রাজভবনে শিক্ষা দফতরকে নিয়ে বৈঠক রাজ্যপালের। ফাইল চিত্র।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের ওপর হামলার ঘটনায় রাজভবন থেকে প্রকাশিত রাজ্যপালের বিবৃতির পর, তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ শাসকদল তৃণমূল। সেই সংঘাতের আবহেই মঙ্গলবার শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু-সহ রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপাচার্যদের নিয়ে বৈঠকে বসলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। এই বৈঠকে যোগ দিয়েছেন শিক্ষাসচিব মণীশ জৈন। যদিও, বিকাশ ভবনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, অনেক আগে থেকেই রাজ্যপালের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী-সহ উপাচার্যদের এই বৈঠক নির্ধারিত ছিল। নির্দিষ্ট সূচি মেনেই এই বৈঠক হচ্ছে।
কোচবিহারের সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথের উপরে হামলার ঘটনায় রবিবারই কড়া বিবৃতি দিয়েছেন আনন্দ। নবান্নের থেকে রিপোর্টও তলব করেছেন। তার পর থেকেই ধারাবাহিক ভাবে তাঁর ওপর বাক্যবাণ চালিয়েছেন তৃণমূলের নেতারা। কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম যেমন রাজ্যপালকে তাঁর সীমারেখা স্মরণ করিয়েছেন। তেমনই মদন মিত্র আবার চাঁচাছোলা ভাষায় আক্রমণ করেছেন আনন্দ বোসকে। সোমবার সকালে প্রকাশিত তৃণমূলের মুখপত্রে ‘রাজ্যপালকে বিজেপির ক্যাডার’ বলা হয়েছে। তার পরেই মঙ্গলবার শিক্ষা দফতরের সঙ্গে রাজ্যপালের রাজভবনের বৈঠক অন্য মাত্রা পেয়েছে। গত বছর বাদল অধিবেশনে বিভিন্ন সরকার অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজ্যপালকে সরিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে আচার্য পদে বসানোর বিল পাশ করেছে রাজ্য সরকার। যদিও, তৎকালীন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে রাজ্য সরকারের সম্পর্ক ছিল অহি-নকুল। বিধানসভায় এই সংক্রান্ত বিল পাশ হয়ে গেলেও, রাজভবনে তা আটকে রয়েছে, বিগত কয়েক মাস। ধনখড় রাজ্যপালের পদ ছেড়ে গিয়ে দেশের উপরাষ্ট্রপতি হয়েছেন। তার পর অস্থায়ী রাজ্যপাল হিসাবে কয়েক মাস দায়িত্ব সামলেছেন লা গণেশন। সেই সময়তেও আচার্য সংক্রান্ত বিল ছাড়া হয়নি রাজভবন থেকে। আবার কয়েক সপ্তাহ আগে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে আনন্দ বোস জানিয়েছেন, রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলি যে নিয়মে চলছিল, সেই নিয়মই বহাল থাকবে। তাই মুখ্যমন্ত্রীকে আচার্য করার বিল যে রাজভবনেই আটকে থাকবে তা-ও ইতিমধ্যে স্পষ্ট করে দিয়েছেন আনন্দ বোস।
ধনখড় রাজ্যপাল থাকার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনা নিয়েও সংঘাত হয়েছে শিক্ষা দফতরের সঙ্গে। কিন্তু আনন্দ বোসের সঙ্গে এখনও তেমন সরাসরি সংঘাত হয়নি। তবে প্রশাসনিক ভাবে রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে গত দুটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্যপাল। তাই মনে করা হচ্ছে, সংঘাত আগামী দিনে আরও তীব্র থেকে তীব্রতর হতে পারে। কিন্তু তেমন ইঙ্গিতের মধ্যেই রাজভবনে রাজ্যপালের সঙ্গে শিক্ষা দফতরের বৈঠক রাজ্য রাজনীতিতে অন্য মাত্রা পেয়েছে।