Jhalda Municipality

শীলাকে সরিয়ে তৃণমূলের সুদীপ! ঝালদা নিয়ে কোর্টে যাচ্ছেন অধীর, কুণাল বলছেন ‘প্রশাসনিক’ বিষয়

কংগ্রেসের অভিযোগ, তৃণমূল এসডিওকে দিয়ে কাউন্সিলর পদ খারিজ করিয়েছে। তার বিরুদ্ধে তারা আদালতেও যাবেন। পাল্টা বিষয়টিকে প্রশাসনিক বলে আখ্যা দিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি তৃণমূল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২৩ ১৭:৪৬
Share:

ঝালদা নিয়ে আবার আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার পথে কংগ্রেস। — ফাইল ছবি।

আদালতের নির্দেশেই তিনি পুরপ্রধানের দায়িত্ব নিয়েছিলেন মঙ্গলবার। কিন্তু মহকুমাশাসকের নির্দেশে সেই শীলা চট্টোপাধ্যায়ের কাউন্সিলর পদ খারিজ হয়েছে। তাঁর জায়গায় আপাতত পুর-ভার সামলাবেন তৃণমূল কাউন্সিলর সুদীপ কর্মকার। এই নিয়েই নতুন করে ডামাডোল ঝালদা-সহ গোটা পুরুলিয়ায়। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে তাঁরা আদালতের দ্বারস্থ হবেন। বিষয়টিকে ‘প্রশাসনিক’ আখ্যা দিয়ে মন্তব্য করতে চাননি তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ।

Advertisement

বহু টানাপড়েনের পর গত মঙ্গলবার পুরপ্রধান হিসাবে শপথ নেন ঝালদা পুরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শীলা। ঝালদায় কাজ শুরু করে কংগ্রেসের পুরবোর্ড। কিন্তু তার পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রশাসনের নির্দেশে খারিজ হয়ে গেল তাঁর কাউন্সিলর পদই। স্বভাবতই, তিনি পুরপ্রধানও থাকতে পারবেন না। শীলার জায়গায় ঝালদা পুরসভার তৃণমূল কাউন্সিলর সুদীপকে পুরপ্রধানের ভার সঁপেছে রাজ্য সরকার। যা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক দানা বেঁধেছে।

বুধবার সরকারি নির্দেশ জারি হলেও বৃহস্পতিবার তা প্রকাশ্যে আসে। তার পরেই জরুরি বৈঠকে বসে কংগ্রেস। শীলাকে সরিয়ে তৃণমূল কাউন্সিলর সুদীপকে পুরসভার দায়িত্বে বসানোর পিছনে ষড়যন্ত্র দেখছে কংগ্রেস। এই ‘ষড়যন্ত্রে’র শেষ দেখতে আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘একটা ১২ সদস্যের মিউনিসিপ্যালিটি। আদালতের নির্দেশে যার ভার আমরা পেয়েছিলাম। তাতেও তৃণমূল এসডিওকে দিয়ে এটা করাল। এমন স্বৈরতান্ত্রিক সরকার আর কোথায় পাওয়া যাবে! এই সরকার কী করে গণতন্ত্রের কথা বলে আমরা জানি না। এর বিরুদ্ধে আদালতে যাব।’’

Advertisement

বিষয়টিকে পাল্টা ‘প্রশাসনিক’! বলে আখ্যা দিয়েছে তৃণমূল। দলের রাজ্য সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘এটা সম্পূর্ণ প্রশাসনিক বিষয়। এটা নিয়ে রাজনীতির লোকের কথা বলা ঠিক না। যা বলার প্রশাসন বলবে।’’ যদিও এই ঘটনা নিয়ে আগে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া। তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমরা নির্দিষ্ট পুর আইন মেনে শীলার কাউন্সিলর পদ খারিজের দাবিতে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছিলাম। আমাদের দাবির প্রেক্ষিতে তথ্যপ্রমাণও জমা দিয়েছিলাম প্রশাসনের কাছে। তার ভিত্তিতেই ওঁর সদস্যপদ খারিজ হয়েছে।’’

গত বছর ১৩ মার্চ খুন হন কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দু। তার পর থেকেই ডামাডোল শুরু ঝালদায়। আদালতের নির্দেশে বর্তমানে যে খুনের তদন্ত করছে সিবিআই। ১২ আসনের ঝালদা পুরসভায় ৫ জন করে কাউন্সিলর তৃণমূল ও কংগ্রেসের। ২ জন কাউন্সিলর নির্দল হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরে তাঁদের মধ্যে একজন যোগ দেন কংগ্রেসে। গত ২১ নভেম্বর আস্থাভোট হয় ঝালদা পুরসভায়। সেখানে নির্দলের সমর্থন নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করে কংগ্রেস। অপসারিত হন তৃণমূলের পুরপ্রধান সুরেশ আগরওয়াল। জবা মাছোয়ার নামে এক কাউন্সিলরকে পুরপ্রধান হিসাবে তুলে ধরে তৃণমূল। সেই মামলা আবার পৌঁছয় আদালতে।

আদালতে জানায়, শীলা বা জবা নন, আগামী এক মাস ঝালদা পুরসভা সামলাবেন পুরুলিয়ার জেলাশাসকই। সেই সময় সমস্যার কথা জানিয়ে রাজ্যপালকে চিঠি দিয়েছিলেন প্রদেশ সভাপতি অধীর। পাশাপাশি প্রশাসক নিয়োগের রাজ্যের উদ্যোগও আটকে গিয়েছিল আদালতে। সম্প্রতি আদালতে জমা পড়ে জেলাশাসকের পাঠানো রিপোর্ট। সেই রিপোর্ট দেখার পর কলকাতা হাই কোর্ট জানিয়ে দেয়, পুরপ্রধান পদে শপথ নিতে পারবেন শীলা। মঙ্গলবারই তিনি শপথ নেন। তার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই তাঁর কাউন্সিলর পদ খারিজ হয়ে গেল। অভিযোগ, নির্দল হিসাবে ভোটে জিতে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন শীলা। তার পর তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে পুরপ্রধান হন তিনি। তৃণমূলের দাবি, যা দলত্যাগ বিরোধী আইনের পরিপন্থী।

এই কারণ দেখিয়েই প্রশাসনকে চিঠি দেয় তৃণমূল। তার পরে বুধবার শীলার কাউন্সিলর পদ খারিজ করার নির্দেশ জারি করেন মহকুমাশাসক। পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর জানিয়ে দেয় শীলার জায়গায় পুরসভা দেখভাল করবেন তৃণমূল কাউন্সিলর সুদীপ। কিন্তু পরিস্থিতি যা তাতে ঝালদা পুরসভার আবার আদালতের দুয়ারে পৌঁছনো এখন সময়ের অপেক্ষা বলে মনে করা হচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement