সোহম চক্রবর্তী। —ফাইল চিত্র।
ফৌজদারি মামলায় আগাম জামিন নিতে বারাসত জেলা আদালতে গিয়ে সরকারি আইনজীবীর (পিপি) নির্ধারিত ঘরে ‘সময় কাটানোর’ অভিযোগ উঠল অভিনেতা-রাজনীতিক সোহম চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার এই ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আইনজীবীদের একাংশ এবং বিরোধীরা।
নিউ টাউনের রেস্তরাঁর মালিককে মারধরের ঘটনায় আগাম জামিন নিতে বৃহস্পতিবার আদালতে গিয়েছিলেন চণ্ডীপুরের তৃণমূল বিধায়ক তথা অভিনেতা সোহম। আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করার পর সোহম দীর্ঘ ক্ষণ পিপির রুমে বসে অপেক্ষা করেন বলে অভিযোগ। পিপির রুমে বসে অপেক্ষা করাকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই জটিলতা শুরু হয়েছে। কারণ, এক জন অভিযুক্ত আদালত কক্ষে না বসে কেন সরকারি আইনজীবীদের বরাদ্দ ঘরে বসেছেন, তা নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে।
যদিও সোহম প্রায় দু’ঘণ্টা পিপির রুমে বসে থাকবার পর সেখান থেকে বেরিয়ে যান। তাঁর আইনজীবীদের ব্যাখ্যা, আদালত চত্বরের বাইরে গেলেও বারাসাতের বাইরে তিনি যাননি। যত ক্ষণ না পর্যন্ত বিচারক জামিনের আবেদন সম্পর্কিত নির্দেশ দিচ্ছেন, তত ক্ষণ পর্যন্ত তিনি বারাসাতেই থাকবেন।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার সকালে ১০টা নাগাদ বারাসত জেলা আদালতে ঢুকতে দেখা যায় সোহমকে। তিনি কেন আদালতে এসেছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তৃণমূল বিধায়ক জানান, পুরো বিষয়টি বিচারাধীন। তাঁর আইনজীবীই যা বলার বলবেন। সোহমের কথায়, ‘‘এখনই কোনও মন্তব্য আমি করব না। পুরো বিষয়টি বিচারাধীন।’’ ইতিমধ্যেই সোহমের বিরুদ্ধে তাঁকে মারধরের অভিযোগ এনে বুধবারই কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন ওই রেস্তরাঁ-মালিক আনিসুল আলম। পাশাপাশি তাঁর অভিযোগ, সোহমের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করছে না পুলিশ।
আনিসুলের আইনজীবীর দাবি, তাঁর মক্কেল এবং পরিবারকে হুমকি দিচ্ছেন জনপ্রতিনিধি সোহম। পুলিশে অভিযোগ জানিয়েও কাজ হয়নি। মামলা দায়ের করার অনুমতি দিয়েছেন বিচারপতি অমৃতা সিংহ। শুক্রবার সেই মামলার শুনানির সম্ভাবনা। ঠিক তার আগের দিন অর্থাৎ, বৃহস্পতিবার আগাম জামিন নিতে তৃণমূল বিধায়ক বারাসত আদালতে পৌঁছলেন। এই আবহেই প্রশ্ন উঠছে, তা হলে কি গ্রেফতারির আশঙ্কা করছেন অভিনেতা-বিধায়ক? আর সেই কারণেই কি তড়িঘড়ি আগাম জামিনের পদক্ষেপ?
গত শুক্রবার সন্ধ্যায় নিউ টাউনের এক রেস্তরাঁর একটি ফ্লোরে শুটিং করছিলেন সোহম। সেই সময়ই রেস্তরাঁর সামনে শুটিং ইউনিটের গাড়ি রাখা নিয়ে সোহমের নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে বচসা বাধে ওই রেস্তরাঁর মালিক আনিসুল আলমের। তাঁর অভিযোগ, একটি পার্কিং খালি করতে বললে সোহমের নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁর উপর চড়াও হন। আরও অভিযোগ, এর পর সোহমও তাঁকে মারধর করেন। তাঁকে ঘুষি মারা হয়। এমনকি, সোহম তাঁকে সজোরে লাথি মারেন বলেও অভিযোগ আনিসুলের।
আনিসুলকে চড় মারার কথা স্বীকার করে নেন সোহমও। বিষয়টি নিয়ে জলঘোলা হওয়ার পর তিনি ক্ষমা চান। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে। আনিসুলের দাবি, তিনি পুরো বিষয়টি পুলিশকে জানিয়েছেন। তাঁর আরও দাবি, মারধরের ভিডিয়ো সিসি ক্যামেরাতে ধরা পড়েছে। (যদিও সেই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন।)