অনুব্রত মণ্ডল। — নিজস্ব চিত্র।
গরুপাচার কাণ্ডে আপাতত সিবিআই হেফাজতে রয়েছেন তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। কিন্তু এক সময় তাঁকে যে কায়দায় হুমকি দিতে শোনা যেত সেই ‘ঐতিহ্য’ সমানে চলছে বীরভূমে। এ বার দলীয় কর্মসূচি থেকে বিরোধীদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠল বীরভূমের ইলামবাজারের তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক দুলাল রায়ের বিরুদ্ধে। বিরোধীদের পিঠে ‘চড়াম চড়াম করে ঢাক বাজানো’র হুমকি দিয়েছেন তিনি। তাঁর ওই মন্তব্য প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই শুরু হয়েছে বিতর্ক।
রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগ তুলে বিজেপির বিরুদ্ধে শুক্রবার পথে নেমেছিল তৃণমূলের ছাত্র-যুব সংগঠন। কলকাতা-সহ রাজ্যের সমস্ত ব্লকে চলে প্রতিবাদ। তেমনই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছিল ইলামবাজারেও। সেখানে দুলাল বিরোধীদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘আজকে পরিষ্কার বলে দিচ্ছি, যদি ইলামবাজারের বুকে কেউ ‘কুচুর-কুচুর’ করে, যদি কেউ গুড়-বাতাসা বিলি করতে যায় তা হলে তাদের পিঠের চামড়ায় চড়াম চড়াম করে ঢাক বাজবে। এটা আমরা আপনাদের সামনে কথা দিয়ে রাখছি। হাজার হাজার কেষ্ট মণ্ডল আছে, হাজার হাজার চন্দ্রনাথ সিন্হা আছে, হাজার হাজার ব্লক সভাপতি আছে, হাজার হাজার তৃণমূল কর্মী বীরভূম জেলায় চাঙ্গা আছে। তারা কোনও ক্ষতি হতে দেবে না।’’
দুলালের এই বেফাঁস মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক শুরু হয়েছে। ঘটনাচক্রে, অনুব্রতর গ্রেফতারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁর সুরেই ভাষণ দিতে শোনা যায় তৃণমূলের বীরভূম জেলার শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি ত্রিদিব ভট্টাচার্যকে। দলের নামে বিরোধীরা খারাপ মন্তব্য করলে তাঁদের মেরে ‘মাজা ভেঙে’ দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তিনি। ত্রিদিব বলেন, ‘‘দেখছিলাম, কয়েকটা নেংটি ইঁদুর টিভিতে কত কিছু বলছে! মনে রাখবেন তৃণমূলের কর্মীরা এখনও মরে যায়নি। যদি রাস্তাঘাটে কোনও বিরোধী দলের কেউ তৃণমূলের নামে অশালীন মন্তব্য করেন, তা হলে তৃণমূলের কর্মীরা পিটিয়ে মাজা ভেঙে দেবে।’’
অনুব্রতর গ্রেফতারের কিছু ক্ষণের মধ্যে হুমকির সুর শোনা গিয়েছে পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রাম দুই নম্বর ব্লকের কার্যকরী সভাপতি অরূপ মিদ্যার গলাতেও। শুক্রবার দলীয় কর্মসূচি থেকে অরূপ বিজেপি নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি দেন, ‘‘আমাদের নেতাকে মিথ্যা কেসে ফাঁসানো হয়েছে। গতকাল রাত পর্যন্ত আউশগ্রামের ভালকি অঞ্চলে বিজেপি বোমা ফাটিয়েছে। আমি পুলিশকেও জানিয়েছি। দলের উচ্চ নেতৃত্ব আমাকে শান্ত থাকতে বলেছে। আমি আমার ছেলেদের বললে, যে কটা ওখানে বিজেপি করছে তাদের খুঁজে পাওয়া যাবে না। বিজেপি মনে করেছে, অনুব্রত মণ্ডলকে গ্রেফতার করে আউশগ্রাম, মঙ্গলকোট, কেতুগ্রামে সংগঠন শেষ করে দেবে। এত সোজা? অনুব্রত মণ্ডল যে বীজ বপন করে গেছে তাতে এখন আমাদের নেতারা সকলেই অনুব্রত মণ্ডল তৈরি হয়ে গিয়েছে।’’
ত্রিদিব, অরূপের পথে হেঁটে এ বার কটু মন্তব্য করে বিতর্কে জড়ালেন দুলাল।
এ নিয়ে বিজেপির বীরভূম জেলার সভাপতি ধ্রুব সাহা বলেন, ‘‘তৃণমূল নেতারা আগামিদিনে বুঝতে পারবেন কোথায় চড়াম চড়াম পড়বে। মানুষ সব বুঝতে পারছেন। তৃণমূলের এটাই সংস্কৃতি। এমন কথা বলে এক জনের পরিস্থিতি আজ সারা দেশের মানুষ দেখছে।’’
প্রায় একই সুরে সিপিএমের বীরভূম জেলার সম্পাদক গৌতম ঘোষ বলেন, ‘‘এটাই তৃণমূল কংগ্রেসের সংস্কৃতি। এখনও সেটা বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন কেউ কেউ। সাধারণ মানুষ এর উত্তর দেবেন।’’