শিকাগোর বাঙালিদের তাই ওই তিন দিনের অস্থায়ী ঠিকানা ছিলো ওখানেই।
এখানে প্রতি বছর নির্ঘণ্ট মেনে পুজো করা সম্ভব হয় না। তার অনেক কারণ। দেশের মতো এখানে পুজোর ছুটি নেই। স্কুল খোলা। অফিস খোলা। যেখানে পুজো হবে, সেই জায়গাটাও তো পেতে হবে! হ্যাপা হাজারটা। অগত্যা সপ্তাহান্তই সঙ্গী। অনেক সময় শুক্র, শনি, রবিবারে পঞ্জিকা মতে পুজোর নির্ঘণ্ট মিলে যায়। সে সব বছর তো সোনায় সোহাগা! এ বার আমাদের আর সে সুযোগ হয়নি। অগত্যা আমাদের বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশন অব গ্রেটার শিকাগো (বিএজিসি)-র দুর্গাপুজো হয়ে গেল এই গত শুক্র, শনি ও রবিবারে।
হিন্সডেলের এক চার্চে গিরীন রায়ের বানানো দুর্গা প্রতিমা দিয়ে ১৯৭০-এ শিকাগোয় দুর্গাপুজোর শুরু। বলা হয়, আমাদের পুজো উত্তর আমেরিকার প্রাচীনতম দুর্গাপুজো। আশেপাশের বিভিন্ন স্টেট থেকেও অনেক বাঙালি পরিবারের সমাগম হয়। এ বারও তার অন্যথা হয়নি। ১২০০-র বেশি মানুষের এই মিলনমেলায় বিএজিসি-র দুর্গোৎসব শিকাগোর বাঙালিদের সেরা উৎসব হয়ে ওঠে। কোভিডের চক্করে এই সংখ্যা এ বছর তুলনামূলক কম। তা না হলে অনেক সময় এই সংখ্যা ১৫০০ পেরিয়ে যায়।
এ বছর মাস্ক ছিল বাধ্যতামূলক। পুজো প্রাঙ্গণের বাইরে ছিল কোভিড টেস্টের ব্যবস্থা। নেগেটিভ হলে তবেই রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ এবং পুজো প্রাঙ্গণে প্রবেশাধিকার। নচেৎ নহে। সৌভাগ্য এবং সুখবর যে, সবারই নেগেটিভ। সুতরাং শিকাগোর বাঙালিদের আটকায় কে?
শিকাগোর বাঙালিদের তাই ওই তিন দিনের অস্থায়ী ঠিকানা ছিলো ওখানেই। ওখানে মানে দ্য সেন্টার অব এলজিন ও দ্য হেমেন্স কালচারাল সেন্টারে। সিম্ফনি ওয়ে রাস্তার এপার ওপার। এ পারে পুজো। অন্য পারে খাওয়াদাওয়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন।
প্রতি বছরের মতো এ বারও রামানুজ ভট্টাচার্যের পৌরহিত্য, ছায়াসঙ্গী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের নিখুঁত ব্যবস্থাপনা এবং সুমিত রায়ের মণ্ডপসজ্জা গোটা পরিবেশকে ভাব ও ভক্তির মিশেলে অন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়েছিল। ঢাক, আরতি, ধুনুচি। ভোগ, প্রসাদ, ডিনার, লাঞ্চ, স্ন্যাকস, চা। পুজোর বাজার। জমিয়ে আড্ডা। সেলফি। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনা, অন্য শহর থেকে আমন্ত্রিত শিল্পীদের অনুষ্ঠান এবং সব শেষে বলিউডের প্রখ্যাত সঙ্গীত পরিচালক যতীন পণ্ডিতের লাইভ ইন কনসার্ট-- শুক্রবার বিকেল থেকে রবিবার রাত্রি। কাশ ফুল, শিউলি ফুলকে থোড়াই কেয়ার করে শিকাগোর দুর্গা পুজো জবরদস্ত এবং জমজমাট।
তবে জমজমাট তো আর আপনা-আপনি হয় না! তার পিছনে থাকে বিস্তারিত পরিকল্পনা ও বহু মানুষের নিরলস পরিশ্রম। ধন্যবাদ বিএজিসি ২০২১-এর সভাপতি জয়ন্ত মুখোপাধ্যায় ও তাঁর সুদক্ষ কার্যনির্বাহী সমিতিকে, যাঁদের সুনিপুণ প্রয়াসের ফসল শিকাগোয় প্রবাসী বাঙালির সেরা উৎসব বিএজিসি-র দুর্গা পুজো আজ মহোৎসবে পরিণত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy