দিলীপ ঘোষ-ফিরহাদ হাকিম। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষের ‘ওল্ড ইজ় গোল্ড’ মন্তব্যকে সমর্থন করে দিলেন কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিম। শনিবার সকালে নিজের ‘এক্স’ (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে একটি পোস্ট করেছেন প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ দিলীপ। তাতে তিনটি মাত্র শব্দ রয়েছে: ‘ওল্ড ইজ় গোল্ড’। যার বাংলা তর্জমা হল ‘পুরনো জিনিস সোনার মতো দামি’।
ওই পোস্টের সঙ্গে আর একটি শব্দও খরচ করেননি দিলীপ। সেই পোস্টের উল্লেখ করে শনিবার দুপুরে কলকাতা পুরসভায় ওই বিষয়ে প্রশ্ন করা হয় মেয়র ফিরহাদকে। জবাবে তিনি বলেন, ‘‘ঠিকই। আমরাও তো বলছি, ওল্ড ইজ় গোল্ড।’’ তবে বিজেপি বা দিলীপ প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করতে চাননি কলকাতা বন্দরের বিধায়ক ফিরহাদ। বরং ‘ওল্ড ইজ় গোল্ড’ মন্তব্য নিয়ে নিজের অভিমতের পক্ষে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন। ফিরহাদ বলেন, ‘‘দলে দু’টি বিষয় থাকে। একটি থাকে নবীন প্রজন্ম। যারা নতুন উদ্যমে এগিয়ে যাবে। আর তাদের পিছনে থাকবে এক্সপিরিয়েন্স (অভিজ্ঞতা)। যারা নিজেদের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে দলকে ঠিকমতো পরিকল্পনা ও চলার জন্য পরামর্শ দেবে। কারণ, আন্দোলন করে উঠে এলেই অভিজ্ঞতা হয়। সেই অভিজ্ঞতার নিরিখে নতুন প্রজন্মকে দিকনির্ণয় করে দিলে তারা আবার নতুন আন্দোলনে নামতে পারে। তাই ওল্ড ইজ় গোল্ড।’’
এ কথা রাজ্য রাজনীতিতে সুবিদিত যে, শাসক তৃণমূলের অন্দরে ফিরহাদ-সহ তৃণমূলের ‘আদি’ নেতারা পুরনোপন্থী। আর তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ‘নতুন’ প্রজন্মের নেতা। মাঝেমধ্যেই তৃণমূলে ‘পুরনো বনাম নতুন’ দ্বন্দ্বের কথা শোনা যায়। সেই লড়াইয়ে ফিরহাদ এবং অভিষেক দুই আলাদা শিবিরের নেতা। লোকসভা নির্বাচনের কয়েক মাস আগে এই দ্বন্দ্ব চরমে উঠেছিল। তবে দুই নেতাই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তাঁদের নেত্রী হিসাবে মেনে লোকসভা ভোটে লড়াই করেছেন। ফিরহাদ স্বয়ং যে মুখ্যমন্ত্রীর উপরেই ‘আস্থাশীল’, তা তিনি নিজের ‘ওল্ড ইজ় গোল্ড’ মন্তব্যের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করেছেন। ফিরহাদ বলেন, ‘‘এই সাফল্য নতুন ও পুরনোদের মিশিয়ে। যদিও এটা আমার ব্যক্তিগত মত। তবে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, এটা তৃণমূল পরিবারের জয়। নিশ্চিত ভাবে আমরা সকলেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আছি।’’ ফিরহাদ আরও বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর রাজ্যের মানুষ আস্থাশীল। আর অভিষেক যে ভাবে রাজ্যের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে দৌড়ে গিয়ে পরিশ্রম করেছে, সে কোথাও বলতে হবে। এ ভাবেই সাফল্য এসেছে। আমরা সকলেই তাদের (নতুনদের) সঙ্গে আছি। কিন্তু সব কিছুর মূলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’’ অভিষেকের নেতৃত্ব প্রসঙ্গে ফিরহাদ বলেন, ‘‘অভিষেক প্রচুর দৌড়েছে। নতুন নতুন স্ট্র্যাটেজি (কৌশল) তৈরি করেছে। বিভিন্ন সমীক্ষা সংস্থাকে দিয়ে নির্বাচনের রণকৌশল সাজিয়েছে। তবে এই সাফল্য সকলের। মূল জায়গায় রয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’’
প্রসঙ্গত, শনিবারেই মেয়র জানিয়ে দেন, ২০ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর বিজয় উপাধ্যায়ের ইস্তফা খারিজ করে দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার মেয়র ও কলকাতা পুরসভার চেয়ারপার্সন মালা রায়ের কাছে নিজের ইস্তফাপত্র পাঠিয়েছিলেন বিজয়। তার কারণ প্রসঙ্গে তিনি জানিয়েছিলেন, লোকসভা নির্বাচনে তাঁর ওয়ার্ড থেকে তৃণমূল প্রার্থী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় কম ভোটের ব্যবধান পেয়েছেন। তাই তিনি ইস্তফা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।