মূল অভিযুক্ত মিহির শাহ। — ফাইল চিত্র।
নিয়মিত মদ্যপান করতেন। দুর্ঘটনার সময়েও গাড়ি চালাচ্ছিলেন মত্ত অবস্থাতেই। অন্তত পুলিশের কাছে এমনটাই বলেছিলেন মুম্বই বিএমডব্লিউ-কাণ্ডের মুল অভিযুক্ত। অথচ রক্ত ও মূত্রের নমুনায় মিললই না মদের উপস্থিতি।
অভিযুক্তের রক্ত ও মূত্রের নমুনা একাধিক বার পরীক্ষা করেও মদ্যপানের চিহ্নমাত্র মেলেনি বলে পুলিশ সূত্রে খবর। ফরেন্সিক রিপোর্ট বলছে, ঘটনার সময়ে আদৌ মত্ত অবস্থায় ছিলেন না মিহির।
অভিযুক্ত ২৪ বছর বয়সি মিহির শাহ মহারাষ্ট্রের শাসক জোটের সদস্য শিন্ডেসেনার নেতা রাজেশ শাহের পুত্র। অভিযোগ, গত ৭ জুলাই ভোরে মুম্বইয়ের ওরলিতে বিলাসবহুল বিএমডব্লিউ সেডান চালিয়ে বাড়ি ফেরার সময় একটি স্কুটারে ধাক্কা মারেন মিহির। স্কুটারে ছিলেন এক দম্পতি। তাঁদের মধ্যে কাবেরী নাকওয়ার নামে এক মহিলাকে পিষে দেয় ওই গাড়ি। গুরুতর আহত হন কাবেরীর স্বামীও। বেগতিক বুঝে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান মিহির। প্রায় দিন তিনেক গা-ঢাকা দিয়ে থাকার পর নাটকীয় ভাবে তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। যদিও ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জামিন পেয়ে যান তিনি।
তদন্তে নেমে জানা যায়, আগের রাতে বন্ধুদের সঙ্গে জুহুর একটি বারে বসে মদ্যপান করেছিলেন তিনি। তিন বন্ধু মিলে হুইস্কির ১২ পেগ খেয়েছিলেন। আবগারি আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, তিন বন্ধু মিলে ১২ পেগ হুইস্কি শেষ করার অর্থ, এক এক জন প্রায় চার পেগ করে হুইস্কি খেয়েছিলেন শনিবার রাতে। এই পরিমাণ হুইস্কি খেলে যে কেউ অন্তত আট ঘণ্টা মত্ত অবস্থায় থাকেন। দুর্ঘটনাটিও এই সময়ের মধ্যেই ঘটেছিল। ফলে দুর্ঘটনার সময়ে মিহির যে মত্ত অবস্থাতেই ছিলেন, তাতে সন্দেহ নেই বলে দাবি করেছিল পুলিশ।
গ্রেফতারির পর অভিযুক্তকে দফায় দফায় জেরা করেন তদন্তকারী অফিসারেরা। জেরার মুখে নিজের মাদকাসক্তির কথা স্বীকার করে নেন মিহির। জানান, ঘটনার দিনও মত্ত অবস্থাতেই গাড়ি চালাচ্ছিলেন তিনি। অথচ অভিযুক্তের রক্ত ও মূত্রের নমুনা পরীক্ষায় মেলেনি মদ্যপানের চিহ্ন! শুক্রবার সেই রিপোর্টই হাতে পেয়েছে পুলিশ।
যদিও পুলিশের যুক্তি, ঘটনার দীর্ঘ ক্ষণ পেরিয়ে যাওয়ার পর গ্রেফতার হন মিহির। সাধারণত শেষ মদ্যপানের পর ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত অ্যালকোহলের নমুনা থেকে যেতে পারে রক্তে। অথচ ঘটনার পর প্রায় ৫৮ ঘণ্টা পালিয়ে বেরিয়েছিলেন অভিযুক্ত। গ্রেফতারের পর তাঁর রক্ত ও মূত্রের নমুনা ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। ফলে স্বভাবতই অত ক্ষণ পরে তাঁর রক্তে অ্যালকোহলের চিহ্ন মেলা দুষ্কর।
মুম্বই বিএমডব্লিউ-কাণ্ডে মিহিরের রাজনীতিক বাবাকেও গ্রেফতার করা হয়েছিল। পরে তিনি জামিনে ছাড়া পান। গ্রেফতার হয়েছেন গাড়ির চালক রাজশ্রী বিদাওয়াতও, যিনি দুর্ঘটনার পর মিহিরের সঙ্গে আসন পাল্টে নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ।