এখনও অশান্ত বাংলাদেশ। — ফাইল চিত্র।
আগামী তিন-চার দিনের মধ্যেই ওপার বাংলার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। এমনটাই দাবি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তিকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেনের।
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে সাখাওয়াতের কথায়, ‘ইতিমধ্যেই সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ফেরাতে নানা পরিকল্পনা নেওয়ার কথা ভাবছে নয়া সরকার। এখনও রাস্তায় পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ মোতায়েনের নির্দেশ দেওয়া হয়নি। পুলিশে কর্মরত কেউ কেউ এখনও প্রাণভয়ে লুকিয়ে রয়েছেন। এই অবস্থায় জনগণকে বুঝিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সেনাবাহিনী। আশা করা যায়, আগামী তিন-চার দিনের মধ্যেই পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবে সরকার।’
সাখাওয়াত আরও বলছেন, ‘‘প্রয়োজনে পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলব। তাঁদের অভিযোগ শুনব। যত দিন আমি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে আছি, সুরাহার চেষ্টা করব। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে পুলিশকে আশ্বস্ত করতে হবে। তাঁরাও মানুষ।’’ ‘প্রথম আলো’কে সাখাওয়াত জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে দেশের নানা জায়গায় যে সব হত্যা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ এবং ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে, তাতেও দোষীদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে অন্তর্বর্তী সরকার। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় সংখ্যালঘুদের উপরে আক্রমণের বিষয়ে প্রশ্ন করলে সাখাওয়াত জানিয়েছেন, তাঁর হাতে পর্যাপ্ত সেনা নেই। কয়েক জায়গায় আনসার বাহিনী এবং বিজিবির সহায়তায় কাজ চলছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘‘বাংলাদেশে আমি সংখ্যালঘু বলতে কাউকে বুঝি না। আমরা সবাই বাংলাদেশি। প্রচলিত রাষ্ট্রব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় দেশ জুড়েই অরাজকতা হয়েছে। সংখ্যালঘুদের অধিকার আছে প্রতিবাদ করার, তাই ওঁরাও করছেন। এই মুহূর্তে আমরা কিছুতেই আর এরকম ঘটনা ঘটতে দেব না। পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে খতিয়ে দেখা হবে এই সব ঘটনায় কারা জড়িত।’’
প্রসঙ্গত, হাসিনা সরকারের পতনের পর বৃহস্পতিবার রাতেই বাংলাদেশে গঠিত হয়েছে অন্তর্বর্তিকালীন সরকার। সরকারের প্রধান হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূসকে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা তিনি। বাকি উপদেষ্টাদের মধ্যে রয়েছেন সালেহ উদ্দিন আহমেদ, আসিফ নজরুল, আদিলুর রহমান খান, হাসান আরিফ, তৌহিদ হোসেন, সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান, নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া, জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন, সুপ্রদীপ চাকমা, ফরিদা আখতার, বিধানরঞ্জন রায়, খালিদ হাসান, নুরজাহান বেগম, শারমিন মুরশিদ এবং ফারুকি আজম। বাংলাদেশের কোটা সংস্কার আন্দোলনের মূল মঞ্চ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা নাহিদ, আসিফরা। তাঁদেরকেও রাখা হয়েছে উপদেষ্টাদের তালিকায়। বিভিন্ন সরকারি দফতরগুলির মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের হাতে রয়েছে ২৭টি মন্ত্রক। অর্থ মন্ত্রকের দায়িত্ব পেয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ। প্রাক্তন নির্বাচন কমিশনার তথা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন পেয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। প্রাক্তন বিদেশ সচিব তৌহিদ হোসেনকে দেওয়া হয়েছে বিদেশ মন্ত্রকের দায়িত্ব। মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের নির্বাহী পরিচালক আদিলুর রহমান খান শিল্প মন্ত্রকের দায়িত্ব পেয়েছেন। আইন মন্ত্রক এবং বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রক পেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক আসিফ নজরুল।