Advertisement

Associate Partner

Style Partner

Associate Partner

Weddings Partner

Food Partner

Durga Puja 2021

আর উমাকে ফেরত পাঠাব না

যাঁদের সঙ্গে কেবলমাত্র পুজোতেই দেখা হয় সেটুকুও বাঙালির ভাগ্যে জোটেনি।

এ বছর লন্ডনে অনেক পুজোই জোরকদমে হচ্ছে।

এ বছর লন্ডনে অনেক পুজোই জোরকদমে হচ্ছে।

সারদা সরকার
লন্ডন শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২১ ১৭:২১
Share: Save:

লন্ডনের তথা ইউকের বাঙালিদের অনেকেই গত বছর দুর্গাপুজোয় কলকাতার টিকিট কেটে রেখেছিলে‌ন। কারণ, পুজো এখানে স্কুলের হাফটার্মের ছুটির সঙ্গে মিলে গিয়েছিল। কিন্তু লকডাউনের জেরে সে সব টিকিট তামাদি হয়ে গিয়েছে। বিশ্বজোড়া মহামারিতে গত বছর ইউকের বাঙালিদের পুজো কেটেছে আতঙ্কে। গৃহবন্দি হয়ে। যাঁরা একটু সুযোগ পেয়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন, তাঁদেরও সকলে ঠিকঠাক ফিরতে পারেননি। আটকে পড়েছেন। অসুস্থ হয়েছেন। অনেকে আবার চিরতরে চলেও গিয়েছেন। অনেকেই আজ প্রায় দু’-তিন বছর দেশের মুখ দেখেনি। দেশের মুখ তো দূরের কথা, বন্ধুবান্ধব— যাঁদের সঙ্গে কেবলমাত্র পুজোতেই দেখা হয় সেটুকুও বাঙালির ভাগ্যে জোটেনি। তাই এ বার সে পণ করেছে— উমা এলে আর ছাড়াছাড়ি নয়!

যদিও দিনের বেলা ছোট হয়ে আসতে শুরু করেছে। ব্রেক্সিটের পর ইউকে-তে পেট্রলের হাহাকার। ছোটবেলায় কেরোসিনের লাইনের মতো দেখি মাইলের পর মাইল পেট্রলের লাইন। লরিচালকেরা সব ইউরোপে যে যাঁর দেশে ফিরে গিয়েছেন। তাই এই দুরবস্থা! যাই হোক এ সব উজান ঠেলে বাঙালি পুজোমণ্ডপে যাবে। পুরনো ট্রাঙ্ক ঝেড়ে বেরোবে জারদৌসি জামদানি। কিন্তু এ বার উমার সঙ্গে দেখা করতে হলে নিয়ম মেনে সময় চেয়ে নিতে হবে। দীর্ঘ দু’বছর পর দেখা যে! এ বছর লন্ডনে অনেক পুজোই জোরকদমে হচ্ছে।

এ রকমই একটি পুজো ‘আড্ডা’। বাঙালির মননের গভীরে রয়েছে এই নামের উৎস। আড্ডার পুজো কেবল একটি পুজোই নয়, আড্ডা প্রবাসী ও বাঙালি সংস্কৃতিতে নতুন অগ্রদূত। সেই ধারা বজায় রেখে এ বার আড্ডার পুজোয় চন্দননগরের আলোকসজ্জা। ধারা বজায় রেখে আড্ডা বর্ধমানের অগ্রদ্বীপের কাঠের পুতুল শিল্পীদের সঙ্গে বানাচ্ছে অপূর্ব আড্ডা আনন্দ তোরণ। কাঠের এই পুতুলসজ্জিত অপরূপ দরজা শুধু বাইরের দুনিয়ায় বাংলার লোকশিল্পকে জনপ্রিয় করবে না, কোভিড-ভারাক্রান্ত লোকশিল্পকে কিছু কাজ দেবে।

দক্ষিণ লন্ডনের মিচ্যামের দুর্গাপুজোয় থাকে প্রাণের স্পর্শ। অষ্টমীর অঞ্জলিতে শিউলি ফুল না থাকলেও ক্রিসান্থিমাম, গাঁদা-গোলাপের তো অভাব নেই। দুয়ারে কলাগাছ না থাকলে কী হবে, ঝাউগাছ দিয়ে আমরা সাজাই প্রবাসের নৈবেদ্য। কোভিডে যাঁরা চলে গিয়েছেন তাঁদের জন্য মন হাহাকার করে। তবু স্বজন হারানোর বেদনায় দীর্ণ বাঙালি পুজোকে ঘিরে বেঁচে উঠতে চায়। যারা আছে তারা আবার একসঙ্গে মিলতে চায়। বয়স্ক মানুষেরা এই পুজোর কর্মকর্তা। তাই হয়তো জাঁকজমকের বাহার এখানে নেই। কিন্তু আছে অনাবিল প্রাণের স্পর্শ। নিয়ম মেনে মা-কাকিমাদের বাঙালিয়ানা। কচিকাঁচাদের অপটু বাংলায় আবোলতাবোল কবিতা বলার চেষ্টার সঙ্গে বীরেণবাবুর চণ্ডীপাঠ। সব মিলিয়ে এ বারে আর উমাকে পাঠানো হবে না— এটাই ভেবে নিয়েছে বাঙালি মন।

উমা থাকুক আমাদের সঙ্গে আসন্ন শীতের দিনগুলোয়। বসন্তের সোনালি দিনে। আবার ঊষ্ণকালের টেমসনগরীতেও। আনন্দময়ীর অবস্থান হোক চিরকালীন। আর যেন কোনও বিচ্ছেদ না দেখতে হয়। যাতায়াত হোক উন্মুক্ত। পথ চেয়ে বসে থাকা বারান্দার শীর্ণ বৃদ্ধা জননীকে যেন আবার বুকে জড়িয়ে ধরতে পারে বাঙালি— জাস্ট আ ফ্লাইট অ্যাওয়ে। যত দিন না এ সব হচ্ছে, আর উমাকে পাঠাব না। এই পণই করেছে এ বার প্রবাসী বাঙালি।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy