু’জনে। বিকেলের কোলাহল ধীরে ধীরে বাড়ল, পাখির আওয়াজ, গাড়ির আওয়াজ, রাস্তায় বাচ্চাদের খেলার নানা চিৎকার, সমস্ত চলতে থাকল। তার পর আস্তে আস্তে সমস্ত কমে এল, হলুদ আভাটা গাঢ় থেকে আরও গাঢ় হয়ে উঠল। বিক্রমের ঠোঁটদুটো বার বার ফাঁক হয়ে কিছু বলার চেষ্টা করে আবার বন্ধ হয়ে গেল।

“অনির্বাণ, দুর্গা এ বার নাকি ঘোড়ায় এসেছিল? একটু বেশি দেরি করে ফেলল না?”

মুখে কোনও রাগ বা অন্য কিছুর কোনও চিহ্ন নেই। ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ছাড়া বিক্রমের বাকি মুখটা রীতিমতো দুর্বোধ্য বলে মনে হল আমার। নিষ্প্রাণ, কিন্তু অত্যন্ত কঠিন। একেবারে বুকে এসে লাগছিল ওর এক একটা চাহনি।

“প্রশ্ন আছে রে, অনেক প্রশ্ন আছে, বুঝলি? আগের দিন কমপ্লেক্সে পুজোর মিটিংয়ে বাচ্চাগুলো ডেকে নিয়ে গেল, গেলাম। কেষ্টদা ঢুকতে দিল না।”
“ঢুকতে দিল না মানে?”
“এতে আবার অবাক হচ্ছিস কেন? ‘ছক্কা’ বলে ডাকতে তো এরা সবাই ভালবাসে। বিশ্বকাপের ভরা মরসুম, খাপে খাপে বসে গিয়েছে।”
“বাকিরা কিছু বলেনি?”

আর উত্তর দিল না বিক্রম, সেই আগের মতো চুপ করে বসে থাকল। যদিও সূর্য এতক্ষণে ডুবে গিয়েছে, খুব তাড়াতাড়ি যেন অন্ধকার হয়ে এল।

লকডাউন-পরবর্তী কলকাতার রাস্তায় একটা অদ্ভুত চাপা স্রোতের মতো ছুটির আমেজ কাজ করছিল। সব কিছুতেই যেন একটা যুদ্ধজয়ের উল্লাসের প্রতিচ্ছবি। স্বজনদের বার বার হারিয়ে ঝিমিয়ে পড়া কলকাতা খুব অদ্ভুত ভাবে রঙিন মোড়কে মুড়ে রেখেছে তার যন্ত্রণাগুলো। গঙ্গার ঘাটে অন্ধকার নেমে আসার পরের মুহূর্তগুলোয় বাতাসে এই যন্ত্রণার ভারটা বোঝা যায়।

বিক্রমকে নিয়ে গিয়েছিলাম সেইখানে।

চুপ করে বসে আছি দু’জনে। অন্ধকার ঘাটে আজ খুব একটা লোক নেই। দূরে কেউ একটা গান চালিয়েছে, সুরটা আলতো করে ভাসিয়ে দিয়েছে গঙ্গার হাওয়ায়। মনে হচ্ছে পুরনো দিনের গান, শব্দগুলো কেটে যাচ্ছে বাতাসের আঘাতে।

“অনির্বাণ, একাকিত্বে আমি কোনওদিন ভয় পাইনি। কিন্তু রাহুলটা একদম অভ্যেস খারাপ করে দিল, জানিস? পুজোটা এ বার কেমন অদ্ভুত একটা অস্বস্তির মধ্যে দিয়ে এল, ভাল লাগছে না।” হঠাৎ বলে উঠলো বিক্রম। উত্তর দিতে পারিনি অনেকক্ষণ।

“বিক্রম, কেষ্টর কথায় কান দিস না। ওর থেকে এর চেয়ে বেশি কিছু আশা করাও যায় না। তুই একটা কাজ কর না। একটা চিঠি লেখ দুর্গার জন্য। তোর যা প্রশ্ন আছে, লিখে দে, ঠিক পৌঁছে যাবে। দেখ না, এ বারের কালী পুজোটাও হয়তো খুব খারাপ যাবে না।”

কোনও উত্তর দিল না বিক্রম। একের পর এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে কী যেন বলে গেল ঠোঁটদুটো একটু ফাঁক করে। গঙ্গার সেই নীরবতা যেন একটা উষ্ণতায় জড়িয়ে রেখেছিল ওকে।

ঘাট ধরে অনেকক্ষণ হেঁটে তার পরে ফিরে গিয়েছিলাম দু’জনে। সারাটা পথ একটা অদ্ভুত সুর গুনগুন করে গিয়েছিল বিক্রম।

সারা রাত জেগে ছিল সে দিন। ঘুম ভুলে দুর্গার জন্য অনেক কিছু লিখেছিল। অনেক দিন পর, সেই দিন রাতে গান বেজেছিল বিক্রমের বাড়িতে। ভোরের দিকে ঘুমিয়ে পড়ে অজান্তেই।

সকালবেলা দরজা ধাক্কানোর শব্দে ঘুম ভেঙেছিল বিক্রমের। তখন সকাল হয়ে এসেছে। বাইরে মৃদু শোরগোল। ষষ্ঠীর সকালে সবাই একে একে বেরোচ্ছে নতুন জামা পড়ে। দরজা খুলে বিক্রম অবাক। বিক্রমের দিদি সহেলী দাঁড়িয়ে আছে বাইরে। কয়েক মুহূর্তের স্তব্ধতা, তার পর অঝোরে কেঁদে ফেলে বিক্রম। ভাইকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে ছিল সহেলী। “পুজো বলে কথা। একা একা কাটাবি ভাবলি কী ভাবে তুই?”

খুব একটা উত্তর দেওয়ার মতো জায়গায় ছিল না বিক্রম। বহু দিন পরে বিক্রমকে সেদিন অনেক হাল্কা লাগছিল।

অষ্টমী। সকাল সকাল ফোন পেয়েছিলাম। “অনির্বাণ, চলে আয় তাড়াতাড়ি। বহু দিন পর তিন জন একসঙ্গে পুজোয়।”

গিয়ে দেখি বিক্রমকে সাজানোর পালা চলছে জোরকদমে। বিক্রমকে সেই দিন সহেলী নাম দিয়েছিল ‘উজ্জয়িনী’। “আজ তোকে কে ছক্কা বলে বার করে দেয় আমি দেখছি।” বিক্রমকে সে দিন চেনা যাচ্ছিল না। মনে হচ্ছিল, যেন হঠাৎ করে অনেকটা সাহস পেয়েছে, এপ্রিল থেকে যে তীব্র শূন্যতা ওকে ক্রমাগত গ্রাস করতে চেয়েছে, তার বিপরীতে যেন একটা অদ্ভুত শান্তি অনুভব করছে।

তিন জন মিলে আমরা গেলাম পুজোর মণ্ডপে। উজ্জয়িনী!

উজ্জয়িনীর থেকে চোখ সরছে না কারও। সেই চাহনিতে কোনও তিক্ততা নেই। শুধুই মুগ্ধতা! আমাদের সবেধন নীলমণি কেষ্টদাও হাঁ করে ওর দিকে তাকিয়ে থেকেছিল অনেক ক্ষণ। সেই দেখে আমরা হাসব না কাঁদব, সেটা ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না।

গদগদ হয়ে কেষ্ট মহাশয় এগিয়ে এলেন, উজ্জয়িনীকে বললেন, “প্রথম বার এলে আমাদের পুজোয়, দেবীর কাছে কিছু চাইবে না?”

উজ্জয়িনী তত ক্ষণে একটু এগিয়ে গিয়ে প্রতিমার দিকে তাকিয়ে আছে একদৃষ্টে। “মা, রাহুল ভাল আছে?” ছোট্ট একটা প্রশ্ন ছুড়ে দিল সে।

বিক্রমকে চিনতে পেরে তখনই ওর দিকে তেড়ে আসছিল কেষ্টদা। কিন্তু বাধ সাধলো শ্রীময়ী, আবাসনের মেয়ে সে। “তুমি এ রকম করতে পারো না কেষ্ট দা। তুমি নিজের মধ্যের এই ভয়ঙ্কর অসুরটাকে আগে শেষ করো। তার পরে দুর্গা পুজো করতে এস।” তত ক্ষণে ভিড় জমে গিয়েছে মণ্ডপে। মৃদু গুঞ্জন ধীরে ধীরে রূপ নিয়েছে শোরগোলে।

এর পর যেটা হয়েছিল, তার জন্য হয়তো ভিতরে ভিতরে অপেক্ষা করে বসেছিল গোটা শহর। দুর্গার শাড়ি খুলে পরানো হয়েছিল নার্সের জামা। পুজো হয়ে উঠেছিল আক্ষরিক অর্থেই সর্বজনীন। এ বছর প্রায় প্রত্যেক বাড়িতে আঘাত এনেছে অতিমারি। চোখের সামনে প্রিয়জনদের চলে যেতে দেখেছে কত লোক। কোনও প্রতীক নয়, কোনও বক্তব্য নয়, শুধু এক অসম্ভব যন্ত্রণা যেন কাজ করে। শহর জুড়ে যন্ত্রণার যেই চোরাস্রোত বয়ে চলেছিল এত মাস ধরে, হঠাৎ করে যেন একটা বিস্ফোরণ ঘটল তার।

হয়তো এই ক্ষত এক বারের পুজোয় কেটে যাবে না। বৃত্তাকারে এই যন্ত্রণাটা হয়তো ঘুরে ঘুরে আসবে বার বার। তবুও কোথাও গিয়ে এক চিলতে আরাম, কিছু মুহূর্তের জন্য অনুভব করা যে আমরা একা নই, আমরা কেউই একা নই। সবাই নিজের মতো করে আঁকড়ে ধরেছি নিজের চারপাশটাকে, খুঁজে চলেছি মূলস্রোতে ফিরে আসার আশ্রয়টুকু।

উজ্জয়িনীকে হয়তো আজ আর পাওয়া যাবে না। সকলের সঙ্গে সিঁদুর খেলে সে ধীর পায়ে ফিরে গিয়েছে বাড়িতে। হয়তো বারান্দায় চায়ের কাপ হাতে একদৃষ্টে পড়ন্ত সূর্যের দিকে তাকিয়ে ছিল। তার পর সন্ধে নামার সঙ্গে সঙ্গে ঢুকে গিয়েছে ভিতরে। হয়তো সেই রাতটা ওকে দিদির কোলে মুখ গুঁজে কাঁদতে হয়েছে।

(“আয় গো উমা কোলে লই”.... আরও খানিকক্ষণ চলতে দিন। তারপর থামিয়ে দেবেন।)

Durga Puja 2021 Homosexuality Transgender LGBTQIA NRI Puja

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।