Bratya Basu

রাজ্যের উপাচার্য নিয়োগ সমস্যার আপাতত জট খুলল, তিন মাসের মেয়াদ বৃদ্ধি করে সমস্যার সমাধান

সোমবার সন্ধ্যায় রাজ্যপালের সঙ্গে দু’ঘণ্টার বৈঠক হয় শিক্ষামন্ত্রীর। মঙ্গলবার সকালে অন্য এক বৈঠকে রাজ্যপাল ও শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যেরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৫:২৮
Share:

রাজভবনের সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস এবং শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। নিজস্ব ছবি।

অবশেষে রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপাচার্য নিয়োগ সংক্রান্ত সমস্যার জট খুলল। মঙ্গলবার দুপুরে রাজভবনে বৈঠক শেষে যৌথ সাংবাদিক সম্মেলন করে এ কথা জানান রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস এবং রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। এই নিয়োগ জটিলতা কাটানো হল ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্যদের কার্যকালের মেয়াদ তিন মাস বৃদ্ধি করিয়ে। এই সময়ের মধ্যে সার্চ কমিটি গঠন করে নতুন নিয়োগের প্রক্রিয়াও চালু করা হবে।

Advertisement

সোমবার সন্ধ্যায় রাজ্যপালের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রীর এই সংক্রান্ত বিষয়ে রাজভবনে একটি বৈঠক হয়। মঙ্গলবার সকালে ফের বৈঠকে বসেন দু’জন। তাঁদের সঙ্গে ওই বৈঠকে যোগ দেন রাজ্যের ছয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য— কাজি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধন চক্রবর্তী, সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুরাধা মুখোপাধ্যায়, বারাসত রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মহুয়া দাস, সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের দীপক কর, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের নিমাই সাহা এবং কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের মানস সান্যাল। মঙ্গলবার বৈঠকের মাঝেই এই ছয় উপাচার্য পদত্যাগপত্র জমা দেন আচার্য সিভি আনন্দ বোসের কাছে। রাজ্যপাল তাঁদের সেই পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেন। এর পর ওই ছয় জনকেই তিন মাসের মেয়াদবৃদ্ধির কথা জানিয়ে তিনি চিঠি দেন। সমস্যা রয়েছে, অথচ মঙ্গলবার রাজভবনে উপস্থিত ছিলেন না, এমন উপাচার্যদের প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, বুধবার তাঁরা রাজভবনে এসে নিজেদের ইস্তফাপত্র জমা দেবেন। একই সঙ্গে নিয়ে যাবেন মেয়াদবৃদ্ধির চিঠি। বৈঠকে ছিলেন নেতাজি মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রঞ্জন চক্রবর্তী। তবে এখনও তাঁর মেয়াদ শেষ হয়নি। মার্চে শেষ হবে। তাই তিনি কোনও পদত্যাগপত্র জমা দেননি।

নতুন উপাচার্য নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সার্চ কমিটি গঠন করার বিষয়েও যে রাজ্যপাল সবুজ সঙ্কেত দিয়েছেন, সে কথাও মঙ্গলবার জানিয়েছেন ব্রাত্য। উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে মঙ্গলবারের বৈঠকের মাধ্যমে জট খুলে যাওয়া প্রসঙ্গে ব্রাত্য বলেন, ‘‘নবান্ন, রাজভবন ও বিকাশ ভবন একযোগে কাজ করবে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মতোই আমি রাজভবনে এসে রাজ্যপালের সঙ্গে বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করি। তার পরেই এই সমস্যার সমাধান হয়েছে।’’

Advertisement

রাজ্যপাল অবশ্য সাংবাদিক বৈঠকে অল্প কথায় জবাব দিয়ে নিজের অবস্থান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘শিক্ষার ক্ষেত্রে কোনও দ্বন্দ্ব নয়। বাংলা নিজের শিক্ষা, সংস্কৃতির জন্য বিখ্যাত। আমাদের সকলকে সেই জায়গা ধরে রাখতে হবে। সমন্বয় করে যাতে শিক্ষার অগ্রগতি ধরে রাখা যায়, সেই চেষ্টা করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যে আত্মনির্ভর ভারতের কথা বলেন, সেই পথে অগ্রগতি আনতে গেলে শিক্ষায় উন্নয়ন জরুরি।’’

ইউজিসির নিয়ম অনুযায়ী রাজ্যের রাজ্যপালই সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য। তাঁর অধীনস্থ যে কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদেই নিয়োগের জন্য রাজ্যপালের অনুমতি প্রয়োজন। কিন্তু রাজ্যপালের পদে থাকাকালীন জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের টানাপড়েনের মধ্যে যখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায়কে পুনর্নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য, তখন সেই নিয়ম মানা হয়নি বলে অভিযোগ। পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন রাজ্যপালের কাছে এ ব্যাপারে প্রস্তাব গেলে তিনি রাজ্য প্রশাসনের কাছে কিছু ব্যাখ্যা চেয়েছিলেন। কিন্তু রাজ্য তার জবাব না-দিয়েই পর দিন থেকে সোনালিকে চার বছরের জন্য পুনর্নিয়োগ করে। শিক্ষা দফতর সূত্রে খবর, এ ভাবে আরও উপাচার্যের নিয়োগ হয়েছিল। কারণ, উপাচার্যদের নিয়োগ নিয়ে রাজ্যপাল তথা আচার্যের সঙ্গে সংঘাতের পরেই রাজ্য সরকার নতুন বিল এনেছিল। তাতে বলা হয়েছিল, পদাধিকারবলে মুখ্যমন্ত্রীই রাজ্যের অধীন সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘আচার্য’ হবেন। সেই বিল বিধানসভায় পাশ হয়ে গেলেও তাতে তৎকালীন রাজ্যপালের সম্মতি মেলেনি। কিন্তু এই দ্বন্দ্বের মধ্যেই ধনখড় উপরাষ্ট্রপতি হয়ে চলে যান। সোনালিকে যদিও ওই পদ থেকে সরে যেতে হয় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে। বাকি ২৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমস্যা জিইয়ে থাকে। এ বার সেই সমস্যারই জট খোলার সূত্রপাত হল মঙ্গলবার রাজভবনে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement