নির্দেশের ভিত্তিতে যারা ৮২ নম্বর পেয়েছেন এ ক্ষেত্রে কেবলমাত্র তাদের ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাকা হবে। ফাইল চিত্র।
কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে ৮২ নম্বর পেয়ে ২০১৪-র টেটে উত্তীর্ণ সংরক্ষিত শ্রেণিভুক্ত প্রার্থীদের ইন্টারভিউয়ে ডাকার সিদ্ধান্ত আগেই ঘোষণা করেছিল পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। যেই কারণে ২০ মার্চ পর্ষদের তরফে এই বিষয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছিল। সেই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আগামী ২৪ মার্চের মধ্যে পর্ষদের দু’টি ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদন জানাতে পারবেন তাঁরা। এ বার সেই আবেদনের সময়সীমা বাড়ানো হল আরও দু’দিনের জন্য। সোমবার এই মর্মে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে পর্ষদ। সেই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ইন্টারভিউয়ে ডাক পেতে সোম ও মঙ্গলবার এই দু’দিনও আবেদন করতে পারবেন ২০১৪ সালের টেট পরীক্ষায় ৮২ নম্বর পাওয়া উত্তীর্ণেরা। পর্ষদের ওয়েবসাইটে গিয়েই তাঁদের আবেদন করতে হবে। ২০১৪ সালের টেট পরীক্ষাটি হয়েছিল ২০১৫ সালের ১১ অক্টোবর। সেই পরীক্ষা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্ট গত বছর ৯ নভেম্বর একটি নির্দেশ দেয়। সেই নির্দেশের ভিত্তিতে যারা ৮২ নম্বর পেয়েছেন এ ক্ষেত্রে কেবলমাত্র তাদের ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাকা হবে। তা-ও আবার আবেদনের ভিত্তিতে। এই বার মূলত টেট ২০১৭ উত্তীর্ণ প্রার্থীদের ইন্টারভিউ হয়েছিল। এর পর যদি কোনও প্রার্থী বাকি থেকে যান, তাহলে ২০১৪ সালের টেট পরীক্ষায় ৮২ নম্বর প্রাপ্তদের সঙ্গেই ইন্টারভিউ দিতে পারবেন। প্রথম দফায় ২০-২৪ মার্চ পর্যন্ত আবেদন করার সুযোগ দিয়েছিল পর্ষদ। কিন্তু এ বার ২৮ ও ২৯ মার্চ রাত ১১ টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত এই আবেদন করা যাবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। পর্ষদ সূত্রে খবর, টেট ২০১৪-তে ৮২ পেয়ে উত্তীর্ণ প্রার্থীর সংখ্যা ৭,৬৬৫। আর টেট ২০১৭-য় ৭২২ জন প্রার্থী ৮২ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন।
দু’দফায় পর্ষদের এমন বিজ্ঞপ্তি জারিকে মুখ্যমন্ত্রীর একটি মন্তব্যের সঙ্গে জুড়ে দেখছেন বাংলার রাজনীতির বৃত্তে থাকাদের একাংশ। গত ১৫ মার্চ আলিপুর বার অ্যাসোসিয়েশনের অনুষ্ঠানে নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে আদালতের রায়ে একের পর এক চাকরি চলে যাওয়া প্রসঙ্গে মুখ খোলেন মমতা। নিয়োগ দুর্নীতি মামলার রায় নিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘‘এখন রোজ কথায় কথায় ৩ হাজার চাকরি বাদ। ৪ হাজার চাকরি বাদ! কেউ যদি নিচুতলায় অন্যায় করেও থাকে, সংশোধনের সুযোগ পাওয়া উচিত।’’ মমতা আরও বলেন, “আমি জীবনে জেনেশুনে কোনও অন্যায় করিনি। আমি ক্ষমতায় আসার পর একটাও সিপিএম ক্যাডারের চাকরি খাইনি। তা হলে তোমরা কেন খাচ্ছ? দেওয়ার ক্ষমতা নেই। কাড়ার ক্ষমতা আছে!’’ মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “হঠাৎ করে চাকরি চলে গেলে সে খাবে কী! আমি বলছি, যারা অন্যায় করেছে, তাদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করুন, কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু, ছেলেমেয়েগুলোর যাতে কোনও সমস্যা না হয়। তাদের চাকরি আইন অনুযায়ী ফিরিয়ে দিন।”
আর সেই বক্তব্যের পর পর্ষদের দু’দফায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করাকে সরকারি সিদ্ধান্তের সঙ্গে যুক্ত করে কটাক্ষ করছেন অনেকে। তাঁদের যুক্তি, ২০১৪ সালের টেট পরীক্ষায় নম্বর সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কলকাতা হাইকোর্ট রায় দিয়েছিল গত বছর নভেম্বর মাসে। আর সেই নির্দেশ কার্যকর হচ্ছে প্রায় পাঁচ মাস পরে। যদিও পর্ষদ কর্তাদের একাংশের দাবি, এর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতার কোনও যোগ নেই। যে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে তা আদালতের নির্দেশই করা হচ্ছে। ২০১৪ সালের টেট পরীক্ষায় নম্বর সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কলকাতা হাইকোর্ট রায় দিয়েছিল গত বছর নভেম্বর মাসে। আর সেই নির্দেশ কার্যকর করতে প্রায় পাঁচ মাস অতিবাহিত হয়েছে। পর্ষদ কর্তাদের একাংশের দাবি, এই প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ। তাই এতটা সময় লেগে গেল। পর্ষদের এই পদক্ষেপের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতার কোনও যোগ নেই। তাঁদের দাবি, যে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে তা আদালতে নির্দেশই করা হচ্ছে। যাতে কোনও ত্রুটি না থেকে যায়, সে বিষয়ে নজরদারি করা হচ্ছে বলেই সময় লাগছে।