মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র
রেওয়াজ ভেঙে যুবনেত্রী মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায়কে ‘মুখ’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন রাজ্য সিপিএমের প্রথম সারির নেতারা। সেই তালিকায় রয়েছেন রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম থেকে দলের প্রবীণতম সদস্য তথা বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু। মিনাক্ষীর নামে ব্রিগেড ভরলেও অবশ্য খালি থেকে গিয়েছে ভোটের বাক্স। আর তার পরেই কেন মিনাক্ষী, সেই প্রশ্ন তুলে গর্জন শুরু করল সিপিএমের মহিলামহল। যদিও সেই গর্জনকে খুব একটা আমল দিতে চাইছে না আলিমুদ্দিন স্ট্রিট।
সিপিএম সূত্রের খবর, দলের মহিলা সংগঠনের প্রথম সারির কয়েক জন নেত্রী ঘরোয়া আলোচনায় প্রশ্ন তুলেছেন, কেন মিনাক্ষীকে সামনে রেখে লোকসভা ভোটে মহিলা প্রার্থীদের নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করানো হয়েছিল? যে জটলা থেকে এই প্রশ্ন তোলা হয়েছে, সেখানে উপস্থিত ছিলেন এক ‘বড়’ নেতার স্ত্রীও। সেই অংশের এ-ও অভিযোগ, দলের মহিলা সংগঠনকে ‘বাইপাস’ করে মিনাক্ষীকে সামনে আনা হয়েছিল।
গত ১৪ এপ্রিল আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে সিপিএমের পাঁচ মহিলা প্রার্থীকে নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন মিনাক্ষী। সেখান থেকে বলা হয়েছিল, মহিলা প্রার্থীরা জিতলে মহিলাদের জন্য কী কী করা হবে। ‘পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজ়েন্টেশন’ দেখিয়ে ‘লেডিজ় স্পেশাল’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল সিপিএম। সেই সমস্ত মহিলা প্রার্থীর কারও অবশ্য ভোটে জামানত থাকেনি। তবে দলের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে মিনাক্ষীর উপস্থিতি নিয়ে।
আনন্দবাজার অনলাইনের প্রতিবেদনে সে দিনই লেখা হয়েছিল, সিপিএমের মহিলা সংগঠনের প্রথম সারির নেত্রীরা কেন সাংবাদিক বৈঠকে রইলেন না, তা নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। এমন কৌতূহলও তৈরি হয়েছিল যে, যুব সংগঠনের পর কি মিনাক্ষীকেই মহিলা সংগঠনে পাঠাবেন আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের নেতারা? তারই কি ‘ভিতপুজো’ করে রাখা হল?
সিপিএম সূত্রের খবর, ১৪ এপ্রিলের ওই সাংবাদিক সম্মেলনকেই মিনাক্ষী-বিরোধিতার নতুন অস্ত্র হিসেবে দলের একটি অংশ ব্যবহার করতে চাইছে। যদিও রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বিষয়টিকে ধর্তব্যের মধ্যে আনছেন না। তাঁর কথায়, “কোথায়, কে, কী আলোচনা করেছেন জানি না। অনেক জায়গায়, অনেক কিছু আলোচনা হতে পারে। তবে সিপিএম কী করবে, সেটা সিপিএমই ঠিক করবে।”
রাজ্য সিপিএমের প্রথম সারির এক নেতার কথায়, “ভোটে হারলে অনেকেই অনেক কিছুকে ‘কারণ’ হিসেবে তুলে ধরতে চান। সে সব কারণের নেপথ্যে থাকে ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়া। এখন মিনাক্ষীর প্রসঙ্গ তুলে কেউ কেউ ময়দানে নামছেন। কিন্তু তাঁদের বুঝতে হবে, কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে জনপ্রিয়তার নিরিখে মিনাক্ষীর ধারেকাছে কেউ নেই। এই বাস্তবটাই অনেকে মেনে নিতে পারছেন না।” পাল্টা প্রশ্ন তুলে সিপিএমের অন্য একটি অংশের বক্তব্য, “মিনাক্ষী যদি এতই জনপ্রিয় হবেন, তা হলে কুলটিতে নিজের বুথে দল কেন ৫০টিও ভোট পান না?” ভোটে ভরাডুবির ধারাবাহিকতার পর্যালোচনা এখনও শুরু করেনি রাজ্য সিপিএম। তার মধ্যেই ‘মিনাক্ষী মন্থন’ শুরু হয়ে গিয়েছে দলের অভ্যন্তরে।